মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে আবারও আনোয়ার ইব্রাহিম
দুই দশক ধরে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে থাকার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে আবারও ফিরেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এর আগে, ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একেবারে দ্বারপ্রান্তে ছিলেন, তবে তার জোটের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে শেষ পর্যন্ত আর প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসা হয়ে ওঠেনি তার।
আগামী ১৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে আগাম জাতীয় নির্বাচন। দিনটিকে সামনে রেখে নিজের দলের প্রচারণায় নেমেছেন মাহাথির মোহাম্মদের এক সময়ের সহচর, ৭৫ বছর বয়সী মালয়েশিয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহিম। খবর রয়টার্সের।
প্রচারণার সময় জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি কোরআন শরিফের আয়াত এবং স্থানীয় মালয় লোককাহিনী যোগ করে বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে মজাও করেছেন।
শুক্রবার পশ্চিম মালয়েশিয়ায় নিজের নির্বাচনী এলাকা তাম্বুনে প্রচারণার একদিন পর রয়টার্সকে তিনি বলেন, "আমি আশাবাদী।" এ সময় তিনি বহু-জাতিগত, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে নিজের জোটের বিজয়ের সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
"আমরা এখানে শাসন ও দুর্নীতি রোধ করতে এসেছি এবং এই দেশকে বর্ণবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত করতে এসেছি," বলেন তিনি।
নির্বাচনে আনোয়ারের জোট অন্য যেই দুটি জোটের মুখোমুখি হবে তা হলো- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব নেতৃত্বাধীন জোট এবং অন্যটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন নেতৃত্বাধীন আরেকটি জোট। প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে এছাড়াও আরও কয়েকটি জোট রয়েছে; এরমধ্যে দেশটির প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের প্রতিষ্ঠিত একটি দলও আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এত এত দল এবং নেতার মাঝে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশটির এবারের নির্বাচনে ভোট বিভক্ত হবে বেশি।
জনমত জরিপেও দেখা গেছে, একক কোনো দল বা জোটের পক্ষে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হবে না। এরপরেও 'মতাদর্শগত মৌলিক পার্থক্যের কারণে' ইসমাইল ইয়াকুব বা মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের সঙ্গে তিনি জোট বাঁধবেন না বলে জানিয়েছেন।
আনোয়ার বলেন, "যেকোনো ধরনের জোট গঠন একটি বড় ধরনের বিপত্তি ঘটাবে, কারণ এখানে মূলত বর্ণবাদী বা মুসলিম ধর্মান্ধদের সঙ্গেই জোট বাঁধার সুযোগ রয়েছে।" এমনকি, পুরনো সহচর মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গেও কাজ করবেন না তিনি। বর্ষীয়ান এই নেতার সঙ্গে আগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও এখন তারা ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী।
এদিকে, আনোয়ারের সমর্থনে রয়েছে মালয়েশিয়ায় জাতিগতভাবে চীনা ও ভারতীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। মোট ভোটারদের এক তৃতীয়াংশ তারা; এছাড়া, শহুরে এলাকার ভোটাররাও তার সমর্থনে রয়েছে।
কিন্তু মালয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা কম। কারণ এর আগে, সমকামিতার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে, যা দেশটিতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে প্রায় এক দশক জেলে কাটিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।