ম্যারাডোনা ও র্যাকুয়েল ওয়েলচ্
স্মরণীয় ড্রিবলিং আর স্মরণীয় গোলের মতো ম্যারাডোনার স্মরণীয় উক্তিও কম নয়। তাঁর মৃত্যুর পর সম্ভবত আর্জেন্টিনিয়ান এক সাংবাদিকই লিখেছেন, 'আর্জেন্টিনার সেরা কপি রাইটার চলে গেলেন।'
কথাটা আসলেই সত্যি। কথা বলতেন রঙচঙে ভাষায়, অদ্ভুত সব উপমায়। এর কিছু তো প্রবাদতুল্যই হয়ে গেছে। পায়ের খেলায় ঈশ্বরের হাতকে টেনে এনেছেন। বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বলেছেন, 'ওরা আমার পা দুটি কেটে ফেলেছে।' কার যেন চারিত্রিক দীনতা বোঝাতে একবার বলেছিলেন, 'ও তো ওর বিড়ালের দুধও চুরি করে খায়।'
তারুণ্যে পত্রিকায় পড়া ম্যারাডোনার আরেকটি বিখ্যাত উক্তি কেন যেন অনেকদিনই আর আলোচিত হতে দেখি না। ম্যারাডোনার আত্মজীবনীতেও তা পেলাম না। আমার কিন্তু কথাটা এখনো পরিষ্কার মনে আছে। যেটি বলেছিলেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ওই 'হ্যান্ড অব গড'-এর গোলের ম্যাচেই দ্বিতীয় গোলটা নিয়ে। সাংবাদিকেরা সেই গোলকে 'বিস্ময়' বলে আখ্যায়িত করার পর ম্যারাডোনা উত্তর দিয়েছিলেন, 'গোল কখনো বিস্ময় হতে পারে না। এই পৃথিবীতে বিস্ময় বলে যদি কিছু থাকে, তা হলো র্যাকুয়েল ওয়েলচ্।' এর কিছুদিন আগে র্যাকুয়েল ওয়েলচের 'ওয়ান মিলিয়ন ইয়ার বি. সি' মুভিটা দেখেছি বলে দ্রুতই ম্যারাডোনার সঙ্গে একমত হয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার বয়সটা বুঝতে হবে না! ম্যারাডোনার কথার মর্মার্থ বুঝতে ওই মুভিতে স্বল্পবসনা র্যাকুয়েল ওয়েলচের একটা ছবি দিতে হতো। সাহসে কুলাল না। ইন্টারনেট তো আছেই, কারও ইচ্ছা হলে দেখে নিতে পারেন।
র্যাকুয়েল ওয়েলচ্ এখনো জীবিত। গত ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর আশি হলো। ম্যারাডোনার মৃত্যু সংবাদটা কি পেয়েছেন তিনি? এই প্রশ্নের চেয়েও আমার বেশি কৌতুহল হয় আরেকটা জিনিস জানতে। ম্যারাডোনা যে তাঁকে বিশ্বের বিস্ময় হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন, সে কথা কি র্যাকুয়েল ওয়েলচের কানে গিয়েছিল? আমার তো ধারণা, ম্যারাডোনার ওই কথাটা বলেছিলেন এই উদ্দেশ্যেই!
অনেক খুঁজেও এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। সাংবাদিকেরা যে কী করে!
- লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক