মানুষের পদভারে কাঁপছে পৃথিবী
মানুষের ভূমিকম্পে পৃথিবী তার নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ভয়ংকর সংশয়ে। পৃথিবী ভাবছে মানুষের এই ভূমিকম্প থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করা যায়। হোমো সেপিয়ানরা ঠিক কখন, কোথা থেকে তার বিচরণ শুরু করেছে পৃথিবীতে তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে প্রায় ৫০০ বছর আগে থেকে শুরু হওয়া প্রথম শিল্প বিপ্লব এবং প্রায় সমকালে পুঁজিবাদের যাত্রা শুরু হয়েছে বলা যায়। যে পুঁজিবাদ ও শিল্পবিপ্লব যৌথভাবে এই মানব বিস্ফোরণ সৃষ্টি করেছে। শিল্পবিপ্লবের শুরুর কালে পৃথিবীর জনসংখ্যার আজকের মতন হিসাব না থাকলেও ধারণা করা হয় ১০০ কোটির আশেপাশে। সেই জনসংখ্যা আজ ৭৮০ কোটি।
অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে মানুষের ভূমিকম্প সৃষ্টির ফলে খাদ্যর প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বেড়েছে। পৃথিবীর দেশগুলোতে পাহাড় জঙ্গল সাফ করে খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৫০ সালের দিকে পৃথিবীর জনসংখ্যা ২০০ কোটির কাছে পৌঁছা মাত্র পুঁজিবাদ আরও বেশি খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার গন্ধ পায়। পুঁজিবাদ বিনিয়োগ শুরু করে কিভাবে আরও বেশি খাদ্য উৎপাদন করা যায়।
গত ৭০ বছরে মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পুঁজিবাদ যে বিনিয়োগ করেছে তার নাম হাইব্রিড টেকনোলজি অথবা অধিক ফলনের কৌশল। যে কৌশলের পরিমাণ পৃথিবীর সকল খাদ্য উৎপাদনের জন্য যে বীজ দরকার তার পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া। পৃথিবীর সব দেশকে ওই বীজ উৎপাদনকারি কোম্পানির কাছ থেকে নিতে হবে। এর সাথে যোগ হয়েছে ফসলের রোগ বালাই। ওই বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে আগমন ঘটেছে ফসলের নিত্য নতুন রোগ। অধিক ফলনশীলতার সাথে রোগ বালাই জুড়ে দেওয়া হয়েছে কিনা জানা যায়নি। বীজের সাথেই আগমন ঘটেছে নানা রকম কীটনাশক ও সার। যার সবটাই রাসায়নিক। গত ৭০/৮০ বছরে পরিস্থিতি এমনটাই হয়েছে যে প্রায় প্রতিটি জমিতে এসব রাসায়নিক সার ও রোগ নিরোধক ঔষধ ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুনাফা বেড়েছে বহুজাতিক পুঁজিবাদী কোম্পানিগুলোর।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পুঁজিবাদের জন্য আশীর্বাদ
বিগত শতাব্দী থেকে পুঁজিবাদ বুঝতে পেরেছে তার উৎপাদিত পণ্যের জন্য ভোক্তা চাই, আর এ ক্ষেত্রে ভোক্তা হচ্ছে জনসংখ্যা। জনসংখ্যা বৃদ্ধি তার উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়াবে। অধিক মুনাফা আসবে তার। আর এই জনসংখ্যাই পৃথিবীর খনিজ পদার্থের চাহিদা বৃদ্ধি করেছে। বৃদ্ধি করেছে জ্বালানির চাহিদা। সাগরের তলদেশ থেকে পাহাড় পর্বত সর্বত্র তেলের সন্ধানে বহুজাতিক পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে। সাগরের তলদেশে থেকে উৎপাদিত কোটি কোটি টন তেল গ্যাস পৃথিবীকে এক ভারসাম্যহীন ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছে। পুঁজির স্বার্থ ও প্রয়োজনে আবিষ্কার হয়েছে মানবের বহু রোগ আর তার ঔষধ আবিষ্কারের গল্প শুনছে পৃথিবী।
৬০ এর দশকে যখন পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে খাদ্য সংকটের আগমন ঘটে তখন জাতিসংঘ নামক সংস্থাটি পৃথিবীর একমাত্র সমস্যা হিসাবে জনসংখ্যাকে চিহ্নিত করে। পৃথিবীর অধিক জনসংখ্যার দেশগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রবর্তন করে। যে দেশগুলিতে এই কর্মসূচীর প্রবর্তন হয় সেই দেশগুলোতে আবার ধর্মতত্ব সৃষ্টি হয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন কার্যসূচী বিরোধিতার সম্মুখীন হয় ধর্মীয় কারণে। পুঁজিবাদের অন্যতম হাতিয়ার ধর্মতত্ত্ব। পুঁজিবাদের স্বার্থকে রক্ষা করাই ধর্মতত্বের মূল লক্ষ্য। পুঁজিবাদ তাকে কাজে লাগিয়ে জাতিসংঘের সেই জনসংখ্যা কর্মসূচীর পরিসমাপ্তি ঘটায় ।
৬০ এর দশকে শুরু হওয়া সেই কর্মসূচীর পরিসমাপ্তি ঘটে ৯০ দশকে। অতি জনসংখ্যার দেশগুলির রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মতত্ত্ব ও পুঁজিবাদের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী ত্যাগ করে।
কার্বন নিয়ন্ত্রণের আগে দরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী ক্যাথলিক খৃস্টান মতে জন্মনিয়ন্ত্রন নিষিদ্ধ, তবুও ওই দেশগুলি বহু আগে ধর্মতত্ব থেকে বেরিয়ে এসেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলো। পুঁজিবাদের উৎপাদিত খাদ্য ও পণ্য বিক্রির প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
পুঁজিবাদ এখন কার্বন নির্গমন নিয়ে কথা বলে কিন্তু বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার বিস্ফোরণের ফসল এই কার্বন, সে কথা পুঁজিবাদ স্বীকার করে না। জলবায়ু নিয়ে গ্ৰেটা থানবার্গ নিয়ে উল্লাস, প্রচার- এইসব হচ্ছে কার্বন কমলে উন্নত পুঁজিবাদী বিশ্ব তার বাজার ঠিক রেখে বিশ্বকে লুণ্ঠন করতে পারবে। সবার আগে আন্দোলন হওয়া দরকার বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের।
পুঁজিবাদী জার্মান ও অন্য দেশগুলো হিটলারের নীলরক্ত তত্ত্ব কার্যকর করছে। তৃতীয় বিশ্বের অশিক্ষিত মানুষকে রিফিউজি হিসাবে গ্রহণ করে সমস্ত কায়িক শ্রমের কাজ করিয়ে নিচ্ছে। সেকারণে কার্বন কিংবা জলবায়ু নয়, জনসংখ্যাই বর্তমান পৃথিবীর প্রধান সমস্যা।