অন্যের গল্প চুরির দায়ে অভিযুক্ত অস্কারজয়ী পরিচালক আসগর ফরহাদি
অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে এবং স্রোতের অনুকূলে গা না ভাসিয়েই বিশ্বব্যাপী সিনেমাবোদ্ধাদের মন জয় করে নেওয়ার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণে ইরানি পরিচালকদের জুড়ি মেলা ভার। এদের মধ্যে যে মানুষটির হাত ধরে প্রথমবারের মতো অস্কার লাভ করে ইরান, তার নাম আসগর ফরহাদি। ইতোমধ্যেই দু দুটো অস্কার পুরস্কার নিজের ঝুলিতে পুরেছেন খ্যাতিমান এই পরিচালক। গেল বছর 'আ হিরো' চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্যও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। অস্কারের মনোনয়ন না পেলেও কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১-এর জুরি গ্র্যান্ড প্রাইজ ঠিকই আদায় করে নিয়েছে 'আ হিরো।'
কিন্তু বহুল আলোচিত এই চলচ্চিত্রের জন্যেই কিনা বিপদে পড়েছেন আসগর ফরহাদি! 'আ হিরো'র কাহিনী চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আর অভিযোগটি করেছেন নির্মাতারই এক সাবেক ছাত্রী। এই মুহূর্তে ফরহাদির বিরুদ্ধে মামলাটি ইরানি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
আসগর ফরহাদির বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন তার একসময়ের ছাত্রী আজাদেহ মাসিহজাদেহ। মাসিহজাদেহর দাবি, ফরহাদির ক্লাসে প্রদর্শনের জন্য তিনি একটি প্রামাণ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটির নাম ছিল 'অল উইনারস, অল লুজারস।' দ্য হলিউড রিপোর্টার সূত্রে জানা গেছে, মাসিহজাদেহ এবং যে ব্যক্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই গল্প, তারা দুজন মিলে মানহানির মামলা এনেছেন ফরহাদির বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালে তেহরানের কারনামেহ ইনস্টিটিউটে ফরহাদির একটি ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েছিলেন মাসিহজাদেহ। কোর্স চলাকালীন শিক্ষার্থীদের বাস্তব ঘটনানির্ভর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে দেওয়া হয়। তখনই মাসিহজাদে জনাব শোকরি নামক জনৈক ব্যক্তির জীবনের গল্প খুঁজে বের করেন। শোকরি জানিয়েছিলেন, ঋণের দায়মুক্ত হয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সোনাদানা ভর্তি ব্যাগ খুজে পেয়েছিলেন তিনি । নিজের সততাবশত সেই ব্যাগ দ্রুত আসল মালিককে ফিরিয়ে দেন তিনি। শোকরির জীবনের এ অভিজ্ঞতার সাথে 'আ হিরো'র চিত্রনাট্যের বেশ মিল রয়েছে।
মাসিহজাদের প্রদর্শিত বাস্তব গল্পটি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান আসগর ফরহাদি এবং মাসিহজাদের নিজের বন্ধুরাও।
তবে মামলা প্রমাণিত না হলে, মিথ্যা অভিযোগ আনার দায়ে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে মাসিহজাদেহকে। সাজা হিসেবে দেওয়া হবে ২ বছরের কারাদন্ড এবং ৭৪ চাবুকের বাড়ি। অন্যদিকে, ফরহাদি অপরাধী প্রমাণিত হলে 'আ হিরো' সিনেমা হলে প্রদর্শনের মাধ্যমে যত রকম আয় করেছেন তিনি, তা জব্দ করবে পুলিশ।
২০১৯ সালে মাসিহজাদেহ প্রথম পুলিশের কাছে যান এবং দাবি করেন, ফরহাদির কথায় তিনি লিখিতভাবে ওই গল্পের সত্ত্ব বিক্রি করেছেন নির্মাতার কাছে। কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে আফসোস করেছেন তিনি! মাসিহজাদেহ বলেন, "আসগর ফরহাদি ইরানি চলচ্চিত্রের একজন অন্যতম পথিকৃত। আমাকে চুক্তিপক্ষে স্বাক্ষর করাতে তিনি তখন সেই প্রভাব কাজে লাগিয়েছেন।"
ফরহাদির আইনজীবি, আ হিরো'র সহ-প্রযোজক, ফরাসি ড্রিস্ট্রিবিউটর সোফি বরোভস্কি বলেন, "আ হিরো'র গল্প বহু আগেই এসেছে। বার্টলফ ব্রেখট এর গ্যালিলিও নাটক থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই এসেছে 'আ হিরো'র মূল থিম, যেখানে আমাদের সমাজে নতুন নতুন হিরো তৈরির বিষয়টি আছে।"
তিনি আরও জানান, ২০২৯ সালে যখন ফরহাদি এই ধারণাটি পুনঃমূল্যায়ণ করেন, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে শোকরির গল্পের ফ্রি ইন্টারপ্রিটেশন হিসেবে 'আ হিরো'র হল্প লিখবেন এবং ফিকশন ফিল্ম বানাবেন।"
তবে পাঠক জেনে অবাক হতে পারেন যে, আসগর ফরহাদির কাছে এই নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নয়। এর আগেও তার একজন শিক্ষার্থী ভেবেছিলেন, ফরহাদি তার অ্যাসাইনমেন্টকে চলচ্চিত্রে রূপ দিতে যাচ্ছেন। দ্য হলিউড রিপোর্টকে ঐ শিক্ষার্থীকে বলেন, "ফরহাদি সত্যিই একজন তুখোড় চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি আমার গল্পটা নিয়ে যা করেছেন সেটা তার কাজ, আমার নয়।"
সূত্র: এভি ক্লাব