প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। আজ সোমবার (৮ মে) সন্ধ্যায় কলকাতায় তার মৃত্যু হয়েছে।
ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই ভুগছিলেন তিনি।
২৫ এপ্রিল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তবু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন কখনও কখনও।
গত দশ বছরের বেশি সময় ধরেই ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) সমস্যা ছিল সমরেশ মজুমদারের। সেই সমস্যার চিকিৎসাও হত। কখনও কখনও বাড়াবাড়িও হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় সমরেশ মজুমদারের মেয়ে দোয়েল সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার আগের দু'দিন কেবিনে রাখা হয়েছিল প্রখ্যাত সাহিত্যিককে। কিন্তু, শনিবারই বিকেলে তাঁকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা পরের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখবেন বলেছিলেন। রোববার পরিবারের সূত্রে জানানোও হয়, কিছুটা ভালো আছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও শেষরক্ষা হল না। তার মধ্যেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সমরেশ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সমরেশ মজুমদারের। ১৯৬০ সালে আসেন কলকাতায়। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার বিখ্যাত স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স। কর্মজীবনে যুক্ত ছিলেন আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড- এর সঙ্গে।
গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তার আসক্তি ছিল প্রবল। তার প্রথম গল্প "অন্যমাত্রা" লেখা হয়েছিল মঞ্চনাটক হিসেবে। লেখকজীবনের শুরু সেখান থেকেই। দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে অন্যমাত্রা গল্পটি ছাপা হয়েছিলো। তার প্রথম উপন্যাস "দৌড়"। এটিও ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকাতে ১৯৭৫ সালে। শুধু গল্প বা উপন্যাস নয়, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনিতে সমরেশ মজুমদারের জুড়ি মেলা ভার।
বাংলা সাহিত্যজগতে সমরেশ মজুমদারকে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয় তার ট্রিলজি- 'উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ'। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
অনেক অসাধারণ লেখনীর এই রূপকার ভারতের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড।