ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার মেয়াদের প্রথম মাসেই আমাজন বন উজাড় কমলো
বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাচিও লুলা ডা সিলভা তার মেয়াদ শুরু করার পর প্রথম মাসেই আমাজন রেইনফরেস্টের ব্রাজিল অংশে বন উজাড়করণের হার ৬১ শতাংশ কমে গিয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগেই পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবারে পাওয়া ব্রাজিল সরকারের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইনপের প্রাথমিক স্যাটেলাইট ডেটা থেকে দেখা যায় গত মাসে ১৬৭ বর্গকিলোমিটার গাছ কাটা হয়েছে, যেটি গত বছরের জানুয়ারি মাসের ৪৩০ বর্গকিলোমিটারের তুলনায় অনেক কম।
তবে বিশেষজ্ঞরা এখনো আশাবাদী নন। লুলার প্রথম মাসে বন উজাড়করণের হার একটি ভালো দিক হলেও অতি-ডানপন্থী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর আমলে আমাজন যে ক্ষতির শিকার হয়েছে, তা ফিরে পেতে বহু সময় নেবে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর ন্যাচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) ব্রাজিল শাখার সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল সিলভা জানান, "জানুয়ারিতে [গাছ কাটার হারের] এই পতন একটি ইতিবাচক দিক। তবে গাছ কাটার যে ট্রেন্ড চলছিলো তা পুরোপুরি উল্টে গেছে তা এখনই বলা যাবে না।"
ডব্লিউডব্লিউএফ-ব্রাজিল এটাও দেখিয়েছে যে সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে গাছ কাটার পরিমাণ বেড়ে যায়, যেটি শুরু হয় জুন মাসে।
একই প্রতিষ্ঠানের আরেকজন বিশেষজ্ঞ ফ্রেডেরিকো মাকাডো জানান, "আন্তর্জাতিক পরিবেশ রক্ষার নেতৃত্বে পুনরায় ফেরার জন্য ব্রাজিলকে খুব দ্রুত বন উজাড়করণ এবং দাবানল নিষিদ্ধকরণ ও নিয়ন্ত্রণ করার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে।"
অক্টোবর মাসে বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলার কাছে খুব কম ব্যবধানে হারেন বলসোনারো। তার আমলে প্রচণ্ড হারে বেড়ে যায় বন উজাড়করণের হার। কমতে থাকা ব্রাজিলের আমাজন অংশে আরও মাইনিং এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের দিকে জোর দিয়েছিলেন তিনি।
পরিবেশবাদী এবং আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাজনের বন ধ্বংস এবং সোনা মাইনিং করা বা আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার চালানোর মতো অবৈধ কাজের জন্য বলসোনারো প্রশাসনের নীতিকে দায়ী করেছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাতের আগে সাম্প্রতিক বন উজাড়করণের ডেটা প্রকাশিত হয়। এর আগেও ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন লুলা।
এই দুই নেতা গণতন্ত্র, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেছেন। লুলা প্রতিজ্ঞা করেছেন আমাজনে গাছ কাটার হার একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনবেন। 'পৃথিবীর ফুসফুস' হিসেবে পরিচিত আমাজনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই অবস্থিত ব্রাজিলে।
ওভাল অফিসে মিটিংয়ের আগে লুলাকে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেন, "আমাদের দুই দেশের জনগণের একই ধরনের আদর্শ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক আমাদেরকে একইজায়গায় নিয়ে এসেছে, তবে বিশেষভাবে যেটি নিয়ে এসেছে সেই হলো জলবায়ু সংকট। ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট আমাদের সহযোগিতা টিকিয়ে রাখতে আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য। এটি উভয় দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমার মনে হয়, এটা পুরো বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।"
রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, বাইডেন- লুলার এই সাক্ষাতের পরপরই আমাজন সংরক্ষণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি ফান্ড গঠনের ঘোষণা আসবে, যেখানে অনুদান দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও ব্রাজিল প্রশাসনের অধীনে থাকা আমাজন ফান্ড, যেটি মূলত জার্মানি ও নরওয়ের আর্থিক সহায়তায় চলে, সেটিও পরিবেশ মন্ত্রী মেরিনা সিলভা গত মাসে দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে পুনরায় চালু করেন। ২০১৯ সাল থেকে বলসোনারো সরকার এই ফান্ড বন্ধ করে রেখেছিল।
জানুয়ারির শেষদিকে জার্মানির উন্নয়নমন্ত্রী স্ফেনিয়া শুলসে ঘোষণা করেন যে, জার্মানি ৩৮ মিলিয়ন ডলার আমাজন ফান্ডে দান করবে। লুলার প্রশাসন 'বন রক্ষা এবং সেখানে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করবে' বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আমাজন ফান্ড ছাড়াও অনুর্বর হয়ে পড়া জমি উর্বরের জন্য কম সুদে কৃষকদের কাছে ৮৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং আমাজন অঞ্চলে থাকা প্রদেশগুলোতে ৩৪ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জার্মানি।
বছরের শুরু ইতিবাচকভাবে হলেও ব্রাজিলের পরিবেশগত এজেন্সি ইবামার বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা জানান, বলসোনারো পরিবেশ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে হারে কর্মী ছাঁটাই করেছেন এবং অর্থ বরাদ্দ কমিয়েছেন, সেটি ঠিক করতে হলে বহু বছর সময় লেগে যাবে।
তবে ব্রাজিলের নতুন প্রশাসন ইতিমধ্যেই আমাজনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকেই কর্তৃপক্ষ বন থেকে অবৈধ গোল্ড মাইনারদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য অভিযান চালায়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে সোনা মাইনিং করার চেষ্টা করেছিল তারা। আদিবাসী ইয়ানোমামিদের ওপর অত্যাচার চালানোসহ তাদের স্বাস্থ্যের ওপর হুমকিস্বরূপ কাজ চালানোর অভিযোগও পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে।
সূত্র: আল জাজিরা