কে হবেন পরবর্তী নেতা? অনিশ্চিত পথে শ্রীলঙ্কা
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যাওয়ার পর ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা শ্রীলঙ্কা এবার একটি রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। দেউলিয়া এই দেশটির নেতৃত্ব কে দিচ্ছে তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।
বুধবার ভোরে মালদ্বীপে পৌঁছেছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র। তবে, ইতোমধ্যেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে।
এদিকে, বিক্রমাসিংহের পদত্যাগ দাবি করা বিক্ষোভকারীরা তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্ট। দেশটির মানুষ যেখানে এই নেতার পদত্যাগ চান, সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি হয়ে যেতে পারেন তিনি।
চরম অস্থিরতার মাঝে আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে মিছিল করছে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য সেখানে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রপতি গোতাবায়ার এই আকস্মিক প্রস্থান রাজধানী কলম্বোকে এক গভীর অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তার এই কাজের ফলস্বরূপ, দেশে একটি বিশাল রাজনৈতিক পরিবর্তন আসতে পারে।
রাজাপাকসে এবং তার পরিবারের সদস্যদের আধিপত্য বিস্তৃত মন্ত্রিসভার নেওয়া নানা ভুল পদক্ষেপের ফলে কয়েক মাস ধরে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা।
পর্যটন শিল্পকে ধ্বংসকারী মহামারি দিয়ে শুরু হওয়া এই সংকট শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যথেচ্ছ ব্যবহারের সাথে যুক্ত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এরমধ্যে জ্বালানির ঘাটতি, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার কারণে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে।
তাই, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব যিনি নিবেন, তাকে এই ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলঙ্কানদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
এর আগে, গত ৯ জুলাই, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ভবন দখলে নিলে আত্মগোপনে যান গোতাবায়া।
তিনি যদিও আজ (১৩ জুলাই) পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নেওয়া হয়নি।
আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসলে গোতাবায়া হবেন সরকার ত্যাগকারী হিসেবে রাজাপাকসে পরিবারের শেষ সদস্য।
চলতি বছরের মে মাসে তার বড় ভাই এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন।
এদিকে তার আরেক ভাই, অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসেসহ পরিবারের আরও বেশ কয়েকজন সদস্যকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে, রাজাপাকসের অনুগত ক্ষমতাসীন দল এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখল করে আছে।
কিন্তু, শ্রীলঙ্কার সংবিধান ক্ষমতার পরিবর্তন সম্পর্কে স্পষ্ট। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী তার স্থলাভিষিক্ত হন।
এরপরের সিদ্ধান্ত নেন পার্লামেন্টের সদস্যরা। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পূর্ণ করার জন্য সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে তার পদে নিযুক্ত করা হয়।
গোতাবায়া রাজাপাকসের মেয়াদ শেষ হতে আরো দুই বছর বাকি। কিন্তু, সংসদের বেশিরভাগ সদস্য তার পরিবারের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকায় দেশটির রাজনৈতিক নেতারা মানুষের কাছে তেমন জনপ্রিয় নয়।
- সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস