নিজের জন্মদিনে ভারতের জঙ্গলে পুনরায় চিতা’র সূচনা করালেন নরেন্দ্র মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন উপলক্ষে আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে প্রত্যাশিত সেই আটটি চিতা আজ শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভারতে পৌঁছেছে। স্থানীয় সময় সাতটায় চিতা বহনকারী বিশেষ বিমানটি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে পৌঁছায়।
বিলুপ্তির দীর্ঘ ৭০ বছর পর এই প্রথমবার চিতা ভারতে বিচরণ করতে যাচ্ছে। ১৯৫২ সালে ভারত সরকার চিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
দুই থেকে ছয় বছর বয়সী এ আটটি চিতার মধ্যে পাঁচটি স্ত্রী চিতা এবং বাকি তিনটি পুরুষ চিতা।
তবে শুধু এ আটটিই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া থেকে মোট অন্তত ২০টি চিতা ভারতে আনা হবে।
বৃহদাকার মাংসাশী কোনো প্রাণীকে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে এনে বনে ছাড়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম এ প্রাণী ঘণ্টায় ১১৩ কিলোমিটার (৭০ মাইল) বেগে যেতে পারে।
বোয়িং ৭৪৭ বিমানে করে আসা চিতাগুলোর সাথে ছিলেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ, পশুডাক্তার, এবং তিনজন জীববিজ্ঞানী। গোয়ালিয়র পৌঁছালে চিতাগুলোকে হেলিকপ্টারযোগে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে প্রাণীগুলোকে কুনো জাতীয় পার্ক অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেন নরেন্দ্র মোদি। ২৮৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এ পার্কটি অ্যান্টিলোপ, বন্য শূকর ইত্যাদি প্রাণীর অভয়ারণ্য।
এ চিতাগুলোর জন্য পার্কের ভেতর একটি এলাকা বিদ্যুতায়িত বেড়া দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছে। পুরোপুরি বনে ছাড়ার আগে এগুলোকে এ এলাকায় এক মাস কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
ছেড়ে দেওয়া প্রত্যেকটি চিতার অবস্থানের আপডেট পেতে স্যাটেলাইট রেডিও কলার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল যাদের কাজ হবে চিতাগুলোর পদচারণা পর্যবেক্ষণ করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে ক্রমাগত শিকার, আবাসস্থল হারানো এবং খাদ্যের অপ্রতুলতার জন্য ভারত থেকে চিতার বিলুপ্তি ঘটেছিল। জরিপের তথ্যমতে ব্রিটিশ ভারতে ভেড়া এবং ছাগল পালকদের হাতে অন্তত ২০০ চিতা মারা যায়। এর মধ্যে বেশসংখ্যক চিতা গ্রামে প্রবেশ করে গবাদিপশু শিকার করার সময় নিজেরা শিকারে পরিণত হয়।
'প্রজেক্ট চিতা'র সমর্থনকারীদের মতে এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতির গতি যেমন বৃদ্ধি পাবে, বন্যপ্রাণীর জন্য অনুকূল ইকোসিস্টেমও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন বাসস্থানচ্যুতি এবং পার্কে ছেড়ে দেওয়া এ প্রাণীগুলোকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
কিন্তু চিতার যথেষ্ট অভিযোজন ক্ষমতা আছে দাবি করে কর্তৃপক্ষ বলছেন, ছেড়ে দেওয়ার আগে স্থানগুলোতে আবাসস্থল, শিকার এবং মানুষ ও বন্য প্রাণীর মধ্যে সংঘর্ষের মতো বিষয়গুলো ভালো করে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর বিলুপ্ত ঘোষণা করা একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী এই চিতা। এরপর থেকেই ভারতীর সরকার আবার চিতা ফিরিয়ে আনার তৎপরতা চালাতে থাকে।
এর আগে সত্তরের দশকে ইরান থেকে চিতা আনার পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তবে ইরানের শাহ-এর পদচ্যুতির ফলে আলোচনা বন্ধ হয়ে গেলে সে পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়।
ভারতে বন্দিদশায় চিতার সর্বপ্রথম জন্ম হয় মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলে। তার বাবা সম্রাট আকবরের সময় (১৫৫৬-১৬০৫) ভারতে চিতার সংখ্যা ছিল ১০,০০০। এরপর ঊনিশ শতক নাগাদ এ সংখ্যা অনেক কমে যায়।
সর্বশেষ ৭০ বছর আগে ভারতে চিতা দেখা গিয়েছিল।
সূত্র: বিবিসি