ঢাবি ক্যাম্পাসের খণ্ডিত আপডেট
১। সকাল ৬:৩০ টায় হাঁটতে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের দিকে চোখ গেলে দেখতে পেলাম, দুজন শিক্ষার্থী নিজেদের সবটুকু শক্তি দিয়ে অনেকগুলো বোঝা টেনে নিয়ে একটা আতঙ্কগ্রস্ত চেহারায় নীলক্ষেতের দিকে যাচ্ছে। তোমরা কোন হল এবং বিভাগের জিজ্ঞেস করলে জানায় যে, তারা রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং নৃবিজ্ঞানে পড়ে।
তারা গতকাল ফিরে যেতে পারেনি বলে সব রকমের ঝুঁকি সত্ত্বেও রোকেয়া হলেই ছিল। তারা কাছেই তাদের বান্ধবীদের বাসায় যাবে রিকশায় চেপে। মনে হলো, সরকারি দলের কোন গুন্ডা তোরণের আশেপাশে ওত পেতে থাকতে পারে। অনেক সংখ্যক পুলিশও দেখলাম। কেউ ক্যাম্পাস থেকে ওখান দিয়ে বের হতে গেলেও তারা বের হতে দিতে চাইছেনা! শিক্ষার্থী দুজনের জন্য রিকশা ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা ভাবলাম, যাতে আবার কোনো বিপদে না পরে।
আমি তাদের সাথে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যেতে যেতে গতকাল ডিবিসি নিউজে প্রচারিত প্রাধ্যক্ষকে নিয়ে "আন্দোলনকারীরা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে" এরকম একটা ভয়াবহ সংবাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা জানালো, "এরকম কিছু ঘটেনি, স্যার! প্রাধ্যক্ষ অফিস ছেড়ে তাঁর বাসভবনে চলে গেলে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম উনার সাথে কথা বলতে। এটা একটা মিথ্যা প্রচারণা"!
২। দুই শিক্ষার্থীকে রিকশা ব্যবস্থা করে ফিরে আসার সময় খেয়াল করলাম ফুলার রোডে থাকে, এরকম একজন তরুণকে (সম্ভবত কোন শিক্ষক পরিবারের সন্তান) পুলিশ বাইরে বের হতে দিচ্ছে না! সে এটিএম এ টাকা তুলতে যাবে। পুলিশ বলছিলো, "বের হলে আবার ঢুকতে পারবে না"। এগুলো শুনে আমি আর না পেরে বললাম, "তাকে যেতে দিন, আমি তাকে চিনি। টাকা তুলে আনতে দিন।" ছেলেটি ফিরে আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। এর মাঝে আরেকজন প্রাতঃভ্রমণকারীকে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। মনে হলো পুরো ক্যাম্পাসে যেন কারফিউ!
৩। আমি তোরণের মোড় থেকে ফিরে আবার উল্টোপথে সোজা হাঁটতে হাঁটতে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে গেলে হেলমেট মাথায় অনেক অনেক পুলিশ আর আরেকটু এগিয়ে গেলে দুই পিকআপ ভর্তি বিজিবি সদস্য চোখে পরলো, পেছনে ছিল ট্যাংকের মতো দুটি সাঁজোয়া যান।
তারপর রোকেয়া হল পর্যন্ত গিয়ে আবার উলটো দিকে ঘুরে আমার প্রতিদিনের অভ্যাসমতো প্রভোস্ট কোয়ার্টার হয়ে সূর্যসেন হলের পাশ দিয়ে হেঁটে আসতে আসতে চারদিকে খেয়াল করছিলাম। সূর্যসেন হলের দেয়ালসংলগ্ন আর রেজিস্ট্রার ভবনের পেছন দিকের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দেখলাম কাঁথা, তোশক, বালিশ, চাদর আর অন্যান্য বেশকিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। কাছে গিয়ে বুঝলাম, এগুলো দুই-একজন হল নেতার মালপত্র। সম্ভবত জানালা দিয়ে ছুঁড়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ছড়ানো-ছিটানো মালপত্রের মধ্যে কিছু দাওয়াপত্রে সেই নেতাদের নাম দেখেছিলাম!
৪। বামদিকে ঘুরে হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের গেটের কাছে গিয়ে ডানদিকে তাকালে দেখি একটা পিভিসি ব্যানার ঝুলছে শেডের ওপরের দিকের দেয়ালে। সেখানে এরকমটা লেখা আছে, "আজ থেকে এই হলে রাজনীতি নিষেধ করা হলো।" এটার আরেকটু নিচে ছোটো করে লেখা, "এখন থেকে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে গেস্টরুমে বা পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে নিয়ে যেতে পারবে না।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. তানজীমউদ্দিন খানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত