‘ভুল তথ্য’ দেখানো হয়েছে! রানির সিনেমা নিয়ে আপত্তি ভারতে নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের
শুক্রবার দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছে রানি মুখার্জি অভিনীত 'মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে'। এ সিনেমাতে 'ভুল তথ্য' দেখানো হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যান্স জেকব ফ্রাইডেনলেন্ড।
এক দশক আগের সত্য ঘটনার উপর নির্মিত এ সিনেমায় নরওয়ে সরকারের সাথে এক ভারতীয় দম্পতির আইনি লড়াইয়ের গল্প উঠে এসেছে। সিনেমায় দেখা যায়, স্বামী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে নরওয়েতে থাকেন দেবিকা চট্টোপাধ্যায়। আপাতভাবে সুখী এই পরিবারের উপর একদিন হঠাৎই ঘনিয়ে আসে আইনি জটিলতা।
'সন্তানের দেখাশোনায় গাফিলতি'র অভিযোগে নরওয়ে সরকার দেবিকার দুই সন্তানকে সরকারি হেফাজতে নিয়ে নেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় এক মায়ের সন্তানদের ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ।
মুক্তির আগের দিন সিনেমার স্পেশাল স্ক্রিনিং-এর আয়োজন করা হয়েছিল নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের জন্য। সিনেমাটি দেখে এটি মুক্তির দিনই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে 'নরওয়ে কেয়ার্স' শিরোনামে একটি মতামত প্রকাশ করেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত।
তার ভাষ্যে, "এই সিনেমা একেবার ভুল তথ্যে ভরা। একজন নরওয়েজিয়ান হিসেবে আমার এটি পরিষ্কার করে দেওয়া কর্তব্য যে, সিনেমায় তথ্যগত ভুল রয়েছে। এখানে দুই দেশের যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য দেখানো হয়েছে, সে়টাও সম্পূর্ণ সত্য নয়।"
এক দশক আগের ওই ঘটনায় বাস্তবের সাগরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি তার সন্তানদের ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারছেন না। সিনেমাতেও দেখানো হয়, নিজের সন্তানদের হাতে করে খাওয়ানো, একসঙ্গে শোয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছে নরওয়ের সরকার। তাই শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেই দেশের সরকার মায়ের কোলছাড়া করে দুই সন্তানকে।
এসব তথ্যের বিরোধিতা করে নরওয়েজিয়ান দূত বলেন, "আমি এই তথ্য মানতে পারছি না। মা তার সন্তানকে হাত দিয়ে খাওয়াবে কিংবা এক বিছানায় শোবে বলে সন্তানকে মায়ের কোলছাড়া করবে রাষ্ট্র, এটা কোনো দেশেই হয় না। আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে আমার ভারতীয় বন্ধুরা ভাববে, নরওয়ের বাসিন্দরা কঠোর, তাদের মন নেই। যদিও আসলে তা সত্য না।"
নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের এমন অভিযোগ ও আপত্তির পাল্টা জবাব দেন বাস্তবের সাগরিকা চট্টোপাধ্যায়।
'মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে' সিনেমার প্রযোজক নিখিল আদভানি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে সাগরিকার বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, "আমি নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের আপত্তি জানাচ্ছি। আমার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।"
সাগরিকা আরো বলেন, "এত বছর পরও নরওয়ে সরকার আমার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। তারা আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমার সম্মান নষ্ট করেছে। আমার সন্তানরা এখনও ওই ঘটনার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে ওই সময় ভারত সরকারই আমাকে অনেক সাহায্য করে।"
অসীমা ছিব্বার পরিচালিত এই ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রানি মুখোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য। দেবিকার চরিত্রে রানিকে দেখে এরমধ্যেই তার প্রশংসা করেছেন ভারতের অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।