একা একা আর ঘোরা যাবে না নেপালের পাহাড়ে, ১ এপ্রিল থেকে নিষেধাজ্ঞা
সলো ট্রেকিং বা একা একা নেপালের পাহাড়ে ঘুরে অ্যাডভেঞ্চারের দিন বুঝি ফুরিয়ে এলো! সাথে একজন করে গাইড থাকলে, তবেই 'ব্যাকপ্যাকার'রা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দেশটির পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। নতুন এ নিয়ম কার্যকর হতে চলেছে এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে। খবর এক্সপ্লোরার্স ওয়েবের।
২০১২ সাল থেকেই এমন নিয়ম চালুর কথা শোনা যাচ্ছিল। সে বছর দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে বিদেশ নাগরিকেরা হামলার শিকার হলে এ ধরনের একটি ঘোষণা দেয়ার উদ্যোগ নেয় নেপাল। যদিও পরে তা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অবশেষে এ বসন্তে সত্যিই নেপাল এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে।
"প্রতি বছর অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন ট্রেকার নিখোঁজ হয়, যাদের বেশিরভাগই স্বতন্ত্র (ফ্রি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ট্রেকার)। এটি একটি গুরুতর সমস্যা," নেপালের ট্রেকিং এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নীলহরি বাস্তোলা কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন।
এদিকে নেপালের পর্যটন বোর্ডের পরিচালক মণিরাজ লামিছানে হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, "এই সিদ্ধান্ত পর্যটকদের সুবিধার জন্যই। সলো ট্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে পর্যটকরা প্রায়ই হারিয়ে যায় এবং নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে পারে। এটি কাটিয়ে উঠতেই আমরা সলো ট্রেক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে এসেছি।"
তবে, স্থানীয় অপারেটররা জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা সবচেয়ে জনপ্রিয় এভারেস্ট অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
টিআইএমএস কার্ডস
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড ঘোষণা করেছে, গাইড সাথে না থাকলে সলো ট্রেকারদের জন্য তারা টিআইএমএস (ট্রেকারস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) কার্ড অনুমোদন করবে না।
নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ইস্যুকৃত এই কার্ডটি কাঠমান্ডু, পোখারা সহ দেশটির অন্যান্য শহরের ট্যুরিস্ট সার্ভিস সেন্টারগুলোতে ্মিলবে।
ট্রেকিং ইচ্ছুকদের অবশ্যই তাদের পাসপোর্টের ফটোকপি, নিজস্ব ছবি এবং ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্সের কাগজপত্র প্রদান করতে হবে। এছাড়াও একটি দলের আন্তর্জাতিক ট্রেকারদের এক হাজার নেপালি রুপি (প্রায় ৭ ডলার) ফি দিতে হবে। এতোদিন সলো ট্রেকাররা প্রতি রুটে দুই হাজার রুপি ফি দিতেন।
এশিয়ান ট্রেকিংয়ের দাওয়া স্টিভেন শেরপা জানান, এসব নিয়ম এভারেস্ট অঞ্চলের জন্য নয়। টেকনিক্যালি এভারেস্টের জন্যও টিআইএমএস কার্ড পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেখানকার স্থানীয় পৌরসভা বেশ কয়েক বছর আগেই এ নিয়ম প্রত্যাখ্যান করেছে; তারা বরং এক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব ফি'র আরোপ করেছে, যে অর্থ পরে ব্যয় হয় ট্রেইল এবং অবকাঠামো ঠিক রাখার পেছনে।
সুতরাং যারা এভারেস্টের আশেপাশে সলো ট্রেক করতে চায়, তাদের লুকলায় গিয়ে আলাদা মিউনিসিপ্যাল ফি দিতে হবে। এরপর শুধু সাগরমাথা ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশমূল্য পরিশোধ করতে হবে।
কেন মানুষ একা ট্রেকিং করতে পছন্দ করে
নেপালে সলো ট্রেকিং খুবই কমন, বিশেষ করে খুম্বু ট্রেইলে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প এবং অন্নপূর্ণা অঞ্চলে। কেউ অন্নপূর্ণার দক্ষিণ পাশের বেস ক্যাম্পে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ সারে, আবার একটু 'হার্ডকোর ট্রেকার' রা থরোং লা পাস অতিক্রম করে। এই ট্রেইলগুলো পরিষ্কার; থাকার জায়গা, খাবারের রেস্তরাঁ এমনকি ওয়াইফাই সুবিধা সম্পন্ন।
কোভিড অভিঘাত থেকে নেপালের পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধারের পর গত বছর ১৯ হাজার ৪১৫ জন সলো ট্রেকার নিবন্ধন করেছিল বলে জানায় কাঠমান্ডু পোস্ট।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার নিবন্ধে এসব সলো ট্রেকারদের 'খরচ সচেতন ভ্রমণকারী' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে শুধু অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই পাহাড়ি পথে মানুষ একা ভ্রমণ করে না, অনেকেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা স্বাধীনভাবে অন্বেষণের জন্যও সলো ট্রেকিং বেছে নেয়।
তবে নেপালে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো, কোনো এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত গ্রুপের অধীনে ট্রেকিং করা।
নীলহরি বাস্তোলা জানান, সাধারণত দিনপ্রতি একজন গাইড ২৫ থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত নিয়ে থাকে ট্যুরিস্টদের কাছ থেকে। তবে দীর্ঘ এবং কঠিন ট্রেকিং রুটে এটি ১০০-২০০ ডলারেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে মধ্যস্থতা বা দর কষাকষির পথ খোলাই থাকে সব সময়।