বিশ্বভারতীর জমি দখলের অভিযোগে আবারও অমর্ত্য সেনকে চিঠি
বেআইনিভাবে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন- এই অভিযোগ তুলে জমি ফেরত চেয়ে মঙ্গলবার নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তার তিন দিনের মাথায় আরও একটি চিঠি গেল তাঁর বাড়ি 'প্রতীচী'তে। এই চিঠিতে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আপনি (অমর্ত্য সেন) ওই জমি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বভারতীকে ফিরিয়ে দিন। তা নাহলে দেশের আইন আপনাকে এবং বিশ্বভারতী, যাকে আপনি খুব ভালবাসেন, দুই পক্ষকেই বিড়ম্বনায় ফেলবে। আপনি জানেন, অবৈধভাবে দখল করে রাখা জমি পুনরুদ্ধারে দেশে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।'
এদিকে জমি-বিতর্ক প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন আগেই বলেছিলেন, ''আদালতে যাওয়ার কোনোরকম ইচ্ছা আমার নেই। তবে আমার উকিলের চিঠি একবার গিয়েছে। আরেকবার নিশ্চয়ই যাবে।'' শুক্রবার সকালেও তিনি বলেন, ''আমি আদালতে যাচ্ছি না। সেটা ভয়ে যাচ্ছি না, এমনটা যদি উপাচার্য মনে করে থাকেন, তাহলে তার চিন্তাশক্তি নিয়ে আমাদের ভাবার কারণ আছে।''
জমি বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ''উপাচার্য যদি মাথা খাটিয়ে নতুন তথ্য বের করে থাকেন, তাহলে সেটি কোথা থেকে এল, তার জবাব তাঁকেই দিতে হবে।'' তবে বিশ্বভারতীর নতুন করে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জমি-বিতর্ক নিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেছেন, "জমি দখল পুরনো বিষয়...আমাদের অভিযোগ শুধু এই যে, যে দলিলে উনাকে জমি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে স্পষ্ট ১.২৫ একর জমি দেওয়ার কথা লেখা আছে। কিন্তু উনি ১.৩৮ একর নথিভুক্ত করেছেন। ১৩ ডেসিমেল জমি বেশি আছে।"
অমর্ত্য সেন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ এবং নমস্য ব্যক্তি হলেও বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষা করা তাঁর কর্তব্য বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ।
গতকাল উপাচার্যের দাবি ছিল, নোবেল পুরস্কারের দলিল অনুযায়ী ওই পুরস্কার আসলে পাননি অমর্ত্য সেন। কারণ, যে পাঁচটি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, তার মধ্যে অর্থনীতি নেই। অর্থনীতিতে এ পুরস্কার সুইডিশ ব্যাঙ্কের টাকায় এবং নোবেলের স্মৃতিতে দেওয়া। যদিও এ পুরস্কার নোবেল কমিটিই ঘোষণা করে এবং তা দেওয়া হয় অন্যান্য বিষয়ের পুরস্কারের সঙ্গেই।
তবে অমর্ত্য সেনের যে প্রজ্ঞা রয়েছে, তাতে কোনোদিনই তাকে নিছক নোবেল পুরস্কারের আলোয় আলোকিত হতে হয়নি বলে মনে করেন সমাজের বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ। কিন্তু অমর্ত্য সেনের নোবেল-জয়কেও কটাক্ষ করেন উপাচার্য।
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অমর্ত্য সেনের মন্তব্য, "আমার কিছুই বলার নেই। উনি (উপাচার্য) যত ইচ্ছা দাবি করে যেতে পারেন।"
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ