‘আমাদের মত ভীতু মানুষের মাঝে আপনি ছিলেন অন্য গ্রহ থেকে ছিটকে আসা নক্ষত্রের মত’
গতরাতে ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি।
ডা. জাফরুল্লাহর মৃত্যুতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। তার প্রতি জানিয়েছেন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর: সুমন রহমান
মাঝে মাঝে মনে হত, ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছেন। এত নিঃসঙ্গ, এত লড়াকু, এত পৌরাণিক! কী অদ্ভূত, ডা. জাফরুল্লাহ! আপনি ছিলেন আমাদের মত ভীতু, বামন আর কম্প্রোমাইজড মানুষদের মাঝে অন্য গ্রহ থেকে ছিটকে আসা কোনো নক্ষত্রের মত।
ভাগ্যিস পৃথিবীতে কোভিড এসেছিল! আমরা যে যার দরজায় খিল এঁটে টিভির পর্দায় আপনার নিঃসঙ্গ লড়াই দেখতে পেরেছিলাম!
অথচ আমরা আপনার জন্য একেবারেই তৈরি ছিলাম না। আমাদের সময়টা হল সুপারহিরোদের সিনেমার পর্দায় দেখার সময়। অথচ এই সময়টাকে কত সহজে কত কঠিনভাবে আপনি নিজের করে নিলেন!
পৃথিবীতে আর খুব বেশি বীরের জন্ম হবে না। আমার ভাগ্য যে, আপনার সময়ে জন্মাতে পেরেছিলাম।
বিদায়, ডা. জাফরুল্লাহ! এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক
আমার দেখা সবচেয়ে সাহসী মানুষ ছিলেন: শফিকুল আলম
তিনি ছিলেন স্বর্গ থেকে প্রেরিত একজন সাধু। তিনি ছিলেন তার মায়ের দশ বছর দীর্ঘ প্রার্থনার উত্তর। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের সাধকদের দান। তার ইচ্ছাশক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে আমি নিশ্চিত ছিলাম, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যে শার্ট ও লুঙ্গি পরছেন তা পরে হুইলচেয়ারে করেই তিনি হিমালয়ের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে পারবেন।
তিনি যেকোন স্বৈরশাসক, যেকোন দানবেরর হুমকির মুখে হাসতে পারতেন। দরিদ্র মানুষের জন্য তিনি যেসব হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন তারচেয়ে তার মন ছিল বড়।
তিনি এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন যিনি একাত্তরের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের পরও স্বাধীনতার জন্য লড়াই ছাড়েননি। তিনি একজন ভালো ডাক্তার ছিলেন। একজন গর্বিত বাঙালি ও বাংলাদেশি। সারাজীবন ছিলেন একজন উদার গণতন্ত্রী। গরীব ও কণ্ঠহীন মানুষের বন্ধু। তিনি আমার দেখা সবচেয়ে সাহসী মানুষ ছিলেন।
বিদায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আমরা হারিয়েছি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষকে। শান্তিতে থাকুন, ভালো ডাক্তার!
লেখক: ব্যুরো চিফ, বার্তা সংস্থা এএফপি
আমি এখনো সেই আলিঙ্গন অনুভব করি: ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী
১৯৯৬ সাল; মধ্যরাত। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর তৎকালীন ১৫ ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসাবে চট্টগ্রামের মিরেরসরাই/ সীতাকুণ্ডে সড়ক দূর্ঘটনার রোগী আমি রিসিভ করি। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন।
আমি আমার অধ্যাপক ডা এ কে এম রেজাউল ইসলাম স্যারকে জানিয়ে রোগীর অপারেশন করতে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করি। সেসময় জিন্স প্যান্ট এবং ফুল শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি আমার হাত ধরে ফেলে এবং গভীর অনুরাগের সাথে জানায় রোগী তার গাড়ির ড্রাইভার এবং ড্রাইভারের এক্সিডেন্ট শুনে তিনি অন্য একটা গাড়ি নিয়ে ছুটে এসেছেন।
আমি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে রোগীর যে রক্তের প্রয়োজন এটা জানাই। তখনই ঐ ব্যক্তি বললেন তিনি সব ব্যবস্থা করছেন এবং আমাকে অপারেশন করতে অনুরোধ করেন।
কথাবার্তার সময় একটি মেডিকেল-বিষয়ক শব্দ ঐ ব্যক্তি ব্যবহার করলে আমি তার পরিচয় জানতে চাই। তখন ঐ ব্যক্তি জানালেন তিনি একজন ডাক্তার এবং তার নাম ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী! আমি তখন বলি 'মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী?' আমার মুখে মুক্তিযোদ্ধা সম্বোধন শুনে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন।
আমি এখনো মুক্তিযোদ্ধা জাফর উল্লাহ চৌধুরীর সেই আলিঙ্গন অনুভব করি…
লেখক: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক
দেশের এই অবস্থায় আমাদের ফেলে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি জাফর ভাই: ফরিদা আখতার
শেষ পর্যন্ত নিজের চোখে দেখতে হলো জাফর ভাই (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) লাশ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁর কোন নড়াচড়া নেই। তিনি নিথর।
চারিদিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের কর্মীদের কান্না তাদের বড় ভাইয়ের জন্য। ছুটে এসেছেন অনেকেই। সবার চোখ অশ্রুতে ভরা।
জানতাম জাফর ভাই এবার যেভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, লাইফ সাপোর্ট পর্যন্ত দিতে হয়েছে; সেখান থেকে ফিরবেন এই আশা গতকাল (১১ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে শুনলাম তিনি ওষুধে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন এবং ডায়ালাইসিস নিতে পেরেছেন প্রায় ৬ ঘণ্টা। মনে আবার নতুন আশা জাগলো। কারণ তিনি তো যোদ্ধা। হারবার পাত্র নন।
এর আগে কোভিডে যখন আক্রান্ত হয়েছিলেন তখনও তো আশা ছিল না । কিন্তু তিনি ঠিকই ফিরে এসেছিলেন এবং প্রচুর কাজ করেছেন।
কিন্তু এবার তিনি তা করেন নি। অসুস্থ অবস্থায়ও কয়েকটি অনুষ্ঠানে গেছেন। সবার বিশ্বাস ছিল তিনি কোনোভাবে বেঁচে যাবেন। কিন্তু আমরা জাফর ভাইকে ঠিকই হারিয়ে ফেললাম। তিনি আর নেই।
শিরীণ তাঁর লাশের পাশে বসে আছে আর বলছে 'এই সময় যাওয়া একদম ঠিক হয়নি'। আমি তার সাথে একমত। দেশের এই অবস্থায় আমাদের ফেলে আপনার চলে যাওয়া ঠিক হয়নি জাফর ভাই।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী
দেশ ও জাতির সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়টিতেই আপনি আমাদের ছেড়ে গেলেন: মোরশেদ শফিউল হাসান
সবাইকে একদিন চলে যেতে হয়। সে নিয়মে আপনাকেও যেতে হতো। কিন্তু পূর্ণ বয়সেও কারো কারো মৃত্যুকে মনে হয় খুব অকালে চলে যাওয়া। আর আপনার বেলায় মনে হচ্ছে দেশ ও জাতির সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়টিতেই আপনি আমাদের ছেড়ে গেলেন।
আপনার মতো যথার্থ দেশপ্রেমিক, সাহসী, স্পষ্টবাদী এবং শক্ত শিরদাঁড়া সম্পন্ন আরেকজন মানুষ পেতে এ জাতিকে হয়তো আরও অনেককাল অপেক্ষা করতে হবে।
সেইসঙ্গে এ অপ্রিয় সত্যটা বলতেও আজ দ্বিধা করবো না (কারণ সত্য উচ্চারণের সে সাহসও আপনিই আমাদের দিয়ে গেছেন), আপনার এই অনুপস্থিতি এই দুর্ভাগা দেশের অনেকের জন্য আজ বড় স্বস্তিরও কারণ হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বর্তমানে কানাডা প্রবাসী ইকরামুল্লাহ চৌধুরীর বড় ভাই। সেই সূত্রে তাঁর বোন ও ভগ্নিপতিসহ কারো কারো সঙ্গে পরিচয় থাকলেও, ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে আমার কখনো আলাপ হয়নি। আমাদের বন্ধুদের অনেকের হয়তো যে সুযোগ হয়েছে। দূর থেকেই বরাবর তাঁকে শ্রদ্ধা করে এসেছি।
কিছুটা কাছ থেকে তাঁকে দেখার এবং তাঁর কর্মতৎপরতা, দায়িত্ববোধ ও সংবেদনশীলতার পরিচয় পেয়েছিলাম একবারই, যখন আমাদের বন্ধু কবি মোস্তফা মীর মৃত্যুর আগে কয়েকদিন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তখনও আমি কখনো এগিয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি, কিন্তু তাঁকে দেখে বারবার ভেবেছি, একজন মানুষ এমনও হয়! আর এ-সময়ে?
মাসখানেক আগে মওলানা ভাসানী বিষয়ক একটি আলোচনা সভায় তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে বসার সৌভাগ্য হবে জেনে উদ্দীপ্ত হয়েছিলাম। কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে জানলাম তিনি খুব অসুস্থ, আসতে পারবেন না। ফলে আমাদের কালের এমন এক বীর ও মহান চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে না পারার আফসোস আমাকে এখন বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ, আপনাকে বিদায়ী অভিবাদন। আপনার দেশপ্রেম, সাহস ও দৃঢ়তা আমাদের নবীন প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হোক, এটাই আজ একমাত্র কামনা।
প্রিয় বন্ধু ইকরামুল্লাহ চৌধুরী, তাঁদের বোন মিলি চৌধুরী, ভগ্নিপতি আইয়ুব হারুনসহ ডা. জাফরুল্লাহর সকল স্বজন-পরিজন, আত্মীয়, বন্ধু, ভক্ত ও গুণগ্রাহীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলবো, এই শোক, বেদনা কেবল তাঁদের একার নয়, সমগ্র দেশবাসীর।
লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক, সমালোচক ও কবি
এই দেশ এমন সন্তান আর কজনই বা পাবে?: আহমাদ মোস্তফা কামাল
কিছুক্ষণ আগে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী চিরবিদায় নিয়েছেন। ১১ এপ্রিল, রাত ১১.৩৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যুসংবাদ প্রচার করা হয়।
তিনি যে ধরনের কিডনি-জটিলতায় ভুগছিলেন, তাতে এতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকাই এক মিরাকল ছিল। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)-এর চূড়ান্ত স্টেজে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন অনেক আগেই। প্রতি সপ্তাহে দু'বার বা তিনবার ডায়ালাইসিস করাতে হতো।
কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেখান থেকে লিভার এবং ফুসফুসও আক্রান্ত হয়েছিল। তারপরও এতটুকু দমেননি। হাসপাতালের বেড থেকে সরাসরি নেমে এসেছেন রাজপথে। চির-লড়াকু মানুষরা বোধহয় এমনই হন!
পড়াশোনার মাঝখানে যুক্তরাজ্য থেকে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। রণাঙ্গনের সাহসী যোদ্ধা ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধজয়ের পর সব ছেড়ে দেননি। দেশ গঠনের কাজে নিজের মতো করে লড়াই করে গেছেন।
তাঁর প্রায় একক-প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের ওষুধ-নীতি প্রণীত হয় ১৯৮২ সালে, যার ফলে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প অভূতপূর্ব গতি পায় এবং ওষুধ তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে দেশ।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল ছিল সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের জন্য উন্মুক্ত। যেমন, ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণের জন্য সবাইকে সমান ব্যয় করতে হয় না। যাদের যথেষ্ট সামর্থ্য আছে তাদের ব্য়য় একরকম, কিন্তু যাদের সামর্থ্য কম তাদের ব্যয় একেবারেই কম। যাদের সামর্থ্যই নেই, তাদের বিনা পয়সায় এই সেবাটি দেয়া হয়। অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও একইরকম ব্যাপার।
কেবল স্বাস্থ্যসেবার কথা বললেই বহু কথা বলতে হবে। কিন্তু তিনি কেবল একটি বিষয় নিয়েই ভাবতেন না। রাজনীতির সঙ্গে ছিল তাঁর সরাসরি সংযোগ। আজীবন ধরে গণতন্ত্র, সুশাসন, জনগণের কল্যাণ ও অধিকার নিয়ে কথা বলে গেছেন তিনি।
এই ধরনের নিরাপোষ মানুষরা সকলের কাছে প্রিয় হতে পারেন না, তিনি তা হতেও চাননি। যা সত্য এবং নৈতিক এবং কল্যাণকর বলে বিশ্বাস করেছেন, অকপটে তা বলে গেছেন। কে খুশি হলো আর কে মুখ কালো করলো তার ধার ধারেননি। হ্যাঁ, যোদ্ধারা এমনই হন।
তাঁর মতো মানুষ ক্রমেই কমে আসছে আমাদের সমাজ থেকে। হয়তো তাঁরাই এ-দেশের শেষ প্রজন্ম যাঁদের সমস্ত চিন্তাভাবনা-কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে থাকতো দেশ। এই দেশ এমন সন্তান আর কজনই বা পাবে?
আপনার অনন্তযাত্রা মর্যাদাপূর্ণ হোক হে বীর। সারাজীবন ধরে মানুষকে যতখানি ভালোবেসেছেন তার অযুত-নিযুতগুণ ফিরে যাক আপনার কাছে। মৃত্যুর ওপারে যে অন্তহীন জীবনের কল্পনা আমরা করি, আপনার সেই জীবন ভরে থাকুক পরিমাপহীন ভালোবাসায়।
লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষক
ডা. জাফরুল্লাহর প্রয়াণ জাতির ইতিহাসের অপূরণীয় এক ক্ষতি: শিবলী আজাদ
বাঙালী বাচাল, আত্মকুন্ডয়নে ব্যাপৃত বাঙালী কথার ফুলঝুরি ফোটাতে পছন্দ করে; তাই কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে, এমন ছেলের আশা করেছিলেন বাংলার এক নারী কবি। বাংলাদেশের সৌভাগ্য, বিগত শতাব্দীতে হাতেগোনা কয়েকজন কর্মযোগীন এদেশে জন্ম নিয়েছিলেন।
মুহাম্মদ ইউনুস, ফজলে হাসান আবেদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদ তেমনি কয়েকজন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রাতঃস্বরণীয় ব্যক্তিত্ব।
পড়াশোনা বাদ দিয়ে, ৭১-এ সেই যে যুদ্ধে গেলেন, বলতে গেলে আর ফেরেননি। সারাজীবন ফ্রন্টেই রয়ে গেলেন এক অর্থে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে গণমানুষের সার্বিক স্বাস্থ্যের আন্দোলন নিয়ে মেতে রইলেন আমৃত্যু। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন গণস্বাস্থ্য ট্রাস্ট, ট্রাস্টের অধীনে প্রতিষ্ঠা করেছেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, খামার।
১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকার প্রধান জেনারেল এরশাদ ডা. জাফরুল্লাহকে ডেকে নিলেন বিশেষ কাজে। হাতে তুলে দিলেন বিশাল কাজের গুরুভার। বিরূপ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও দেশের স্বার্থে জেনারেলের সাথে হাত মেলালেন তিনি। তৈরি করলেন দেশের প্রথম এসেনশিয়াল ড্রাগ পলিসি।
সকল আন্তর্জাতিক প্রেশার উপেক্ষা করে, দেশীয় বখাটে রাজনীতিক আর ভাড়ায় খাটা দল-দাস বুদ্ধিজীবীর কুৎসা উপেক্ষা করে কাজ করে গেলেন নিঃশঙ্ক চিত্তে। বাংলাদেশের জন্যে যুগান্তকারী ঔষধনীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করে অমরত্ব পেলেন ডা. জাফরুল্লাহ। ফলাফল, বাংলাদেশ আজ শুধু ঔষধ উৎপাদনেই স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, তৃতীয় বিশ্বের অগ্রগামী ঔষধ রপ্তানীকারক দেশ।
পরের দিকের 'গণতান্ত্রিক' সরকারগুলো অবশ্য তার নীতির দ্বিতীয় ধাপ আর বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু দমেননি তিনি, কাজ করে গেছেন নিরলস। রাজনৈতিক মঞ্চেও মত প্রকাশে ছিলেন নিঃশঙ্কচিত্ত।
বয়স হয়েছিলো ঢের, স্বাস্থ্যও ভাল যাচ্ছিল না। তারপরেও বলব, ডা. জাফরুল্লাহর প্রয়াণ জাতির ইতিহাসের অপূরণীয় এক ক্ষতি।
লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষক
ক্ষমা করে দিয়েন জাফর ভাই: ইকবাল আর্সলান
ক্ষমা করে দিয়েন জাফর ভাই। অনেক ভুল বুঝেছি করেছি।
অন্যায় করেছি আমরা সমষ্টিগতভাবে।
নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন পরপারে।
লেখক: চিকিৎসক, শিক্ষক ও সংগঠক