ইরানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করায় যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ভূখণ্ডে থাকা ইরানের কোম্পানিগুলোর সম্পদ অবৈধভাবে বাজেয়াপ্ত করেছে বলে রায় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত।
'বিশ্ব আদালত' হিসেবেও পরিচিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালত অবশ্য বৃহস্পতিবার তাদের রায়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ঘোষণা করেনি, তবে জানিয়েছে পরবর্তী ধাপে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে তেহরানের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা হলো নিউ ইয়র্কের সিটি ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে বাজেয়াপ্ত সম্পদ হিসেবে আটকে থাকা ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেটির ব্যাপারে কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়েছে আদালতটি। এটিই আদালতে তেহরানের দাবি করা সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল।
১৯৫৫ সালে দুই দেশের মধ্যে করা একটি চুক্তি ভঙ্গের দায়ে ২০১৬ সালে তেহরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই মামলা করে। গত বছরের শুনানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যে, এই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিৎ কারণ ইরান 'নোংরা কাজের' সাথে জড়িত। একইসাথে এই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হলো 'সন্ত্রাস'কে স্পন্সর করার ফল। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে ১৯৮৩ সালে লেবাননের বোমা হামলাসহ অন্যান্য যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমগুলোর সাথে ইরানের সংযোগ রয়েছে, সেগুলোর ভিক্টিমদেরকে সাহায্য করতে এই বাজেয়াপ্ত অর্থ ব্যবহার করা হবে।
বৃহস্পতিবার এই যুক্তিকে সম্পূর্ণ বাতিল করে আন্তর্জাতিক আদালত জানিয়েছে, ইরানের ইসলামিক বিপ্লব হওয়ার অনেক আগেই হওয়া দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি বৈধ। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে থাকা শাহের পতন এবং বিপ্লবের পর নতুন সরকার আসার ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি থেকে বের হয়ে আসার ঘোষণা দেয়।
তবে আন্তর্জাতিক আদালত জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে তখনও তারা ইরানের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল, যার অর্থ তারা চুক্তিভঙ্গ করেছে। তবে 'ব্যাংক মারকাজি' নামে পরিচিত ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় সেটি এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়, এবং এ ব্যাপারে কোনো কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়েছে তারা।
ইরান জানিয়েছে আদালত তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবি এবং যুক্তরাষ্ট্রের 'অবৈধ' কার্যকলাপের প্রমাণ দেখিয়েছে। তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, "মার্চের ৩০ তারিখে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় আবারো ইরানের অবস্থানের বৈধতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের 'অবৈধ ব্যবহার'কে সবার সামনে উন্মোচন করেছে।"
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এই রায়কে 'বিশাল জয়' হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত আইনি উপদেষ্টা রিচার্ড ভিসেক বলেছেন, "ইরানের মামলার বেশিরভাগ অংশই আন্তর্জাতিক আদালত খারিজ করে দিয়েছে, যার মধ্যে ব্যাংক মারকাজির হয়ে ইরানের দাবিটিও রয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের স্টেট-স্পন্সরড সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিকটিমদের জন্য বড় জয়।"
এই রায় অবশ্য বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করতে পারবে না আন্তর্জাতিক আদালত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয়েই এর আগে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অগ্রাহ্য করেছে।
সূত্র: আল জাজিরা