৮ বছর পর বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি ছবি, ১২ মে মুক্তি পাচ্ছে ‘পাঠান’
বাংলাদেশে মুক্তির জন্য সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে ভারতের ব্লকবাস্টার সিনেমা 'পাঠান'। আগামী ১২ মে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে শাহরুখ খান অভিনীত সিনেমাটি। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
বাংলাদেশে শাহরুখকে নিয়ে উন্মাদনা ভারতের চেয়ে কম নয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে অভিনেতার কোটি কোটি ভক্ত। এবার দেশের হলে বসেই কিং খানের সিনেমা দেখার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে দর্শকের। গত ২৫শে জানুয়ারি ভারতসহ বিশ্বের একাধিক দেশে মুক্তি পেয়েছিল 'পাঠান'।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৫২ বছরে দেশে খুব বেশি হিন্দি সিনেমা মুক্তি পায়নি। এমনকি গত ৮ বছরে দেশে একটিও হিন্দি সিনেমা মুক্তি পায়নি। এবারও বেশ কয়েকবার তারিখ পেছানোর পর বাংলাদেশে 'পাঠান'- এর মুক্তি নিশ্চিত করেছেন সিনেমাটির আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিবিউশনের সহ-সভাপতি নেলসন ডি'সুজা।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে নেলসন জানান, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে এসেছি, বাংলাদেশে শাহরুখ খানের অগণিত অনুরাগী রয়েছে। বাংলাদেশে মুক্তির জন্য যশরাজ ফিল্মসের এই স্পাই ইউনিভার্স সিনেমাটি একদম যথাযথ। এ সিনেমা ভারতীয় সংস্কৃতি ও সিনেমার যোগ্য প্রতিনিধিত্ব করবে।"
শুরুতে জানা গিয়েছিল গতকাল (৫ মে) মুক্তি পাবে 'পাঠান'। কিন্তু সেন্সর সার্টিফিকেট হাতে আসতে দেরি হওয়ায় এবং ঈদে মুক্তি পাওয়া দেশীয় সিনেমাগুলোর কথা ভেবে এক সপ্তাহ পেছানো হয়েছে সিনেমাটির মুক্তি।
বাংলাদেশে শাহরুখের সিনেমাটির আমদানি করছে অনন্য মামুনের অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের ৩২টি সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্সে 'পাঠান' মুক্তি পাবে।
ভ্যারাইটি ম্যাগাজিন সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৫ সালে সাময়িকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশে প্রথম বলিউড সিনেমা হিসেবে মুক্তি পেয়েছিল বলিউডের ভাইজান খ্যাত সালমান খানের সিনেমা 'ওয়ান্টেড'।
তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে বলিউড সিনেমা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন সৃষ্টি হয়। ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান মূলত এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনকারী শিল্পীদের মতামত ছিল, বলিউড সিনেমা প্রদর্শন করা হলে বাংলাদেশের সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুখ থুবড়ে পরবে।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রতিবাদকারীরা বলিউড সিনেমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন এবং প্রেক্ষাগৃহের বাইরে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের বলিউড সিনেমা না দেখতে অনুরোধ করতে থাকেন। এ ঘটনায় দেশের বলিউড সিনেমার প্রদর্শকেরা পাল্টা প্রতিবাদ করেন এবং শাকিব খানের সিনেমা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন।
সেই সময় শুধু 'ওয়ান্টেড' নয়, বরং আমির খানের সিনেমা 'থ্রি ইডিয়টস' এবং শাহরুখ খানের সিনেমা 'মাই নেইম ইজ খান' বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছিল। তবে বাংলাদেশের বিনোদন জগতের একটি বড় অংশের বাধার মুখে বলিউড সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বহাল করা হয়। যদিও বর্তমানে বলিউড সিনেমার পাইরেটেড কপি খুব সহজেই বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে এবং দেশের দর্শকেরা বলিউডের প্রায় সকল জনপ্রিয় সিনেমা দেখছে।
তবে কিং খানের 'পাঠান' সিনেমা মুক্তির পর যেন সকল সমীকরণ বদলে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমা সম্পর্কিত ১৯টি সংগঠন বছরে ১০টি করে বলিউড সিনেমা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের ব্যাপারে একমত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ডের কর্মকর্তারা পাঠান সিনেমাটি দেখেন। সেন্সর বোর্ডের সদস্যা রেজিনা বলেন, "আমাদের সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের পক্ষ থেকে আর কোনও আপত্তি নেই। সিনেমাটি আমাদের ভাল লেগেছে। সব কিছুই ঠিক মনে হয়েছে।"
সাফটা চুক্তির আওতায় গত ১১ এপ্রিল পাঁচটি শর্ত মেনে দুই বছরের জন্য ১৮টি হিন্দি সিনেমা আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তারই প্রেক্ষিতেই প্রথম হিন্দি সিনেমা হিসাবে বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে শাহরুখ-দীপিকা-জন অভিনীত 'পাঠান'।
পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দের সিনেমাটি ইতোমধ্যেই গ্লোবাল বক্স অফিসে ১০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাজন প্রাইম ভিডিওতেও মুক্তি পেয়েছে এই স্পাই থ্রিলার। তার পরেও বাংলাদেশে কেমন ব্যবসা করবে সিনেমাটি, সেটাই দেখার বিষয়।