কেন ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ প্রযোজক জনি ডেপকেই তার ছবিতে চান?
হলিউড চলচ্চিত্র জগতে অন্যতম বিখ্যাত একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি হলো 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২০০৩ সালে 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: দ্য কার্স অব ব্ল্যাক পার্ল' দিয়ে শুরু, এরপরে একে একে আরও চারটি সিনেমা তৈরি হয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির। আর প্রতিটি ছবিতেই প্রধান চরিত্র 'ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো'র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হলিউড অভিনেতা জনি ডেপ।
জলদস্যু সেজে কখনো যুদ্ধংদেহী, আবার কখনো হাস্যকর কান্ডকারখানা করে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন জনি ডেপ। তাই 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' সিনেমা মানেই ডেপের বিকল্প কিছু ভাবতে পারেন না ভক্তরা। সর্বশেষ ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: ডেড ম্যান টেল নো টেলস' চলচ্চিত্রেও নিজের অভিনয় জাদুতে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন ডেপ।
এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে জনি ডেপের প্রাক্তন স্ত্রী, হলিউড অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের মামলাকে কেন্দ্র করে। ২০১৮ সালে ডেপের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন অ্যাম্বার হার্ড। এ উপসম্পাদকীয় প্রকাশের পর 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' অভিনেতাকে হলিউডের ক্যান্সেল-কালচারের শিকার হতে হয়। তাকে হলিউডের বহু প্রযোজক-পরিচালক বর্জন করেন এবং হাতে থাকা অনেক সিনেমার প্রস্তাব ছুটে যায়।
আর এসব সিনেমার মধ্যে একটি ছিল পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজির ষষ্ঠ সিনেমা। অ্যাম্বার হার্ডের অভিযোগকে ঘিরে ডিজনি জনি ডেপকে এ ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
পরে অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে পাল্টা ৫০ মিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করেন। গত বছরের এপ্রিলে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় শুনানি শেষে এ মামলায় কার্যত জয়লাভ করেন ডেপ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অ্যাম্বার হার্ড।
এরপর থেকেই সব জায়গায় জনি ডেপের ধন্য ধন্য পড়ে যায়। মামলায় জয়লাভের পর থেকে জনি ডেপের ক্যারিয়ার নতুন মাত্রা নিয়েছে। যারা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তারা আবার নতুন করে ডেপকে কাজে নিতে চাইছেন। আলোচিত এ মামলার পর থেকে ডেপ বেশকিছু সিনেমায় চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন। তাই এই মুহূর্তে 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' এর প্রযোজক জেরি ব্রুকহেইমারের পস্তানো খুব অস্বাভাবিক নয়!
মামলার রায় আসার কিছুদিন পরেই ডেপের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ফেরাতে চেয়েছিল ডিজনি। কিন্তু জনি ডেপ সোজা 'না' বলে দিয়েছেন। এমনকি মামলার শুনানির সময়ই অভিনেতা বলেছিলেন, ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়েও তিনি ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর ভূমিকায় অভিনয় করবেন না!
এখনও পর্যন্ত নিজের কথায় অনড় রয়েছেন ডেপ। আর সে কারণেই থেমে আছে ফ্র্যাঞ্চাইজির ষষ্ঠ ছবির কাজ! এদিকে দর্শকরাও ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো রূপে অন্য কাউকে দেখতে নারাজ। তাই রীতিমতো বিপদেই পরেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রযোজক।
তবে প্রযোজক ব্রুকহেইমার যে ডেপকে পছন্দ করেন তা তার কথাতেই প্রমাণিত। গণমাধ্যমকে ব্রুকহেইমার বলেন, "তিনি (ডেপ) যে কাজই করেন, সেটাই খুব চমৎকারভাবে করেন; আর অভিনেতারা এ বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে আসেনই। তিনি ব্যক্তি হিসেবে ভালো এবং যত্নবান। তিনি এমন একজন মানুষ যার ওপর আপনি নির্ভর করতে পারবেন। আমার মনে হয় জনি খুবই ভালো একজন বন্ধু এবং শিল্পী; কিন্তু আবারও বলছি, জীবনে আপনাকে এমন অনেক পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যেতে হয় যা আপনি কখনোই চাননি। কিন্তু তবুও জনি ডেপকে একজন প্রতিভাবান শিল্পী বলতেই হবে।"
এবারই প্রথমবারের মতো নিজের কথায় ডেপের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করলেন ব্রুকহেইমার। এর কারণ হয়তো, ডেপকে ছাড়া 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের ৫টি সিনেমা থেকে ষষ্ঠ সিনেমাটি বেশ আলাদা হবে। এছাড়াও, অরল্যান্ডো ব্লুমের মতো অভিনেতাকেও এবার নাও পেতে পারে তারা। তাই ডেপকে ছাড়া এ ফ্র্যাঞ্চাইজি এগিয়ে নেওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে।
তবে এবার প্রযোজক ব্রুকহেইমারের খোলামেলা সমর্থন ও প্রশংসায় ডেপের মন গলে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ হলিউডে তার অবস্থান ও গুরুত্বকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার উপায় নেই।
সূত্র: স্ক্রিন র্যান্ট