ইরাক সীমান্তে জর্ডানের বিপুল পরিমাণ ‘গরীবের কোকেন’ আটক
'গরীবের কোকেন' নামে পরিচিত ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট পাচারের ক্ষেত্রে চোরাচালানকারীরা প্রায়শই জর্ডানকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। সে কারণেই প্রতিবছর জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায় লক্ষ লক্ষ ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট জব্দ করে দেশটির কাস্টমস ডিপার্টমেন্ট। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ইরাক সংলগ্ন বর্ডার থেকে প্রায় এক টন সমপরিমাণ ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট জব্দ করেছে জর্ডান। খবর বিবিসির।
দুটি অত্যাধুনিক রেফ্রিজারেটরের লরিতে করে এ ট্যাবলেটগুলো পাচার করা হচ্ছিলো। মস্তিষ্কে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বিপুল পরিমাণের এই ড্রাগের চালানে প্রায় ৬০ লক্ষ ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। জর্ডানের কাস্টমস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটির ইতিহাসে এত বিপুল পরিমাণ ড্রাগ জব্দ করার নজির খুব অল্পই আছে।
'গরীবের কোকেন' নামে পরিচিত এ ড্রাগগুলো মূলত দীর্ঘ যুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশ সিরিয়ায় বেশি উৎপাদিত হয়। দেশটিতে দারিদ্রতা বৃদ্ধির কারণে সাধারণ নাগরিকেরাও এই ড্রাগটি উৎপাদন ও পাচারের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন। যদিও সিরিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে এই ড্রাগের উৎপাদন ও বিপণনের সাথে দেশটির তৃণমূলের মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র থাকার কথাটি বারবার অস্বীকার করা হয়।
কিন্তু বিভিন্ন সময়ে করা নানা রিপোর্টে দেখা যায়, সিরিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য ও মিলিটারির সাথে ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেটের খুবই ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। ২০২১ সালে সাইপ্রাসভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের রিপোর্ট মতে, এই ট্যাবলেটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসার মোট বাজারমূল্য প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
সম্প্রতি আটক করা ট্যাবলেটগুলো মূলত জর্ডান ও ইরাক সীমান্তের আল কারামাহ বর্ডার দিয়ে গালফভুক্ত কোনো দেশে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ঠিক কোন দেশে ড্রাগগুলো পাচার করা হচ্ছিলো এবং ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে সে সম্পর্কে জর্ডান কাস্টমস ডিপার্টমেন্ট পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়নি।
প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ড্রাগ জব্দ করতে থাকায় পাচারকারীদের সাথে জর্ডানের মিলিটারিদের সংঘর্ষ ক্রমশ বাড়ছে। এমতবস্থায় সংঘর্ষে পাচারকারীদের সরাসরি গুলি করার শক্ত নীতি গ্রহণ করেছে জর্ডান পুলিশ। যার ফলে চলতি বছরের শুধু জানুয়ারি মাসেই বর্ডার ক্রসের সময় ২৭ জন পাচারকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ষাটের দশক থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে বিষণ্ণতা কাটাতে মানুষ ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট গ্রহণ করতো। কিন্তু পরবর্তীতে ট্যাবলেটটি নেশা সৃষ্টিকারী ড্রাগ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করলে বেশিরভাগ দেশেই এটা নিষিদ্ধ করা হয়। ড্রাগটি শরীরে খুব দ্রুত কাজ করে এবং এটি খেয়েই যোদ্ধারা ঘুম ও বিশ্রাম ফেলে দিনে রাতে সর্বক্ষণ কোনো ধরণের বিচার বিবেচনা ছাড়াই যুদ্ধ করতে পারে।