পেলোসির অবিবেচকের মতো তাইওয়ান সফরের ক্ষতি মানতেই হবে
নীতির সাথে স্মার্ট ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের সমন্বয়েই হয় সফল পররাষ্ট্র নীতি। গত মঙ্গলবার সংহতি জানাতে ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ছিল শুধু নীতিরই প্রতিফলন।
তার এই সফরের কারণে চীনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে যা অনুমান করা যাচ্ছিল, এখনি তা দেখা যাচ্ছে। পেলোসির সফরের পরপরই পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাইওয়ানের উপকূলে লাইভ ফায়ার এক্সারসাইজ করেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তাতক্ষণিক ক্ষতি কমিয়ে তাইওয়ানের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে চীনের চাপ বাড়লে তার বিরোধিতা করতে হবে।
অবশ্যই, আমাদেরও মিস পেলোসির মতোই গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন আছে, চীনা কমিউনিস্ট স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করি আমরাও। ওয়াশিংটন পোস্টে তার লেখা অপ-এডে বলেছিলেন, ''আমেরিকা ও তার মিত্রদের মনে রাখা জরুরি, আমরা কখনো স্বৈরাচারীদের কাছে মাথা নত করি না"- একই ধারণা পোষণ করি আমরাও।
আমরা যেটা বুঝতে পারছি না, এরকমভাবে, এই সময়ে তার সমর্থন দেখানোর জেদ- নিজের দলের প্রেসিডেন্টই ইতোমধ্যে অস্থির ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করার পরও এই সময়েই কেন।
তবে, নভেম্বরে জিওপির জয় হতে পারে, তাই স্পিকার থাকা অবস্থাতেই ন্যান্সি পেলোসি এ ধরনের বড় ঘটনার মাইলফলক চাইলেও, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার আয়োজন করছেন, তখন চীনে যাওয়া অপরিণামদর্শী ছিল। (ধারণা করা হচ্ছে, আর কয় সপ্তাহ পর চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতার জন্য অনুমোদন চাইবেন)
'সামরিক বাহিনী' মিস পেলোসির সফরের বিরোধী, অপ্রত্যাশিতভাবে এ কথা বলে ফেলে পরিস্থিতি সামলাতে মি. বাইডেনও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এরপর মিস. পেলোসি পরিকল্পনা বদলালে মুখ বাঁচাতে পারতেন না, এর কারণেই শি জিংপিংয়েরও প্রতিক্রিয়া জোরদার না করা কঠিন হয়ে যায়। ভালো হতো, প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদি মিস. পেলোসাইট ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে পরিষ্কার করে নিষেধ করতেন।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অগ্রাধিকার ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ও বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি বাজারের অস্থিরতা। বাইডেন প্রশাসনের এখন মনোযোগ সরানোর অবকাশ নেই, ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের তাইওয়ান সংকটের পুনরাবৃত্তি তো দূরের কথা। অনেক আমেরিকান ভুলে গেলেও, ৮ মাস ২ দিন স্থায়ী হয়েছিল ওই সংকট।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের করনেল ইউনিভার্সিটি সফরের পর চীন তাইওয়ানের বন্দরগুলির কাছে সমুদ্রে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনওই অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর আগে সে সংকট কাটেনি। শেষমেশ পিছু হটে চীন।
বাইডেন প্রশাসনকে এখন একইসাথে শান্তি ও তাইওয়ানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার কথা ভাবতে হচ্ছে। এখন চীন আগের চেয়েও অনেক শক্তিশালী, সতর্ক জিয়া জেমিন নয়- চীনের ক্ষমতায় এখন আক্রমণাত্মক শিন জিনপিং। মার্কিন কর্মকর্তা ও মিস পেলোসি বলেছেন, তার এই সফর এক চীন নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন নির্দেশ করে না।
চীনের হুমকি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কখনোই নীতি বিসর্জন দেওয়া উচিত না। বরং একারণেই উচিত, চীনকে কোথায় আর কখন মোকাবিলা করতে হবে তা সতর্কভাবে নির্ধারণ করা।