তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে সিলেট
এক মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরেরও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা দেখা হয়। দুই সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে।
বিশেষ করে ঈদুল আযহার দিন ভোর থেকে অতিভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকা। এই বন্যার পানি ক্রমেই বিস্তৃত হয়ে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে সিলেটের সব উপজেলার অন্তত ১৩ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েন। তবে গত সপ্তাহ থেকে নামতে শুরু করে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি।
তবে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি পুরো নামার আগে সোমবার (১ জুলাই) থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
টানা তিনদফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এাকার বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। অনেকের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সিলেটে ৫টি নদীর পানি ৬টি স্থানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ২২ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা পয়েন্টে ০.৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারীর কারণে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, আগে থেকেই সিলেটের নদ-নদী ও হাওর পানিতে ভরাট হয়ে আছে। ফলে নতুন করে বৃষ্টি ও ঢলের পানি নামতে পারছে না। একারণে দ্রুত লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার জনপদ ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় অনেকেই নতুন করে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, তৃতীয় দফায় ভারি বর্ষণে জৈন্তাপুর উপজেলা বন্যা পরিস্থিতি আগের আকার ধারন করেছে। উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'যেসব ঘর বাড়িতে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে কিংবা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে।'
এদিকে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে রাতে সিলেট নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জলমগ্ন ছিলো নগরের অন্তত ২৫ টি এলাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তবে দুপুরে বৃষ্টি থামার পর পানি নামতে শুরু করে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি জমেছিল। তবে বৃষ্টির থামার পর পানি নেমে গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বৃষ্টির পানি যাতে না জমে সেজন্য কাজ করছেন।
সিলেট আবহওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২৫ ঘণ্টায় সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।