চে গুয়েভারাকে গ্রেপ্তার করা বলিভিয়ান জেনারেল মারা গেছেন
কিউবান বিপ্লবী আর্নেস্তো চে গুয়েভারাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন বলিভিয়ান জেনারেল গ্যারি প্রাডো সালমন। নিজ দেশে 'জাতীয় বীর' হিসেবে পরিচিত এই জেনারেল স্থানীয় সময় শনিবার (৬ মে) ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। জেনারেল প্রাডোর ছেলে গ্যারি প্রাডো আরাউজ এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।
১৯৬৭ সালে গ্যারি প্রাডোর নেতৃত্বেই বলিভিয়ায় সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল। মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সহযোগিতায় করা এই অভিযানে চে গুয়েভারার নেতৃত্বে থাকা কমিউনিস্ট বিদ্রোহী দলটি পরাজিত হয়।
সে সময়ে বলিভিয়ায় ডানপন্থী সামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। গ্যারি প্রাডোর নেতৃত্বে গ্রেপ্তারের পর মারিও তেরান নামের বলিভিয়ান আরেক সেনা কর্মকর্তার গুলিতে নিহত হন গুয়েভারা। মহান এ বিপ্লবীকে হত্যা করা ওই সেনা কর্মকর্তা গত বছর মৃত্যুবরণ করেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চরম স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র তখন লাতিন আমেরিকায় চে গুয়েভারার মতো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী নেতাদের নিয়ে বেশ উদ্বেগে ছিল।
১৯৫৯ সালে কিউবায় সফল বিপ্লবের পর আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করা চে অন্য দেশগুলোর গেরিলা কার্যক্রমেও অংশ নিতে থাকে। আরেক কিউবান কিংবদন্তি নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।
জেনারেল প্রাডোর ছেলে বাবাকে 'একজন অসাধারণ মানুষ' হিসেবে উল্লেখ করেন। একইসাথে মৃত্যুর আগে তিনি সততা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বহু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন বলেও জানান।
ষাটের দশকে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্টদের জন্য বিপ্লবের প্রতীকে পরিণত হয় চে গুয়েভারা। ওই সময়ে তার বিদ্রোহী গ্রুপটিকে পরাজিত করে বলিভিয়ান সামরিক সরকারকে রক্ষা করার জন্য গ্যারি প্রাডোকে 'জাতীয় বীর' হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
মেরুদণ্ডে গুলি লাগার কারণে ১৯৮১ সালে পায়ে হেঁটে চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন জেনারেল প্রাডো। তখন থেকেই হুইলচেয়ারের সাহায্য নিয়ে চলাচল করতেন তিনি। ১৯৬৭ সালের জয় নিয়ে এই জেনারেল 'হাউ আই ক্যাপচারড চে' শীর্ষক একটি বইও লিখেছেন।
বাবার সম্পর্কে জেনারেল প্রাডোর ছেলে বলেন, "চে গুয়েভারাকে গ্রেপ্তার করাই আমার বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন নয়। বরং তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে একটি একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। যে প্রতিষ্ঠান দেশের সংবিধান ও আইনকে শ্রদ্ধা করবে।"
বলিভিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী লা পাজ থেকে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত লা হিগুয়েরা গ্রামে চে গুয়েভারাকে হত্যা করা হয়। ১৯৯৭ সালে এ বিপ্লবীর কবরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় এবং কিউবায় ফিরিয়ে এনে পুনরায় সমাহিত করা হয়।