‘ফোন ধরছি আর বলছি- আমি সুস্থ আছি ভাল আছি, বেঁচে আছি’: হানিফ সংকেত
গত দুদিন হলো ফেসবুকে একুশে পদকপ্রাপ্ত জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের গুজবে বিব্রত নন্দিত এই উপস্থাপক। এসব নিয়ে আজ বুধবার (২৫ মে) দুপুরের পর কথা হলো তার সাথে।
হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক: আপনি গুজবের খবরটা কখন পেলেন?
হানিফ সংকেত: আমি গুজবের খবরটা পেয়েছি গত পরশু দিন। একজন আমাকে টিকটকের একটা লিংক দিয়ে দেখতে বলল। আমি দেখলাম, সেখানে লেখা 'সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন হানিফ সংকেত' তারপর ইন্নাল্লিল্লাহ লেখা। পাশে একটা সাদা মাইক্রোবাসের ছবি। মানুষ যেন বিশ্বাস করে সেভাবে ছবিটা তৈরি করা। এভাবে গুজব ছড়ানো দেখে আমি ওই আইডিতে রিপোর্ট করলাম এবং এটা হাইড হয়ে গেল। এখন এটা যে রিপোর্ট করে তার কাছেই এটা হাইড থাকে, বাকিদের কাছে থাকে না। সন্ধ্যেবেলা দেখি আরও একটা বেড়িয়েছে 'অবশেষে মারা গেলেন হানিফ সংকেত'।
অবশেষে?
হানিফ: হ্যাঁ অবশেষে। সড়ক দূর্ঘটনা তো। এই কারণে অবশেষে লিখে ফেলেছে। তারপর কয়েকজন ফেসবুক লিংক পাঠাল। বলল, আপনি কি জানেন- মানুষজন এগুলো ছড়াচ্ছে। এটা কাল রাত ১২টার পর। আমি এসব পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তারপর আজ সকালে আমার অফিসের লোকজন ফোন করে জানাল, স্যার মানুষের ফোনে তো টিকতে পারছি না। কিছু লেখেন স্যার। সবাই আসলে চিন্তায় পড়েছে।
আমাকে ভোর রাত থেকে আত্নীয়স্বজন, শুভাকাঙ্খী, ভক্তরাসহ সবাই ফোন করছেন। আমেরিকা, কানাডা, সুইডেনসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ফোন আসছে। এমনকি বিদেশিরাও ফোন করছেন। যারা আমার প্রোগ্রাম করতেন তারা সবাই আমার খোঁজ নিচ্ছেন।
আমি সমানে ফোন ধরছি আর বলছি, 'আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি, বেঁচে আছি।' বিদেশের ফোনেই আমি পাগল হয়ে গেছি। দেশের ফোন তো আছেই। কেউ কেউ ফোন করে বলছে, খবর শুনে আমার হার্টের অসুখ বেড়ে গেছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছি। ফোন না ধরেও পারছি না। সবাই তো ভালোবেসেই ফোন করছেন। পরে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহযোগিতা নিয়েছি।
সাইবার ক্রাইম থেকে কোনো ব্যবস্থা নিল?
হানিফ: তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে আমার মনে হয়, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন তাদের আরও সচেতনভাবে ব্যবহার করা উচিত। কোনো কিছু শেয়ার করার আগে আমাদের ভাবা উচিত, আমরা কী শেয়ার করছি। সেটা ঠিক না বেঠিক। যারা ফেসবুক চালান তারা তো অশিক্ষিত না, তাদের অন্তত অক্ষর জ্ঞান আছে।
যারা অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতে পারে, ফেসবুক পোস্ট করতে পারে, কমেন্ট করতে পারে। তারা কেন না বুঝে এমন কাজ করেন। তবে আমি মনে করি, যারা করেন তারা খুবই অল্প সংখ্যক। তারা এইরকম বিষ ছড়াচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমকে অসামাজিক করে তুলছে। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই অ্যাটাক করতে হবে।
যারা এসব করছেন তারা আপনার ভক্ত বলেও নিজেদের দাবি করে?
হানিফ: কিছু মানুষ কিন্তু সরল বিশ্বাসে বিশ্বাস করছেন। তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু যারা শুরুতে ছড়ান তাদের নিয়েই আপত্তি। যারা আমাকে ভালোবাসে তারা কিন্তু এসব ছড়াবে না। উল্টো আমার মৃত্যুর খবরে স্তম্ভিত হয়ে যাবে। যারা ফোন করছে তারা কিন্তু এইরকম বোধ করছেন। সমস্যা হলো, কিছু মানুষ নিজেদের ফলোয়ার, লাইক, কমেন্ট ইত্যাদি বাড়ানোর জন্য নানা গুজব তৈরি করে। আমার পোষ্টে একজন কমেন্ট করেছেন 'আপনার জনপ্রিয়তাকে মাটিচাপা দিতে পারেনি বলে আপনাকে মাটি চাপা দিতে চাইছে একটা মহল'- এটাও হতে পারে।
এইরকম গুজব অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, ফারুক, নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়েও তৈরি হয়েছিল।
হানিফ: এটাও খুব অনৈতিক। তবে তারা অসুস্থ ছিলেন এই কারণে অনেকেই অনেকবার এইরকম গুজব তৈরি করেছিল। কিন্তু, আমি তো একজন সুস্থ-সবল মানুষ। তরতাজা মানুষকে সবাই মেরে ফেলতে চাইছে। মানুষের যখন মৃত্যুর ঘন্টা বাজবে মারা যাবেই। আমিও যাব। কিন্তু তাই বলে মারা যাওয়ার আগেই মৃত্যু সংবাদ ফেসবুকে লিখে মারতে হবে!
এখন আপনার ব্যস্ততা কি নিয়ে?
হানিফ: ইত্যাদির শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ২৯ জুলাই ইত্যাদি প্রচারিত হবে। আসছে ঈদে পাঁচফোড়ন বলে একটা অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে এবং একটা নাটক। সেসব নিয়েই ব্যস্ততা।
আপনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
হানিফ: অনেক ধন্যবাদ। তোমাদের জন্য ভালোবাসা রইল।