এক যুগ পর নতুন গান নিয়ে ফিরছেন জেমস
সকাল আটটার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন জেমস। ঘুমাতে যান রাত ১২ টার মধ্যে। সাধারণ খাবার-দাবার আর অন্য সবার মতোই জীপনযাপন করেন তিনি। অবসরে শখের বসে বিভিন্ন জিনিসের ছবি তোলেন। তার খুব ইচ্ছে কবি নির্মলেন্দু গুণের ছবি তোলার।
এমন জেমসকে কে কবে পেয়েছিল? কে কবে দেখেছিল তাকে এমন প্রাণবন্ত আর অকপটে নিজের কথা বলতে! সবসময় নিজের চারপাশে একটা অদৃশ্য পর্দা রেখে সেখানে থেকেই দারুণ সব গান উপহার দিয়েছেন গত প্রায় চার দশক ধরে। কিন্তু গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যেন খোলস ছেড়েই বেড়িয়ে এলেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় এই শিল্পী।
প্রায় ১২ বছর পর আসছে নগরবাউল জেমসের নতুন গান। এ নিয়ে গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সর্বত্র চলছে তুমুল উম্মাদনা। সেই আলোচনার পারদে আরও একটু উস্কে দিলেন জেমস নিজেই। অনেকদিন বাদে 'অকপট কথাবার্তা বলবেন গুরু' এমন আভাষ দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি ক্লাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন জেমস। যার কাছে প্রশ্ন মানেই ছিলো অনেকটা বিরক্তির কারণ, সেই জেমস কিনা একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিলেন মারকুটে ব্যাটসম্যানের মতো।
শুরুতেই জানালেন নতুন গানের খবর। আসছে চাঁদরাতে বসুন্ধরা ডিজিটালে শোনা যাবে তার গান। দেখাও যাবে বটে। 'আই লাভ ইউ' শিরোনামের নতুন এই গানটির লেখা সুর করেছেন গায়ক জেমস। আর ভিডিওটা বানিয়েছেন শাহরিয়ার পলক।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই নিজের গান নিয়ে কথা বলেন তিনি।
"বহুদিন পর নতুন গান বাঁধলাম। তবে এইবার গানটির বিষয় নির্বাচন একেবারেই ভিন্নতর। এই গানটি আমি আমার ভক্তদের উদ্দেশ্যে করে বেঁধেছি, সুর করেছি, কম্পজিশন করেছি। এর বিষয় বৈচিত্রে ঠাই পেয়েছে দীর্ঘ চার দশক ধরে মঞ্চ কিংবা সর্বত্র আমার সঙ্গে ভক্তদের বয়ে চলা, অপরিসীম ভালোবাসার সম্পর্ক। এই গানটি ভক্তদের উদ্দেশ্যে গেয়েছি এবং তাদেরই উৎসর্গ করেছি," বলছিলেন তিনি।
মাত্র আড়াই মিনিটের বক্তব্য শেষ করে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তবে তার আগে জানান, নতুন এই গানটি তৈরি করতে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ডিজিটাল। এই কারণে গানটি করা।
নতুন গান করতে ১২ বছর বিরতি কেন? জানান, এটা আসলে হয়ে গেছে। হয়তো ১১ বছর পর হতো পারতো কিংবা ১৩ বছর পর। কিন্তু সেটা হয়নি। তার চারপাশের মানুষ, বন্ধু, শুভাকাঙ্খি চাইছিলেন নতুন একটা গান হোক। তাই করে ফেলা।
গত চার দশক ধরেই জেমস মানেই উম্মাদনা। হবেই বা না কেন! ব্যান্ড সংগীতের নতুনধারা কিংবা শব্দ, কথা আর সুরের অপূর্ব জাদু- এসব তো জেমসসহ ওই সময়ের ব্যান্ডের মহারথীদের হাত ধরেই। তবে একেকটি গান তরুণদের উম্মাদনার গল্প হবে-এসব কিছু ভেবে ওই সময় গান করেননি বলে জানান জেমস। বলেন, "ওই সময় যখন যা ভালো লাগত সেটাই করতাম। কোনো কিছু ভেবে গান করা হয়নি। সবার আগে প্রাধান্য পেত ভালো লাগা।"
একটা সময় ছিল ঈদসহ নানা উৎসবে প্রকাশ পেত জেমসের গান। অডিও ক্যাসেটের সেই অ্যালবামের সঙ্গে থাকত দারুণ সব কাভার এবং পোস্টার। সেই দিন গত হয়েছে অনেক বছর। এখন গান মানে একটা সিঙ্গেল। শুনতে হয় ইউটিউব বা অন্যকোনো অনলাইন মাধ্যমে। তাহলে ভক্তদের নতুন গানের তৃষ্ণা মিটলেও 'গুরু'র ছবি বা পোষ্টার জমিয়ে রাখার ক্ষুধা কি মিটবে?
জেমস বলেন, "এটা আসলেই দুঃখজনক। আমরা ওই সময়টা পার করে এসেছি। সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে। অ্যালবাম প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেলো। নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই। তবে বসুন্ধরা ডিজিটাল চিন্তা করছে অ্যালবাম আকারে আমার গান বের করা যায় কিনা।"
ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে পছন্দ করেন নগরবাউল জেমস। তার তোলা ছবি ভক্তরা দেখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামনে এসব নিয়ে একক কোনো প্রদর্শনীর ইচ্ছা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে জানান, আপাতত কোনো ইচ্ছা নেই। এটা এখন শখ হিসেবেই আছে। তবে প্রদর্শনী করলে সবাইকে জানিয়েই করবেন।
নগরবাউল শুধু বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয় এমন নয়। বলিউডেও পৌঁছেছে তার বর্ষীয়ান কণ্ঠ। 'ভিগি ভিগি' দিয়ে মাত করেছেন বলিউড তথা এই উপমহাদেশের সংগীতপ্রেমীদের। কিন্তু বলিউডে স্থায়ী হননি এই শিল্পী। জানতে চাওয়া হয় সেই প্রসঙ্গেও। বলেন, "বলিউডে নিয়মিত গান করতে চাইলে সেখানে থাকতে হতো আমাকে। আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না, থাকতে চাই না। এটা সম্ভব না আমার পক্ষে।"
শুরুতেই বলা হয়েছিল অকপটে কথা বলবেন আজ। তাই জানতে চাওয়া হয়, তার এই ভরাট কণ্ঠস্বর কিভাবে রপ্ত করলেন। প্রশ্ন শুনে হাসেন জেমস। কোনো উত্তর নেই আপাতত তার কাছে। শুধু হেসে বলেন 'আমি এইরকমই'।
সবশেষে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি এই দেশে জন্মে অনেক সন্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।"
দর্শকদের অনুরোধ করেন তার নতুন গান শোনার। কনসার্টে দাঁড়িয়ে বলা কথা শেষ কথার মতো করেই বলেন, 'লাভ ইউ অল'।