সংখ্যা আর পরিসংখ্যানে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা
মিথ্যা নাকি তিন প্রকার: মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা আর পরিসংখ্যান। পরিসংখ্যান দিয়ে নাকি দিনকে রাত, আর রাতকে দিন বানিয়ে দেওয়া যায়।
পরিসংখ্যান দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব আসলেই করা যায়, যদি একদিকে এই অসম্ভবকারী নিজে হন চরমতম নির্লজ্জ। তাতেও শুধু চলবে না, যাকে বোঝানো হচ্ছে, তারও ভুল বোঝার ইচ্ছাটাও সমানই থাকতে হবে। উভয়পক্ষের ইচ্ছার এই আশ্চর্য সম্মিলন হলেই পরিসংখ্যান দিয়ে তিলকে তাল কিংবা নর্দমাকে নদী বানানো সম্ভব।
আর না হলে ভিন্ন একটা উপায় আছে, সেটা হলো নানান প্রলোভন এবং বিধি ও নিষেধ জারি করে তাদের মুখটা বন্ধ রাখা।
২.
আসা যাক পরিসংখ্যানে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মৌলিক কয়েকটা দিক নিয়ে পরিসংখ্যান কী বলে?
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে ২০১৮ পর্যন্ত, বাংলাদেশে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রতি হাজারে ০.৬ জন। সংস্থাটির মতে চলনসই সংখ্যা হলো প্রতি হাজারে অন্তত ১ জন।
তুলনা করা যাক প্রতিবেশী ভারতের সাথে। সেখানে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রতি হাজারে ০.৯ জন। বেশ বড়সড় একটা দূরত্ব নিয়ে, অর্থাৎ প্রতি দশ হাজারে তিন জন, লাখে তিরিশ জন বেশি চিকিৎসক নিয়ে দেশটি কোভিড মহামারিতে হিমশিম খেয়েছে। অক্সিজেন বা ওষুধ নিয়ে নয় শুধু, চিকিৎসকদের সংখ্যা নিয়েও। অর্থাৎ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি হাজারে ১ জন চিকিৎসক যে নিতান্তই গরিবি দশা, সেটাতেও পৌঁছাবার কোনো চেষ্টা এই দেশগুলোর নেই।
চিকিৎসকদের এই সংখ্যায় বাংলাদেশের চাইতে পিছিয়ে আছে কেবল আফগানিস্তান আর ভুটান। আফগানিস্তানের কারণটা বোধগম্য, ভুটানের কারণটিও গ্রহণযোগ্য। কিন্তু নেপাল বা মায়ানমারও বাংলাদেশের চাইতে এগিয়ে আছে।
ভারতের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের চাইতে চিকিৎসকের সংখ্যায় বেশ এগিয়ে থাকলেও অন্য একটা বিষয়ে আরও অনেকটা এগিয়ে আছে, সেটা হলো নার্সদের সংখ্যা, ২০১৮ সালের হিসাবে ভারতে তা ১.৭ জন। নেপালে প্রতি হাজার মানুষের জন্য নার্সের সংখ্যা ৩.১ জন। বাংলাদেশে? ০.৪ জন। এই সংখ্যাটা অবিশ্বাস্য পরিমাণ কম।
বাংলাদেশে প্রতি হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য হাসপাতালে শয্যা আছে ০.৮টি। পরিসংখ্যানটি ২০১৬ সালের হলেও এর পর হাসপাতাল সুবিধার যে উন্নতি হয়েছে, তাতে এটা দশমিকের এক ঘরে কোনো হেরফের ঘটাবার কথা না। প্রতিবেশী ভারতে আছে .৫টি।
একটি পত্রিকায় দেখলাম, দেশে মোট আইসিইউর সংখ্যা মাত্র ১১৯৫টি। এর মাঝে ৮৮৬টি ঢাকায়। কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫২ ভাগ হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সুবিধা নেই। হরেদরে নতুন করে যেসব হাসপাতালে আইসিইউ চালু করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে। কেননা, রাতারাতি আইসিইউ করা যায় না। এরজন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন।
জোড়াতালি দেওয়া আইসিইইউগুলো রোগীদের সান্ত্বনা। তারপরও, সেগুলোকে গুনেও বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা শহর আইসিইউ-শূন্য। উপজেলাগুলোর কথা আর বলার দরকার নাই।
অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা যদি গুনি, কোন দুনিয়াতে আমরা দাঁড়াব, জানি না। ওষুধের সরবরাহ কিংবা অন্য সব শুশ্রুষা? এগুলোর কোনো সূচকের কথা জানি না।
বাংলাদেশ আর ভারত দুটো প্রতিবেশী দেশেই স্বাস্থ্যব্যবস্থার চরম বৈপরীত্যটি এখানে যে, দরিদ্র মানুষ আর ধনীদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের তফাতটা আকাশ-পাতাল। করোনার মতো মহামারি হয়তো ধনীদের জন্যও সুযোগটা কিছুটা সীমিত করে ফেলেছে, কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও বাংলাদেশ আর ভারতের হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য 'ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই' দশা থাকে। কোভিড খালি এই ভয়াবহ দশাটিকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
৩.
পরিসংখ্যানের এই করুণ চিত্রটাই আসলে সম্ভব করেছে সেই আলোকচিত্রটিকে, গত কদিন ধরে যেটা মানুষকে রাতে ঘুমাতে দিচ্ছে না। প্রতিটা সংবেদনশীল মানুষ নিজেকে মিলিয়ে দেখছেন ওই তরুণের সাথে, স্ত্রীকে ওড়না দিয়ে নিজের সাথে বেঁধে মোটরসাইকেলে করে যে তরুণ ঘুরছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। প্রথমে মুগদা। জায়গা মেলেনি। তারপর বিএসএমএমইউ। জায়গা মেলেনি।
তরুণটি স্ত্রীকে একটা বেঞ্চে শুইয়ে দিয়ে ভেতরে দেখে এসেছেন, শয্যা খালি আছে। কেন তবু জায়গা মিলছে না? তার মুখে শুনি: [এই শয্যাগুলো খালি রাখা আছে কারণ] "উপরের লেভেলের লোক আসে, ভালো ভালো লোক আসে!"
অর্থাৎ সমাজের উঁচু স্তরের লোক না হলে এই খালি রাখা শয্যাগুলো কর্তৃপক্ষ ছাড়বেন না। তাদেরও বা কী দোষ! হুকুমের বাইরে যাবার সাধ্য তাদের আছে? অবশেষে আলোকচিত্রীর পরামর্শে তরুণ আসেন মহাখালীর কোভিড হাসপাতালে, সেই একই কায়দায় স্ত্রীকে ওড়না দিয়ে নিজের সাথে বেঁধে। সেখানেও শুরুতে তাকে বলা হয় আসন খালি নেই। সংবেদনশীল আলোকচিত্রী এখানে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন, নিজের পরিচয় দেন। ভাষ্য শুনে অনুমান হয়, এই আলোকচিত্রীর কল্যাণেই শেষমেষ নারীটি হাসপাতালে একটি শয্যা পান।
এই আলোকচিত্রটি আসলে যে কোনো পরিসংখ্যানের চাইতে অনেক বেশি বার্তা দিচ্ছে। শক্তিশালী। এই আলোকচিত্রী মুখে আমাদের যে সামান্য গল্পটুকু বলেন ভিডিও বার্তায়, সেই বাস্তবতায় মন্ত্রী কিংবা সচিবদের পক্ষে নিজেদের কাজের বাহাদুরি দেখানো সম্ভব হয়, কেননা তারা মানসিকভাবে অন্য ধাতুকে গড়া।
৪.
শহরে হাসপাতালের খোঁজে মানুষগুলো তাও মাঝেমধ্যে খবর হয়, গ্রামে-গঞ্জে?
দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার একটি গ্রাম গাড়াডোবে ২৯ দিনে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মোট ২১ জন। এর মাঝে ১০ জন করোনার ফল জেনেছিলেন, বাকিরা পরীক্ষা করেননি।
এই প্রতিবেদনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন গ্রামের সাধারণ লোক করোনা পরীক্ষা করতে চান না, তার একটা ধারণা এখানে মিলবে। শহরেই চিকিৎসা মিলছে না, তো গ্রামের সাধারণ মানুষ! করোনা হলে তাদের জন্য কোন চিকিৎসা সুবিধা নেই, পরিসংখ্যানে কোনো বুৎপত্তি ছাড়াই সেটা তারা ভালোই বোঝেন। কিন্তু করোনা হবার কথা চাউর হবার কারণে গ্রামে একঘরে হবেন, কাজ পাবেন না। কাজ বন্ধ হবে, খাওয়া বন্ধ হবে। ফলে মানুষের হিসাব খুব সোজা, করোনা আদৌ পরীক্ষা না করানো। এই বাস্তবতাকে ধারণ করবে কোন পরিসংখ্যান?
গরিব লোকজনকে খাবার না দিয়ে এই কারণে কোনো পরীক্ষা বা লকডাউন কার্যকর করা সম্ভব না, উপজেলা স্তরে সেটা হচ্ছেও না। ঈদের আগে ঢাকা ফাঁকা না হলে এই কঠোরতম লকডাউনও অকার্যকর হতো, ঢাকায় স্বাভাবিক লোকজন থাকলে কাজের সন্ধানে নামা বিপুল মানুষকে সামলানো সরকারের যেকোনো বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব হতো। এখনো কতটা সম্ভব হবে, তা কেউ বলতে পারে না। তাও এখন যেটুকু করা সম্ভব হয়েছে, সেটা হলো ঢাকাকে মুক্ত রেখে সমস্যাটাকে গ্রামেগঞ্জে আটকে রাখার চেষ্টা।
গ্রামের এই সাধারণ মানুষ চিকিৎসাহীনতায় মারা গেলে সেটা দেখার বা বলার তেমন কেউ নাই, কোনো বড় প্রতিবাদও হয়তো দানা বাঁধবে না। অন্যদিকে, গ্রামে তাদের বড় অংশ কিছু না কিছু খাবার পাচ্ছেন বলে সেখানে হয়তো ফুঁসে উঠছেন না। সেই অর্থে বলা যায়, লকডাউন ঢাকাবাসী মুক্ত ঢাকা শহরেই কেবল কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের গ্রাম ও মফস্বলগুলো করোনার মহামারিতে পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে।
৫.
মধ্যযুগে মহামারি দেখা দিলে ধনীরা নিজেদের জমিদারি বা খামারবাড়িতে আবদ্ধ করে ফেলত। দলে দলে প্রজারা মরছে শুনে ইংল্যান্ডের মারকুটে রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড তো লন্ডন ছেড়ে রক্ষীবাহিনীসমেত নিজেকে আটকে রেখেছিলেন বিশাল বাগানঘেরা প্রাসাদে, লন্ডনের অর্ধেক মানুষ সেবার মারা গিয়েছিল প্লেগে।
কোভিডে মৃত্যুর হার প্লেগের চাইতে বহুগুণ কম হলেও এটা সেই সামন্ত সমাজও নয় যেখানে সম্পদের প্রায় পুরোটা ব্যয় হতো অভিজাত শ্রেণির জন্য। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নানান গাফিলতির কারণে মহামারির বিস্তার ঘটলেও অন্তত সুবিধা বণ্টনে বৈষম্য ছিল না।
এবারের কোভিডের সময়ে যেমন দেখা গিয়েছে অক্সিজেনের ঘাটতির চরম মুহূর্তগুলোতে ইতালির মতো দেশে হৃদয়বিদারক একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, চিকিৎসা বিদ্যার নৈতিকতা আর কর্তব্যবোধকে বিচার করেই। চিকিৎসককে বলা হয়েছিল, যে আগে এসেছে তাকে সেবা দিতে হবে আগে, সেই নীতি বাদ দিতে। বরং তরুণদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি, সংকট দেখা দিলে বৃদ্ধদের মাস্ক তাই খুলে নিতে। না, আমলা, রাজনৈতিক নেতা বা স্থানীয় মাস্তানরা নন, চিকিৎসকরাই চরম সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন, এই মর্মান্তিক অথচ শেষ বিচারে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যদিও শ্রেণি ও বর্ণের কারণে সামাজিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংক্রমণের বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেবা পাবার ক্ষেত্রেও, কিন্তু মোটা দাগে শুশ্রূষায় একটা বৈষম্যহীনতা বহুক্ষেত্রেই ছিল। এটা দুর্যোগকালীন সম্পদ বণ্টনের একটা সামাজিক ধরন, একরকমের সামষ্টিক সিদ্ধান্ত।
সম্পদ বণ্টনের আরেক রকম বিন্যাস আমরা বাংলাদেশে দেখছি, দেখছি তার রাজনৈতিক প্রয়োগ, মহামারির কালেও। ইতালিতে তাৎক্ষণিক যোগানের অভাবের মুখে পড়ে বাঁচার সম্ভাবনা কম এমন বৃদ্ধদের চিকিৎসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে যদি আমরা বলি হৃদয়বিদারক অথচ যৌক্তিক; বাংলাদেশে যা ঘটছে তাকে বলতে হবে নির্মম। কোভিডের আগে থেকেই, এবং এমনকি পুরো কোভিড কাল ধরে নানান দুর্নীতির অভিযোগে আচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে এর কর্তারা নিজেরাই সবচাইতে ভালোভাবে অবগত।
ফলাফল যেটা ঘটেছে, সেটা হলো, যখন নিশ্চিত হওয়া গেছে এবারের সংক্রমণ যে ভয়াবহ, সেটা নিশ্চিত হবার পর ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া মানুষগুলোর জন্য শহরগুলোর দুয়ার বন্ধ করে দেওয়া। অভাগা মানুষগুলো যদি নিজেদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জোরে বেঁচে উঠতে পারে, উঠুক। যদি মরে যায়, অন্তত এর কারণে রাজনৈতিক অভিঘাত হবে যথাসম্ভব কম। রাজধানীতে জনসংখ্যা কম থাকার কারণে অন্তত শহরে অজস্র অসুস্থ মানুষকে ধুঁকতে দেখা যাবে না—এই হয়তো তাদের ভাবনা।
আমরা কি বুঝতে পারছি, আমাদের দেশে করোনার এই ভয়াবহতম ঢেউটিও সরকারি পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে ইতালির তুলনায় কত কম, এবং তাতেই আমাদের সব কিছু ভেঙে পড়ছে?
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সংবাদ অনুযায়ী এই লেখার দিনে (৩০জুলাই ২০২১) করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে ভাইরাসটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৭১ জন।
৬ কোটি মানুষের দেশ ইতালিতে ১৩ নভেম্বর ২০২০-এ একদিনে সর্বোচ্চ ৪০,৯০২ করোনা রোগী শনাক্ত হন। সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৩ ডিসেম্বর ২০২০; সেদিন ৯৯৩ জন মৃত্যুবরণ করেন।
ইতালিতে মাথাপিছু চিকিৎসক প্রতি হাজারে চার জন। ইতালিতে নার্স প্রতি হাজারে ৫.৭ জন। ইতালিতে প্রতি হাজারে হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা ৩.১ টা। তারপরও তাদের দেশটা ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে করোনাতে।
কেউ দাবি করছে না যে রাতারাতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ইতালির মানের করে ফেলতে হবে। কিন্তু হাস্যকর রকমের দুর্বল একটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার মাঝে থেকেও যারা ঔদ্ধত্য দেখান, গর্ব করেন, সমালোচকদের হুমকি দেন, চিকিৎসকদের মুখ বন্ধ করেন আইন করে, তাদের লজ্জাহীনতার কোনো সীমা-পরিসীমা আছে?
৬.
গরিব দেশ, বিকল্প কী?
উপজেলা স্তরে জনগণের জন্য সম্পদ বরাদ্দ করা, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি করার কথা হলেই এইসব যুক্তি আসে। সম্পদের ঘাটতি বলে কথা। কিন্তু দেখুন, মাত্র দিন চারেক আগেই আমরা সংবাদপত্রের শিরোনাম দেখলাম 'প্রশিক্ষণের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা চাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়'।
আইসিইউ না, চিকিৎসক না, অবিলম্বে বহুগুণ যাদের সংখ্যা বাড়ানো দরকার, সেই নার্সদের জন্য না, স্রেফ মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ নামের সন্দেহজনক দেশ-বিদেশ ভ্রমণে এই বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে, এই ভয়াবহ মহামারিকালেও।
বরাদ্দ মিললে এই ২৫,০০,০০,০০,০০০ টাকা অচিরেই পরিসংখ্যানের শূন্যতা তৈরি করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, বামনা উপজেলা থেকে চিকিৎসার জন্য ঠিকই তখনও মানুষ মরিয়া হয়েই ঢাকায় ছুটবে।
মহামারির সময়ে যাতায়াত সীমিত করাটা নৈতিকভাবে বৈধ, কেননা যত চলাচল, তত সংক্রমণের বিস্তার। কিন্তু বাংলাদেশে যা আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা তো পরিষ্কারভাবে যাদের চিকিৎসার দায় রাষ্ট্র নিতে পারছে না, তাদেরকে নিয়তির হাতে ঠেলে দেওয়া। সুস্থ হলে ফিরে এসো, অসুস্থ হলে খাতা থেকে নাম কেটে দেয়া হবে, এটুকুই।
হয়তো এই মৃতদের একটা বড় অংশ মহামারির পরিসংখ্যানেও স্থান পাবেন না। তাদের ঠাঁই হবে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর মানুষের মুখে ফেরা তালিকায়।
-
লেখক: প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিক