খুঁজে পেলাম ১৯৫৯ সালে কেনা ৫০০ টাকার সঞ্চয়পত্র!
পাকিস্তান আমলের এই সঞ্চয়পত্রটি কিনেছিলাম আমি যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা স্কুলে ক্লাস সেভেন-এ পড়তাম; কেনার তারিখ ১৯৫৯ সাল দেখে বলতে পারছি। অনেক পুরোনো কিছু কাগজপত্র ঘাটতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো, ফেলেই দিচ্ছিলাম প্রায়।
এটির এখন আর কোন আর্থিক মূল্য নেই। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত স্মৃতিটা মূল্যবান। মনে পড়লো যে তখন আমি নামের শেষে পারিবারিক পদবী "চৌধুরী" লিখতাম। (ক্লাস এইট-এ উঠে যখন পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি তখন নামের শেষের ওই অংশ ছেঁটে ফেলি।) এটাও অস্পষ্ট মনে পড়ছে যে আমার আব্বা পাঁচশ টাকা আমার হাতে দিয়ে পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্রটি কিনতে বলেছিলেন। তখনকার সময়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই টাকার অঙ্কটা মোটেই নগণ্য ছিল না।
বিশেষত আমার আব্বা অসম্ভব সৎ ও কৃচ্ছতার জীবনযাপনের মধ্যে যেটুকু সঞ্চয় করতে পারতেন, সে তুলনায় এই অঙ্কের সঞ্চয়পত্র একটা উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ বলতে হবে। ওই বয়সে সেটা মাথায় আসেনি।
হতে পারে আমি একা গিয়ে কাজটা করার মত স্মার্ট কিনা তা তিনি দেখতে চেয়েছিলেন; অবশ্য আমি পারব সে বিশ্বাস তার নিশ্চয়ই ছিল। তবে এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ছিল না।
তিনি হয়তো হিসাব করে দেখেছিলেন দশ বছর পর সঞ্চয়পত্রটির মেয়াদ যখন পূর্ণ হবে, তখন কে কোথায় থাকবে, হয়তো তখন আমার কোন প্রয়োজনে টাকাটা কাজে লাগবে, এবং আমার জন্য এটা তার দোয়া'র চিহ্ন হিসাবে থাকবে। ১৯৮৫ সনে বাহাত্তর বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। কিন্তু সঞ্চয়পত্রটির কথা তিনিও কখনো উল্লেখ করেন নি, আমারও কখনো মনে ছিল না।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
[লেখাটি ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ফেসবুক থেকে নেওয়া]