নেপালের কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন ‘দ্য সারপেন্ট’খ্যাত কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার
আদালতের আদেশে নেপালের কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজ। খবর বিবিসির।
১৯৭৫ সালে কাঠমান্ডুতে দুজন টুরিস্টকে খুনের দায়ে ১৯ বছর জেল খাটা শোভরাজকে ১৫ দিনের মধ্যে ফ্রান্সে ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
১৯৭০-এর দশকে ভারতে আরও কয়েকজন টুরিস্ট হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন শোভরাজ। সেজন্য তাকে ২০ বছর ভারতে জেল খাটতে হয়।
দ্য সারপেন্ট নামে কুখ্যাত শোভরাজের হাতে খুন হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিই ছিলেন ভারত ও থাইল্যান্ডে ঘুরতে আসা পশ্চিমা তরুণ হিপ্পি।
কুখ্যাত এই খুনি দুটি যাবজ্জীবন মেয়াদের কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করছেন। প্রত্যেক সাজার মেয়াদ ২০ বছর। নেপালে রাজধানীতে তিনি কারাভোগ করছেন কনি জো ব্রোনজিক নামের এক মার্কিন নারী ও তার কানাডীয় বন্ধু লরেন্ট ক্যারিয়ারকে হত্যার দায়ে।
দুটি আলাদা বিচারে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ক্যারিয়ারকে হত্যার দায়ে তার ২০ বছরের জেল হয়।
তবে সম্প্রতি শোভরাজের আইনি দল তার সাজার মেয়াদ কমানোর জন্য পিটিশন করে। পিটিশনে বলা হয়, বয়স ও ভালো আচরণের জন্য তার সাজা ভোগের মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া উচিত। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার (২১ ডিসেম্বর) নেপালের সুপ্রিম কোর্ট ৭৮ বছর বয়সি শোভরাজকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন।
নেপালের আইন অনুসারে, যেসব কারাবন্দি মোট মেয়াদের ৭৫ শতাংশ সময় সাজা ভোগ করেছেন এবং ভালো আচরণ করেছেন, তাদেরকে মুক্তি দেওয়া যায়।
এএফপি জানায়, রায়ে আদালত বলেছেন, 'তাকে এভাবে টানা কারাগারে আটকে রাখা বন্দির মানবাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।' এছাড়া হার্টের রোগের চিকিৎসা করানোও শোভরাজের মুক্তির একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন আদালত।
শোভরাজের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাকে আজ বৃহস্পতিবারই মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ২০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শোভরাজ। ভুক্তভোগীদের তিনি মাদক দিয়ে শ্বাসরোধ করে বা পিটিয়ে হত্যা করতেন। তারপর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলতেন।
ছদ্মবেশ নিতে পটু ছিলেন শোভরাজ। ছিল কারাগার থেকে পালানোর দক্ষতাও। আর তার সিংহভাগ টার্গেট ছিল তরুণীরা। এ কারণে তার নাম হয়ে যায় 'দ্য সারপেন্ট' ও 'বিকিনি কিলার'। পরবর্তীতে ২০২০ সালে বিবিসি ও নেটফ্লিক্স তাকে নিয়ে যৌথভাবে 'দ্য সার্পেন্ট' নামেই ড্রামা সিরিজ নির্মাণ করে।
কাঠমান্ডুতে জেল খাটার আগে শোভরাজ ইতিমধ্যে এক বাসভর্তি ফরাসি পর্যটককে বিষ খাওয়ানোর দায়ে দুই দশক কারাভোগ করেন।
ওই সময় তিনি কারারক্ষীকে মাদক দিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে যান। পরে শোভরাজ দাবি করেন, ইচ্ছে করেই সাজার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তিনি জেল থেকে পালিয়েছিলেন, যাতে থাইল্যান্ডে প্রত্যাবাসন এড়াতে পারেন। থাইল্যান্ডে তাকে আরও পাঁচটি খুনের দায়ে পুলিশ খুঁজছিল।
ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৩ সালে কাঠমান্ডুর এক ক্যাসিনো থেকে তাকে ব্রোনজিককে হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়।