বাংলাদেশ–ভারত আকাশপথে ভ্রমণ: যাত্রীস্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে ফ্লাইট পরিচালনা
আন্তর্জাতিক কিংবা আঞ্চলিক যেকোনো বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশী যাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম আকাশপথ।
অথচ, জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাত্রীসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর ভারতের ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লীসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রীসংখ্যা স্মরণকালের মধ্যে নিম্নমুখী দেখা যাচ্ছে।
ভ্রমণপিপাসু বাংলাদেশিরা পর্যটন ভিসার মাধ্যমে কলকাতা ও দিল্লী ভ্রমণ এবং চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য মেডিকেল ভিসার মাধ্যমে চেন্নাই ও হায়দ্রাবাদ ভ্রমণ করেন। এছাড়া, বিভিন্ন কারণ, বিশেষ করে ব্যবসায়িক এবং শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে, বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করেন।
দেশীয় এয়ারলাইন্সের মধ্যে জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার অস্বাভাবিক যাত্রী স্বল্পতার কারণে আগস্টের শুরু থেকেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে কলকাতা প্রতিদিন ২টি করে ফ্লাইট, অর্থাৎ সপ্তাহে মোট ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করত।
কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে এটি সপ্তাহে মাত্র ৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন একটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হলেও যাত্রী স্বল্পতার কারণে বর্তমানে চট্টগ্রাম–কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী চেন্নাই ভ্রমণ করেন। ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ১১টি ফ্লাইট পরিচালনা করত, কিন্তু বর্তমানে ঢাকা–চেন্নাই রুটে সপ্তাহে মাত্র ৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এটি।
কলকাতা রুটে চলাচলকারী নভোএয়ার যাত্রীস্বল্পতার কারণে সাময়িকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে।
বেসরকারি এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা–কলকাতা রুটে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইটের পরিবর্তে বর্তমানে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আর ঢাকা–চেন্নাই রুটে সপ্তাহে ৭টির পরিবর্তে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
একই চিত্র ভারতের বিমান সংস্থাগুলোর বাংলাদেশে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটে — সবগুলো সংস্থায় দৃশ্যত যাত্রী সংখ্যা নিম্নমুখী।
বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণকারী যাত্রীরা ভিসা ইস্যুর প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না হওয়ায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় অতিবাহিত করছেন। অনেকে জরুরি প্রয়োজনে ভারত ভ্রমণ করতে পারছেন না।
পার্শ্ববর্তী দু'দেশের আর্থ-সামাজিকসহ নাগরিকদের সকল ধরনের সম্পর্কের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য দুদেশের নীতি-নির্ধারকদের দ্রুতলয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছেন ভারতভ্রমণে ইচ্ছুক নাগরিকেরা।
বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে ভিসা জটিলতার কারণে নাগরিকদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেলে দু'দেশের আকাশপথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে যাবে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। এমন কিছু ঘটলে দেশের বিমান চলাচল ও পর্যটন খাত হুমকির মুখে পড়বে।
মোঃ কামরুল ইসলাম: মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ), ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্স
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।