তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ক্ষীণ হয়ে উঠছে উদ্ধারের আশা, মৃতের সংখ্যা ১৫,০০০ ছাড়াল
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ১৫,০০০ ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সর্বশেষ ১৫,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে এ ভূমিকম্পে। এর মধ্যে তুরস্কে মারা গেছে অন্তত ১২ হাজার ৩৯১ জন। আর সিরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৯২ জনের। হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৈরী আবহাওয়া, প্রতিকূল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভারী যন্ত্রপাতি এবং প্রয়োজনীয় রিসোর্সের অভাবে অনেক এলাকায়ই পৌঁছতে পারছেন না উদ্ধারকর্মীরা। জ্বালানি এবং বিদ্যুতের অভাবেও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বিপর্যয়ের জেরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ভূমিকম্পের এই বিপর্যয়ের প্রভাব পড়তে পারে ২৩ মিলিয়ন মানুষের ওপর। সংস্থাটি বলেছে, বেসামরিক ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2023/02/08/2023-02-07t073223z_1129592038_rc276z9wjfgr_rtrmadp_3_turkey-quake.jpg)
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিনের শুরুতে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরে একই দিনে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন আঘাত হানে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আঘাত হানে প্রথম ভূমিকম্পটি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/07/np_file_209147_2.jpeg)
শক্তিশালী এ ভূকম্পনের ধাক্কা টের পাওয়া গেছে সুদূর গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত। গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগ এ তথ্য জানায়।
বেঁচে যাওয়ারা জানিয়েছেন, কম্পন শেষ হতে পুরো ২ মিনিট লেগেছে। ৭.৫ মাত্রার দ্বিতীয় কম্পনটির কেন্দ্রস্থল ছিল কাহরামানমারাস প্রদেশের এলবিস্তান জেলায়।
ভূমিকম্পে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে প্রবল শীতের মধ্যে হাজারো বাস্তুহারা মানুষের দুর্দশা চরমে উঠেছে। হিমেল আবহাওয়া উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে। তার মধ্যে যোগ হয়েছে বৃষ্টির তোড়।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত তুর্কি শহর ওসমানিয়েতে উদ্ধারকাজ বারবার ব্যাহত হচ্ছিল। তারওপর সেখানে ছিলো না কোনো বিদ্যুৎ।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/07/_128545261_whatsappimage2023-02-06at21.12.48-1.jpg)
পুনঃপুন ভূমিকম্পের আতংকে দুর্যোগ অঞ্চলে থাকা লোকজন নিজেদের ঘরে ফিরে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।
ভূমিকম্প তুরস্কের শহরগুলোতে ধবংসলীলা চালিয়েছে, অনেক আবাসিক এলাকাই এখন সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড। অন্যদিকে, যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু লাখ লাখ সিরিয় নাগরিকের দুর্ভোগও উঠেছে চরমে।
সিরিয়ার আত্রায়েব শহরের বাসিন্দা আবদুল সালাম আল-মাহমুদ বলেন, 'এ যেন রীতিমত কেয়ামত। একে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তার সাথে হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত, এই অবস্থায় দুর্যোগ-কবলিত মানুষকে বাঁচাতে হবে।'
এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু মানুষ।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সয়লু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস।
উদ্ধারকারী সংস্থা হোয়াইট হেলমেটসের একজন সদস্য টুইটারে সিরিয়ার একটি শহরের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বলেন, "পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক, সালকিন শহরে দশ হাজার ভবন ধসে পড়েছে।" শহরটি তুর্কি সীমান্ত থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে অবস্থিত।
ভূমিকম্প তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা এবং অন্যান্য শহরেও অনুভূত হয়েছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/06/_128531750_mediaitem128531749.jpg)
বিবিসির প্রযোজক রুশদি আবুয়ালুফ জানান, তিনি যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড ধরে কম্পন অনুভূত হয়েছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2023/02/07/_128532293_turkey_gaziantep_quake4.jpg)
প্রসঙ্গত, তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত।
এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভূমিকম্প আক্রান্তদের উদ্ধার প্রচেষ্টায় বিশেষজ্ঞ দল, স্নিফার ডগ এবং নানা সরঞ্জামাদি পাঠাচ্ছে।
কিন্তু ভূমিকম্পে তুরস্কের তিনটি বিমানবন্দর যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে এসব সহায়তা দুর্গতদের কাছে পৌঁছানোটাও চ্যালেঞ্জিং।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান গতকালই টুইট করে জানান, তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'গভীরভাবে উদ্বিগ্ন'।
তিনি বলেন, "তুর্কি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানিয়েছি যে, আমরা তাদের যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।"
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্কে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে; নেদারল্যান্ডস এবং রোমানিয়া থেকে প্রেরিত উদ্ধারকারীরা ইতিমধ্যেই তাদের পথে রয়েছে। যুক্তরাজ্যও ৭৬ জন বিশেষজ্ঞ, সরঞ্জাম এবং রেসকিউ ডগ পাঠাবে বলে জানিয়েছে।
ফ্রান্স, জার্মানি, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের মতো তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশকেই সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন।
(এটি একটি ডেভেলপিং স্টোরি এবং কিছুক্ষণ পরপর আপডেট করা হচ্ছে)