গাজীপুরে পৃথক কারাগারে দুই বন্দির মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/11/gazipur_jail_68088.jpg)
গাজীপুরের দুটি কারাগারে পৃথক ঘটনায় দুই বন্দির মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে গাজীপুর জেলা কারাগারে এবং অপর জনের মৃত্যু হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ এ। এর মধ্যে এক কয়েদির মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর জেলা কারাগার এবং কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এ এই ঘটনা দুটি ঘটেছে।
গাজীপুর জেলা কারাগারে মারা যাওয়া কয়েদির নাম ওমর ফারক (৩৩)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া থানাধীন টোকা ইউনিয়নের বীর উজ্জলী গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট ১ এ মারা যাওয়া কয়েদির নাম দুলাল উদ্দিন (৫২)। তিনি কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের কেন্দুয়াব গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে।
কারা সূত্র জানায়, ওমর ফারুক ২০১৯ সালের কাপাসিয়া থানার একটি মামলায় দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত আাসামি। সম্প্রতি তিনি কারাগারের ভেতরে এক কারা কর্মকর্তাকে মারধর করার কারণে আরও এক মামলায় আসামি ছিলেন।
অপরদিকে, দুলাল উদ্দিন কাপাসিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে কাশিমপুর কারাগারর পার্ট-১ এ বন্দী ছিলেন।
গাজীপুর জেলা কারাগারে ওমর ফারুকের মৃত্যু
গাজীপুর জেলা কারাগার সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোররাতে কারাগারের একটি সেলে বন্দি থাকা অবস্থায় ওমর ফারুক সেলের গরাদের সঙ্গে কম্বল পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি কারারক্ষীরা টের পেয়ে ওমর ফারুককে উদ্ধার করে প্রথমে কারা অভ্যন্তরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসক তার মৃত্যু সনদে 'ব্রট ডেথ' বলে উল্লেখ করেছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের একটি মামলায় ওমর ফারুকের দুই বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়। তিনি চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন। ২৯ জানুয়ারি কারাগারের ভেতরে কেইস টেবিলে সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর ফয়েজ উদ্দিনের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করেন। এই ঘটনায় গাজীপুর সদর থানায় তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়।
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেলার রফিক কাদের কয়েদির মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।'
কাশিমপুরে দুলালের মৃত্যু
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ এ দুলাল উদ্দিন নামে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী গতরাত ১১টায় বুকের ব্যাথা অনুভব করেন। তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ এর জেলার তরিকুল ইসলাম বন্দী মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, 'দুলাল মিয়া কাপাসিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। বেশ কয়েকবার তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে। সর্বশেষ তিনি গত ১৮ জানুয়ারি এই কারাগারে আসেন।'
তিনি আরও বলেন, 'সোমবার রাত ১১ টার দিকে তিনি বুকে ব্যাথা অনুভব করলে প্রথমে কারা হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত গাজীপুর তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা আক্তার বলেন, 'দুই কয়েদির মৃত্যুর পর তাদের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
তদন্ত কমিটি গঠন
এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত এক পত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার আল মামুন, কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।