ইভিএমের ভোটেও রাত জাগতে হলো!
ভেবেছিলাম ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হলে তাড়াতাড়ি ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ব্যালট পেপারের মাধ্যমে দেয়া ভোট গণনার মত রাত জাগতে হবে না নির্বাচনের ফলাফল জানতে আর আমরা সাংবাদিকরা ভোটের সংবাদ কাভার করা শেষে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যেতে পারব। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি...
চলুন দেখে নিই কতটা দ্রুত হয়েছিলো কালকের ভোট গণনা...
প্রথাগত ব্যালট বাদ দিয়ে শনিবার ঢাকার দুই উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, ভোট হলো আধুনিক প্রযুক্তি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন সংক্ষেপে ইভিএম এর মাধ্যমে।
ইভিএমের বহুল গুণাগুণ ও সুবিধা দেখিয়ে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
শনিবার সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই ভোটারদের অনেকেই অভিযোগ তোলেন তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছিল না ইভিএমে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে।
এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলার তালিকায় ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনও। পরে তার ভোট দেয়ার ভিডিওটি ভাইরালও হয়।
সবাই আরও বেশি আশ্চর্য হয়েছিলো যখন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার ফিঙ্গারপ্রিন্টও মিলল না ইভিএমের সঙ্গে। সেটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে হাসাহাসিও হলো অনেক।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলার কারণ হিসেবে নুরুল হুদা বললেন, তার ফিঙ্গারপ্রিন্টটি নাকি ৭/৮ বছর আগে সংগ্রহ করা আর ভোট দেয়ার সময় তার আঙ্গুল নাকি ঘামে ভেজা ছিলো। পরে তিনি জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে ভোট দিলেন। আর বললেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মিললে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ ভোট দেয়ার আরও বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে।
দিনভর এমন আরও নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিকেল ৪টায় ভোট শেষ হলো। ছিল না ব্যালট বাছাই কিংবা গণনার ঝক্কি-ঝামেলা।
হয়তো ভাবছেন, সবকিছু ঠিকমতোই হলো, তবু কেন আমি এটা নিয়ে লিখছি? আসলে প্রত্যেকটি বিষয়কে একেকজন একেক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন। আমি দেখছি একজন অনলাইন সাংবাদিকের চোখে।
সারাদিন নির্বাচনের খবরগুলোর প্রতি মূহুর্তের আপডেট দেয়া শেষে যখন ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছিলো, আমরা হাঁফ ছেড়ে বলেছিলাম যে, যাক ভোট তো ইভিএমের মাধ্যমে হয়েছে, ভোট গণনাটাও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে আর আমরা দিনশেষে একটু শান্তিতে ঘুমোতে যেতে পারব।
কিন্তু তা আর পারলাম কোথায়?
কথা ছিল ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তার কেন্দ্রে ইভিএম জমা হওয়া ভোটের তথ্য এক্সেল ফাইলে পাঠাবেন তার সিটির রিটার্নিং অফিসারের কাছে। আর রিটার্নিং অফিসার আরও চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় নেবেন সেই তথ্যগুলো একত্রিত করে মূল ফলাফল ঘোষণায়।
কিন্ত গতকালের নির্বাচনের ফল ঘোষণায় রিটার্নিং অফিসার সময় নিলেন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গণনার সময়ের প্রায় সমান। ভোটের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হলো রাত ৩.৩০টার দিকে।
ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ব্যালট পেপার বাছাই কিংবা গণনা করার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কিন্তু তারা ভোট গণনার ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবহার করেও কেন ফলাফলটা তাড়াতাড়ি ঘোষণা করতে পারলেন না, সেটার উত্তর নির্বাচন কমিশনই ভালো দিতে পারবেন।
তবে আমাদের সাংবাদিকদের কষ্ট হলো, এই নতুন প্রযুক্তির ইভিএম আর আমাদের রাত জাগার কষ্ট কমলো কোথায়?
জানা গেছে, প্রিজাইডিং অফিসারদের অনেকেই নাকি কেন্দ্রের ভোটের ফল এক্সেল ফাইলে ঠিকমতো ফরমেট করে কিংবা নির্দেশিত পদ্ধতিতে পাঠাতে পারেনি। সেজন্য নাকি সময় ভোট গণনায় লেগেছে বেশি। এছাড়াও মাঝরাতে হঠাৎ ভোটের ফলাফল আসা থেমে গিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণের। সেখানকার এক সূত্র জানিয়েছে, ঐ সময়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা নাকি একটু ঢিলেমি দিয়েছিলেন ভোট গণনায়। পরে কোন এক মেয়র প্রার্থীর ফোন পেয়ে আবার গতি আসে গণনায়।
এক্সেল ফাইলে পাঠানোর সমস্যা নিয়ে বলবো, কেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেয়া হয়নি? আর ভোট গণনা বাদ দিয়ে বসে থাকা থাকা যেন বাঙালীর সেই চিরচেনা খামখেয়ালীপনার আরেক রুপ।
তো এই ফলাফল ঘোষণার বিলম্বের দায় কি আসলেই ইভিএম এর ছিল?
আর নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানতে আমাদের অনলাইন পাঠকদেরকেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।