‘এই ছবিটা আইরাকে উৎসর্গ করা’
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সমগ্রের 'জঙ্গলের মধ্যে হোটেল' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সৃজিত মুখার্জীর 'কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন' সিনেমা। আজ শুক্রবার সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি।
মুক্তির আগে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে টেলিফোনে আড্ডা দিয়েছেন পরিচালক সৃজিত। সেটিরই অংশবিশেষ টিবিএসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
করোনামুক্ত হয়েই আবার কাজে ফেরা। ব্যস্ততার ফাঁকে সৃজিত মুখার্জী কেমন আছে?
সৃজিত: এখন ভালো আছি। দুটো ছবির পোস্ট প্রোডাকশন একসঙ্গে চলছে। কাজে থাকলে আমি ভালোই থাকি। এইটুকুই বলব।
লম্বা অপেক্ষার পর অবশেষে বড় পর্দায় কাকাবাবু আসছে, 'কাকাবাবুর প্রত্যার্বতন'-এ বাঙালি নতুন কী চমক পাবে?
সৃজিত: এটা ট্রিলজির তৃতীয় অংশ। মরুভূমি, পাহাড় হয়ে এখন আফ্রিকার জঙ্গলে এসে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এত বেশি জীবজন্তু নিয়ে বাংলায় অন্তত সিনেমা হয়নি। ভিএফএক্সের মাধ্যমে তৈরি নয়, আমি অরিজিন্যাল জীবজন্তুর কথা বলছি কিন্তু। যদি বাচ্চারা হলে যায় তবে তাদের খুব ভালো লাগবে। আমি জানি না, এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পরিবার সিনেমা হলে যাবেন কিনা, তবে যদি যায় ছোটরা খুব আনন্দ পাবে।
কতটা রোমহর্ষক ছিল জীবজন্তুর সঙ্গে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা?
সৃজিত: কেনিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্যুটিং হয়েছে। জিরাফ, জেব্রা, সাপ, হাতি থেকে গণ্ডার, সিংহ, চিতা- সব ধরণের জীবজন্তুই রয়েছে। শ্যুটিং করা তো খুবই বিপজ্জনক ছিল, কিছু জন্তু হয় যাদের প্রশিক্ষণ হয় না। যেমন গণ্ডার, হায়েনা। তাই আমাদের একদম বন্য জন্তু নিয়েই শ্যুটিং করতে হয়েছে। হাতি আর গণ্ডারের একটা সিকোয়েন্স আছে, বইতেও রয়েছে সেটা। ওই দৃশ্যে কাকাবাবু ও সন্তু হাতি আর গণ্ডারের মাঝে আটকা পড়েছে। একদিকে গণ্ডারের কোনও প্রশিক্ষক ছিল না, আর অন্যদিকে হাতি বেশ চার্জ করেছিল এবং ওরা বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ) আর আরিয়ানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। সেটা বেশ রোমহর্ষক ঘটনা, সাপ আর সিংহের সঙ্গে শ্যুটিংটাও খুব রোমহর্ষক।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর সৃজিত মুখার্জীর পার্টনারশিপ নিয়ে কী বলবেন?
সৃজিত: বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করা মানে বাড়ি ফিরে ডিমসেদ্ধ-আলুসেদ্ধ ভাত নিয়ে বসা। বুম্বাদা মানে চেনা কমফোর্টজোন গোছের, যেহেতু আমাদের বোঝাপড়াটা এতোটাই ভালো যে অনেক কিছু রয়েছে যেটা নতুন করে একে অপরকে বলতে হয় না। সেটা আমরা বুঝে যাই।
১২ বছর পর 'ফ্রাইডে রিলিজে'র আগে এখনও কী ভয় লাগে? নাকি সৃজিত এখন অনেক বেশি কনফিডেন্ট?
সৃজিত: ফ্রাইডে রিলিজের আগে ভয় তো লাগে না, তবে ছবি নিয়ে উত্তেজনাটা রয়েছে। নতুন ছবি মানেই তো ফের প্যাড-গ্লাভস পরে ব্যাট করতে যাওয়ার মতো। যেদিন ওই উত্তেজনাটা থাকবে না সেদিন আর ছবি বানাবো না।
টলিউড থেকে বলিউড, ফিল্ম থেকে ওয়েব সিরিজ- সবেতেই বিরাজমান সৃজিত মুখার্জী। এতো মাল্টিটাস্কিং করছেন কী করে?
সৃজিত: আমি বরাবরই ওয়ার্কোহলিক। আমি দিনে ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা কাজ করি। আমার একটা খুব স্ট্রং, ভালো টিম আছে। তাদের সবার কম্বিনেশনে এই কাজগুলো হচ্ছে। খিদেটা আছে এখনও। আমার মনে হয় ভালো কাজ নিয়ে এই খিদেটা জরুরি যে কোনও মানুষের পথ চলার জন্য। এটা যেদিন বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন কাজ আর করব না, ওইদিন থেকে আই উইল টেক ইট ইজি।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বাড়বাড়ন্ত কি আঞ্চলিকতার বিভেদ মুছে দিচ্ছে? বাংলা ছবির পরিসর কি আরও বাড়িয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম?
সৃজিত: একদম। এটা ওটিটি বিপ্লবের সবচেয়ে বড় দিক। আঞ্চলিকতার বিভেদ মুছেছে। সবচেয়ে বড় কথা মুম্বাই হয়ত বুঝতে পেরেছে, মুম্বাইয়ের বাইরে মূলত সাউথে বেশি ভালো কাজ হচ্ছে। সাবটাইটেল পড়ে ছবি দেখার অভ্যাস বেড়েছে। সাবটাইলেটের বাধা অতিক্রম করলে একটা বিশাল পৃথিবী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, সেই পৃথিবীটা ভারতের নিজের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ওটিটির সুবাদে এখন স্টার-এর সংজ্ঞাটাও বদলেছে। অনেক অভিনেতা যারা এতদিন নিজেদের প্রাপ্য সম্মান পাননি, সেটা ওটিটির সুবাদে তারা পাচ্ছেন, অনেক বেশি সমাদৃত হচ্ছেন। এটাই ওটিটি রেভল্যুশনের সবচেয়ে বড় দিক।
কাকাবাবুর নতুন অভিযান নিয়ে কী কিছু ভাবছেন? নাকি ট্রিলজিতেই শেষ?
সৃজিত: আপাতত একটা ট্রিলজি শেষ। এখন একটু জিরোব। সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ালাম। প্রথমে চলে গেলাম মিশর, সেখান থেকে আল্পস, তারপর কেনিয়ার মাসাইমারার জঙ্গলে। এবার একটু রেস্ট নেব, তারপর আবার শুরু করব।
আপনি শুরুতেই বললেন এই ছবিতে ছোটদের জন্য অনেক কিছু থাকছে, ট্রেইলার দেখে মেয়ে কী বলল? আইরাকে নিয়ে হলে যাবেন তো?
সৃজিত: অবশ্যই। ও তো ভীষণ এক্সাইটেড ট্রেলার দেখে। আসলে এই ছবিটা আইরাকেই উৎসর্গ করা। এবং আইরার মতো হাজার হাজার ছোট ছেলেমেয়ে যারা চাঁদের পাহাড় পড়ে এবং লায়ন কিং দেখে বড় হয়েছে এই ছবিটা তাদের জন্য। অবশ্যই ছবিটা ওকে দেখাতে নিয়ে যাব।