ইয়েমেনে পদদলিত হয়ে অন্তত ৮৫ জন নিহত, আহত ৩০০ জনেরও বেশি
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় পদদলিত হয়ে অন্তত ৮৫ জন নিহত এবং তিন শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম এবং হুথি কর্মকর্তারা। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানী সানার একটি স্কুলে জনপ্রতি ১০ ডলার অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পর সেই অর্থ পাওয়ার আশায় গত বুধবার রাতে প্রচুর লোক জমায়েত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আবদেল-রহমান আহমেদ এবং ইয়াহিয়া মোহসেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সিকে জানান যে, সশস্ত্র হুথিরা ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য আকাশে গুলি চালায়। সে সময় একটি বৈদ্যুতিক তারে গুলি লেগে বিস্ফোরণ হয় এবং অনুদানের জন্য অপেক্ষা করা ব্যক্তিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
হুথিদের আল মাসিরাহ টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, দেহগুলো নিচে পড়ে আছে এবং তার ওপর দিয়েই অন্য ব্যক্তিরা অন্যদিকে পালানোর চেষ্টা করছেন।
রাজধানী নিয়ন্ত্রণ করা হুথিদের প্রকাশ করা ফুটেজ থেকে রক্তের দাগ, জুতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পোশাক মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়, যেগুলো তদন্তকারীদের একটি দল পরীক্ষা করছেন।
একজন হুথি নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই ঘটনায় কমপক্ষে ৮৫ জন নিহত এবং ৩২২ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক হামদান বাগেরি জানান, আহতদের মধ্যে অন্তত ৭৩ জনকে সানার আল-থাওরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনকে খুঁজে বের করার জন্য হাসপাতালে ছুটে আসছে।
সানায় থাকা আল জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ আল আত্তাব জানান, এই বিপর্যয় 'দেশব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে'।
হুথি-নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার আবদেল-খালেক আল-আঘরি ঘটনাটিকে 'দুঃখজনক' বলে বর্ণনা করেছেন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় ছাড়াই তহবিলের 'এলোমেলো বিতরণ'-কে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন।
এই অনুষ্ঠানের আয়োজনকারী দুই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হুথিরা ঘোষণা করেছে যে, তারা ক্ষতিপূরণ হিসাবে নিহতদের পরিবারকে প্রতি নিহত ব্যক্তির জন্য ২০০০ ডলার প্রদান করবে, এবং আহতরা ৪০০ ডলার করে পাবে।
২০১৪ সালে ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেয় হুথি বিদ্রোহীরা। এর এক বছর পর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হস্তক্ষেপ করে।
এখনো পর্যন্ত যোদ্ধা এবং বেসামরিক নাগরিক সহ দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ এই সংঘাতে নিহত হয়েছে, যা বিশ্বের অন্যতম বড় মানবিক বিপর্যয়।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয় সম্পর্কিত অফিস অনুযায়ী, ইয়েমেনের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি তথা ২১ মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তির সহায়তা এবং সুরক্ষা প্রয়োজন।