ভারতের পক্ষে এশিয়ান প্রজাতির চিতা ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব হবে না!
শিকারীদের দৌরাত্ম্য ও আবাসস্থল সংকটের কারণে প্রায় ৭০ বছর আগেই ভারত থেকে চিতা বিলুপ্ত হয়েছে। স্থলভাগের দ্রুততম প্রাণীটির অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চুক্তির আওতায় চিতা আনছে দেশটি। সম্প্রতি এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ভিনসেন্ট ভ্যান ডের মারউই নামক এক পশুচিকিৎসক জানান, ভারতের পক্ষে এশিয়ান প্রজাতির চিতা ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব হবে না। খবর দ্য ইকোনমিক টাইমসের।
বিশ্বে বর্তমানে দুই ধরনের চিতা রয়েছে। একটি এশিয়ান প্রজাতির এবং অপরটি আফ্রিকান প্রজাতির। আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে আফ্রিকান প্রজাতির চিতা পাওয়া গেলেও এশিয়ান চিতার রয়েছে তীব্র সংকট।
একটা সময় ছিল যখন পুরো এশিয়া জুড়েই এশিয়ান চিতার উপস্থিতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে একমাত্র ইরানে অল্প কয়েকটি এশিয়ান চিতা টিকে আছে। সংখ্যার হিসেবে ইরানে এ এশিয়ান চিতার সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ এর বেশি হবে না।
পশু বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট আফ্রিকা থেকে ভারতে চিতা আনার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এ পশু বিশেষজ্ঞ বলেন, "ভারতের জন্য এশিয়ান প্রজাতির চিতা আনা অসম্ভব। কেননা এগুলো সংখ্যায় খুব অল্প।"
"হয়তো একদিন আমরা এশিয়ান চিতার অস্তিত্ব রক্ষায় সমর্থ হব। এ চিতাগুলো দেখতে খুবই ব্যতিক্রম। কিন্তু বর্তমানে এশিয়ান প্রজাতির চিতা তীব্র অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে," বলেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন ভিনসেন্ট।
আজ (শনিবার) ভারতের গোয়ালিওর এয়ার বেইজে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানিকৃত চিতাগুলো পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
প্রেরণকৃত চিতাগুলো সম্পর্কে পশু চিকিৎসক ভিনসেন্ট আরও বলেন, "আমরা আমাদের সেরা চিতাগুলোই ভারতে পাঠাচ্ছি। সেখানে চিতাগুলোকে সিংহ, নেকড়ে ও ভাল্লুকের মত বহু হিংস্র জন্তুর মোকাবেলা করতে হবে। প্রেরণকৃত চিতাগুলো ভালো করে জানে যে, সিংহের মুখোমুখি হলে এদের ঠিক কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে।"
যেহেতু চিতা স্থলভাগের সবচেয়ে দ্রুততম প্রাণী, তাই উল্টোদিকে দৌড় দিলে প্রাণীটিকে ধরার সামর্থ্য অন্য প্রাণীদের নেই।
প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক পশু চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান টরডিফ ভারতে চিতা প্রেরণের প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত থাকায় এ সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, "প্রথমে চিতাগুলোকে শান্ত করে ভ্যাক্সিনেশন ও মেডিক্যাল কার্যাবলী সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা যখন কোন প্রাণীকে অন্য দেশে পাঠাই তখন ঐ দেশের জীববৈচিত্র্যে যাতে নতুন করে কোন রোগ-বালাই প্রতিস্থাপিত না করি সেদিকে নজর রাখা হয়।"
"একইসাথে যে প্রাণীগুলো আমরা ভারতে পাঠাচ্ছি সেগুলো যেন নতুন পরিবেশে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে চিতা আনার সাথে যুক্ত ভারতের প্রতিনিধি দলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন টরডিফ। এ পশু চিকিৎসক বলেন, "মানব ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার্থে ভারতের যে ভূমিকা, আমরা (দক্ষিণ আফ্রিকা) সেখান থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারি। ভারতে প্রাণীগুলোকে মুক্ত পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেখানে খোলা পরিবেশেই প্রাণীগুলো ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় মুক্ত পরিবেশে প্রাণীগুলোকে সংরক্ষণ করতে আমরা ভয় পাই।"
শেষে টরডিফ ভারতের পশু সংরক্ষণের সার্বিক যে উদ্যোগ, সেটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "ভারতে আমার সহকর্মীরা বাঘ সংরক্ষণে দুর্দান্ত কাজ করেছে। ভারতে বাঘের সংখ্যা গত ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে।"
গতবছর দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া থেকে ভারত মোট ৮টি চিতা আমদানি করেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, দেশটি প্রতি বছর ভারতকে ১২টি করে মোট ১০০টি চিতা দেবে।
প্রথমে নামিবিয়া ও পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতা আমদানির মাধ্যমে ভারতে চিতার বাসস্থান তৈরির পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানিকৃত চিতাগুলো ভারতের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেবেন বলে আশাব্যক্ত করেন দেশটির বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের ইন্সপেক্টর জেনারেল ডক্টর অমিত মল্লিক।