গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ২০২৪ পর্যন্ত বাড়াতে পারে ভারত
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী দেশ ভারত। তবুও দেশটির বাজারে গমের দাম লাগামে থাকছে না। তাই বর্তমানে ভারতে গম রপ্তানির ওপর চলছে নিষেধাজ্ঞা। সরকারের সূত্র অনুযায়ী, গম রপ্তানির ওপর এ নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও বাড়াতে পারে ভারত।
বর্তমানে গম রপ্তানির ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা আগামী এপ্রিলের মাঝে পুনরায় বিবেচনা করার কথা রয়েছে। ভারতের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী মার্চের শেষে কিংবা এপ্রিলের শুরুতে নিষেধাজ্ঞার সময় আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকারের এক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারত থেকে গম রপ্তানির খুব বেশি সম্ভাবনা নেই।
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে গম রপ্তানিতে ধ্বস নামে। এতে করে হুট করেই ভারত থেকে গম রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে দেশটির স্থানীয় বাজারে বেড়ে যায় গমের দাম। অবস্থা অনুকূলে আনতে গতবছরের মে মাসেই গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। তবুও দেশের বাজারে ঠেকানো যায়নি গমের ঊর্ধ্বগতি।
গত বছর অত্যধিক তাপমাত্রার কারণেও গমের ফলনে ব্যাঘাত ঘটে। তবে চলতি মৌসুমে তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় ফলন গত বছরের তুলনায় ভালো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, "চলতি বছর সরকার গম সংগ্রহের ওপর জোর দিচ্ছে। গম নিয়ে গত বছরের মত একই কাণ্ড ঘটুক, এটা আমরা চাই না।"
সম্প্রতি ভারতজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার রাজনীতিতে ভিন্ন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে লাগাম টানতে না পারলে ক্ষমতাশীল দল বিজেপির জন্য তা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কেননা চলতি বছরের শেষের দিকের রাজ্যসভার নির্বাচনে এর ফায়দা নিতে পারে বিরোধী পক্ষ।
ভারত সরকার বাজারে দামের সমন্বয় করতে আগে থেকেই চাল ও গম কিনে রাখে। কিন্তু গতবছর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত সরকারের গম সংগ্রহের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় ৫৩ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। যার ফলে দেশটিতে সরকার গতবছর মাত্র ১৮.৮ মিলিয়ন টন গম সংগ্রহ করে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারিতে পাওয়া তথ্যমতে, সরকারি গুদামে গমের মজুদ ৪৭.৯ ভাগ পর্যন্ত কমে ১৭.২ মিলিয়নে এসে ঠেকেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের আরেক কর্মকর্তা বলেন, "চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য যতটা বেশি সম্ভব গম কেনা এবং মজুদ তৈরি করা। এতে করে আমাদের একটি স্টক তৈরি হবে এবং দাম কমিয়ে আনার সম্ভব হবে।"
ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০২৩ মৌসুমে ভারতে ১০৫ মিলিয়ন টন চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১১২ মিলিয়ন টন গম উৎপাদিত হবে। গতবছর একই চাহিদার বিপরীতে ৯৫ মিলিয়ন টন গম উৎপাদিত হওয়ায় গমের সংকট দেখা দেয়। যার ফলে প্রতি টন গমের মূল্য জানুয়ারিতে প্রায় রেকর্ড ৩২ হাজার ৫০০ রুপিতে পৌঁছেছিল। তবে চলতি বছর স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি টন গম সরকার প্রায় ২১ হাজার রুপিতে কিনবে।
সূত্র: রয়টার্স