বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট: আগস্টেই ঘটতে পারে বিপর্যয়
প্রতিবেশী দেশ ভারতকে প্রায় শ্মশানে পরিণত করেছে করোনাভাইরাসের যেই ভ্যারিয়েন্ট, তা ৮ মে বাংলাদেশেও পাওয়া গিয়েছে। ক্লিনিক্যাল নানাদিকের কারণে ভাইরাসের এই ধরনকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এটির দুটি ক্লিনিক্যাল দিক খুঁজে পেয়েছেন- এক দেহ থেকে অন্য দেহে সংক্রমণ এবং রোগের তীব্রতা।
সংক্রমণের ধরন থেকে বোঝা যায়, এটি কতটা দ্রুত মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ছে এবং রোগের তীব্রতা দেখে আমাদের কাছে থাকা চিকিৎসা সম্পদের ব্যবহার, উপসর্গ ও মৃত্যুর ওপর এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বোঝা যায়।
গবেষকরা এ দুটি ক্লিনিক্যাল বিষয়ের উপস্থিতিই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটির মধ্যে পেয়েছেন।
যখন যুক্তরাজ্যে প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়, তখনই এটির বৈচিত্র্য আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। সেটি ছিল একেবারে শুরুর দিকের একটি ভ্যারিয়েন্ট, যা ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু করার জন্য দায়ী এবং এর মাধ্যমে সংঘটিত ক্ষতির তীব্রতাও অনেক বেশি।
পরবর্তীকালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আরও একটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়, যার সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের একটি আপেক্ষিক প্রতিরোধ রয়েছে।
সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, মহামারির মূল কেন্দ্রবিন্দু ও তীব্রতা চীন থেকে ইতালিতে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত করেছে এবং তারপর তা ব্রাজিলে সরে গিয়ে অবশেষে ভারতে এসেছে।
এগুলো সবই আলাদা আলাদা ভ্যারিয়েন্ট ছিল, কিন্তু প্রত্যেকটিরই এমন কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ছিল যা তাদেরকে মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক করে তুলেছে।
এদিকে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেও যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট থেকে পাওয়া কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ কারণেই একে আমরা 'ডাবল' ভ্যারিয়েন্ট বলে উল্লেখ করছি এবং তা আগেরটার চেয়েও বেশ শক্তিশালী।
এই 'ডাবল' ভ্যারিয়েন্ট আমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্ত করবে না। এটি মাত্র আমাদের দেশে ঢুকেছে, তাই এখনই বড় কোনো ঝুঁকি নেই আমাদের।
এই ভ্যারিয়েন্ট এখন চেষ্টা করবে গুচ্ছ গুচ্ছ আকার ধারণ করতে, কিন্তু আগামী তিন মাসের মধ্যেই এটি গণহারে সংক্রমিত করার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত মার্চে আমরা সংক্রমণের যে হঠাৎ তীব্রতা দেখেছি, তা গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে আমাদের অসচেতনতা ও অবিবেচকের মতো আচরণের ফল।
তার মানে দাঁড়ায়, হয় আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নয়তো সংক্রমণের পরিমাণ ও আমাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল নয়।
এখনকার মতো সংক্রমণের সংখ্যাটা কম, তাই এর তাৎপর্য অর্থবহ মনে হচ্ছে না। একবার যদি এই সংখ্যা এক লাফে বাড়তে পারে, তখন এর গুরুত্ব একদম বদলে যাবে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আমরা বড় পরিসরে সংক্রমণ মোকাবিলা করতে সক্ষম নই।
আমরা যদি বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাচ্ছি, অসংখ্য মানুষ ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত কিংবা বাড়ি ফেরার জন্য যাত্রা করেছে।
এ রকম চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে সংক্রমণ রুখে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না এবং আগস্টের দিকে হয়তো আমাদের চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে।
তাই আমাদের এখনই দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। সাময়িকভাবে ভারতের সঙ্গে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এটি ভারতের পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ রাখা উচিত।
সেইসঙ্গে নিজেদের সুস্থ রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
আরেকটি বিষয় হলো, বাংলাদেশে আগত প্রত্যেক যাত্রীকে অতি অবশ্যই কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে।
আমাদের দেশের পরিস্থিতি জটিল করে দেওয়ার কোনো সুযোগই তৈরি করা যাবে না। কোনো উপসর্গ না থাকলেও যাত্রীদের অবশ্যই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত।
আমরা দেখেছি, আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান মাত্র কয়েকদিন আগে ভারত থেকে ফিরেছেন, কিন্তু বলা হয়েছে তাদেরকে মাত্র ৩-৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। এ ধরনের ব্যতিক্রম উদাহরণ বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখানো উচিত নয়। এগুলো আমাদের জন্য কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না; বরং সবার জন্য ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে।
যারা ইতিমধ্যেই এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরকে আইসোলেশনে রাখতে এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
পরিবহন যোগাযোগ, যেকোনো জনসমাগম ও যোগাযোগ এখন নিষিদ্ধ করতে, অথবা যতটা সম্ভব সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
ভাইরাসটি যদি ভারত বা নেপালের মতো আমাদের আক্রমণ করে, তাহলে আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব না।
শুধু যদি পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো নেই, তবেই আমাদের বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, আমরা এখনো সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি না।
আমাদের জন্য এটি একটি সমানুপাতিক অংক, যত বেশি আক্রান্ত হবে মানুষ, তত বেশি হাসপাতালে শয্যার দরকার পড়বে।
নেপালের মতো আমাদের এখানেও সংক্রমণের সংখ্যাটা যদি ১২০০ হয়ে দাঁড়ায়, আমরা কি পারব তা ঠেকাতে?
-
লেখক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক - মূল লেখা: India variant in Bangladesh: We might see an inevitable spike in August
- অনুবাদ: খুশনূর বাশার জয়া