মাত্র ১৪ বছর বয়সে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সে চাকরি পেল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান
মাত্র ১৪ বছর বয়সে মার্কিন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর কাইরান কাজী। স্পেসএক্স-এর 'প্রযুক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জিং কিন্তু মজার' সাক্ষাৎকার পর্ব সফলভাবেই উৎরে গিয়েছে কাইরান। খবর লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস- এর।
সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরপরই সে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করা শুরু করবে।
স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক টিমে যোগদানের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত কাইরান বৃহস্পতিবার লিংকডইনে লিখেছে, সে 'বিশ্বের সবচেয়ে সেরা কোম্পানির' স্টারলিংক ইঞ্জিনিয়ারিং টিমে যোগ দিতে যাচ্ছে। কাইরান আরও লিখেছে, স্পেসএক্স সেই সব 'বিরল' কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি যারা কিনা তার বয়সের মতো পুরনো মানদন্ড দিয়ে তার সক্ষমতা ও পরিপক্কতা বিবেচনা করেনি। উল্লেখ্য যে, স্টারলিংক স্পেসএক্স-এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান।
মাত্র দুই বছর বয়স থেকেই নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করে কাইরান। ওই বয়সেই সে পূর্ণাঙ্গ বাক্যে কথা বলতে পারতো। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে শোনা গল্প বন্ধুদেরকে বলে তাদেরকে এবং শিক্ষকদেরও মুগ্ধ করেছে কাইরান। ৯ বছর বয়সে তার মনে হলো যে তার স্কুলের পড়াশোনা তাকে খুব একটা এগিয়ে নিচ্ছে না। তখন তার পেডিয়াট্রিশিয়ান (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ) এবং তার মা-বাবা ও শিক্ষকরা সবাই একমত হলেন যে কাইরান উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত।
কাইরান ইন্টেল ল্যাবস-এ একজন এআই রিসার্চ কো-অপ ফেলো হিসেবে ইন্টার্নশিপ করে এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে সে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হয়।
কিন্তু ওই বয়সে কাইরানকে কলেজে ভর্তি করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তার মা-বাবাকে। শেষ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার লিভারমোরে লাস পজিটাস কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় সে। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই কিশোর তৃতীয় গ্রেডের পড়াশোনা বাদ দিয়ে এক লাফেই কমিউনিটি কলেজের পড়াশোনায় চলে যায় এবং সেখানে পড়ালেখার চাপ দেখে তার মনে হয় এটাই তার শিক্ষার জন্য উপযুক্ত স্থান।
পরবর্তীতে সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটিতে 'ট্রান্সফার শিক্ষার্থী' হিসেবে যাওয়া কাইরান বলে, "আমার মনে হয়েছিল, অবশেষে আমি ঐ পর্যায়ের লেখাপড়া করতে পারছি, শিখতে পারছি; যার জন্য আমি সত্যিই যোগ্য ছিলাম।"
কাইরান কাজীর লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্যানুসারে, গত বছর সে ব্ল্যাকবার্ড ডট এআই নামের এক সাইবার ইন্টেলিজেন্স ফার্মে চার মাস মেশিন লার্নিংয়ের ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করে। সেখানে সে সামাজিক মাধ্যমের আধেয় ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা শনাক্তের পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি তৈরি করে।
ফ্রেশারস লাইভ সূত্রে জানা যায়, কাইরান কাজীর জন্ম ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়াতে। কাইরান জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান। তার বাবার নাম মুস্তাহিদ কাজী এবং মা জুলিয়া কাজী।
এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে যোগদানের চিঠি হাতে পেয়ে গেলেও, কাইরান জানায়, তার এখনও কিছু কিছু বিষয়ে কমতি রয়েছে। যেমন, হাতের লেখা, বানান এবং নোট নেওয়ার মতো কাজগুলো। বিদেশি ভাষা শেখাও তার কাছে একটি চ্যালেঞ্জ।
কাইরান জানিয়েছে, সে তার মা-বাবার কাছ থেকে বাংলা ভাষা এবং শিক্ষক মিস ভিয়েনার নির্দেশনা অনুযায়ী মান্দারিন ভাষা শিখছে। সে তার ভাষা শেখার এই প্রচেষ্টার জন্য সবার শুভ কামনা চেয়েছে।
কাইরান কাজীর বাবা মুস্তাহিদ কাজী একজন সাবেক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কাইরানের কোনো ভাই-বোন নেই, সে তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান।
জানা যায়, অবসর সময়ে কাইরান ভিডিও গেমস খেলতে পছন্দ করে, যেমন- 'অ্যাসাসিন'স ক্রিড' এর মতো ঐতিহাসিক ফিকশনধর্মী সিরিজ। এছাড়াও সে ফিলিপ কে ডিক এর সাই-ফাই ছোটগল্প এবং সাংবাদিক মাইকেল লুইসের লেখা পড়তে পছন্দ করে।
কাইরান তার নিজের জীবনের গল্প বলতেও পছন্দ করে, কারণ ১৪ বছরের জীবনে নিজের বুদ্ধিমত্তা ও নিজের চরিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে মানাতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।
কাইরানের লিংকডইন বায়ো বলছে, সে এমন একটা ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখে যা 'চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো মোকাবিলা করে এবং সাধারণের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে'।
সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার আগেআগেই স্পেসএক্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে গিয়েছে কাইরান। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যাজুয়েট হিসেবেও ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে এই কিশোর। জানা গেছে, স্পেসএক্স-এ কাজ শুরু করার জন্য মায়ের সঙ্গে প্লেজেন্টন থেকে ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে চলে আসবে কাইরান।
এবছরের শুরুর দিকে কাইরান তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছিল যে সে একটি 'বড় ধরনের' চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ পরেই সে স্পেসএক্স থেকে জব একসেপ্টেন্স চিঠির স্ক্রিনশট পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায়।