টাইটানিক দেখতে গিয়ে পর্যটকবাহী সাবমেরিন নিখোঁজ, অনুসন্ধান চলছে
আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আগ্রহী পর্যটকদের নিয়ে একটি ট্যুরিস্ট সাবমেরিন নিখোঁজ হয়েছে। রোববার এ ঘটনার পরপরই নিখোঁজ সাবমেরিনটির সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির।
ইউএস কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, রবিবার সাবমেরিনটি আটলান্টিক মহাসাগরে ডুব দেওয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরে ছোট আকারের এই ডুবোযানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ট্যুর ফার্ম ওশানগেট জানিয়েছে, সাবমেরিনে থাকা পাঁচজনকে উদ্ধারের জন্য সকল বিকল্প পন্থা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
আটলান্টিকের তলদেশে ৩৮০০ মিটার (১২,৫০০ ফুট) গভীরে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখতে আট দিনের ট্রিপের জন্য পর্যটকদের খরচ করতে হয় ২৫০,০০০ ডলার।
সরকারি সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নৌবাহিনী এবং গভীর সমুদ্রে কাজ করে এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল থেকে প্রায় ৪৩৫ মাইল (৭০০ কিলোমিটার) দূরে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান রয়েছে। যদিও উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন থেকে।
হারিয়ে যাওয়া ডুবোজাহাজটির নাম 'টাইটান'। এই সাবমেরিনে পাঁচজন মানুষ ভ্রমণ করতে পারেন। সাধারণত চারদিনের জরুরি অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে এটি সাগরের তলদেশে ভ্রমণ করে।
সোমবার বিকালে ইউএস কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মোগার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "ধারণা করছি, আমাদের হাতে ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৯৬ ঘণ্টা সময় আছে।"
তিনি আরও বলেন, দুটি এয়ারক্রাফট, একটি সাবমেরিন এবং একটি সোনোবয় সাবমেরিনটি খোঁজার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু অঞ্চলটি 'দুর্গম' হওয়ায় তল্লাশি অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
জন মোগার জানান, উদ্ধারকারী দলগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিখোজ পর্যটকদের নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য।
নিখোঁজ সাবমেরিনে থাকা পাঁচজনের মধ্যে একজন ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ও অনুসন্ধানকারী হ্যামিশ হার্ডিং। তার পরিবার সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
সপ্তাহান্তে হ্যামিশ হার্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, তিনি 'গর্বভরে জানাচ্ছেন' যে অবশেষে তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার মিশনে যুক্ত হতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি এও জানান যে, "নিউফাউন্ডল্যান্ডে গত ৪০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বাজেভাবে শীত পড়েছে। সম্ভবত এই মিশনটিই হতে যাচ্ছে ২০২৩ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে প্রথম পর্যটকবাহী মিশন।"
পরবর্তীতে হ্যামিশ আরও লেখেন, "খারাপ আবহাওয়ার মাঝেও একটা ভালো সুযোগ পাওয়া গেছে, তাই আগামীকালই আমরা সাগরের তলদেশে যেতে পারি।"
এদিকে ওশানগেট জানিয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন সাবমেরিনে থাকা ক্রু সদস্য ও তাদের পরিবারের দিকে। যেসব সরকারি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান এই উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এবছর তাদের একটি অভিযান চলছে এবং সামনের বছরের জুনে আরও দুটি অভিযান হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ধরনের ছোট আকারের সাবমার্সিবল বা ডুবোজাহাজে সাধারণত একজন চালক এবং তিনজন যাত্রী থাকে। আরেকজন থাকে 'কনটেন্ট এক্সপার্ট' যিনি সাগরের নিচের সবকিছু পর্যটকদের কাছে ব্যাখ্যা করেন।
কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে এই ডুবোজাহাজটি যাত্রা শুরু করেছিল। সাধারণত সাগরের তলদেশে ধ্বংসাবশেষের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসতে আট ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
ওশানগেটের আরও তিনটি সাবমার্সিবল থাকলেও, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা আছে শুধু 'টাইটান'-এর।
এ ডুবোজাহাজটির ওজন ২৩,০০০ পাউন্ড (১০,৪৩২ কেজি) এবং ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, এটি ১৩,১০০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় পৌঁছাতে পারে এবং পাঁচজন ক্রুর জন্য ৯৬ ঘণ্টার লাইফ সাপোর্ট দিতে পারে।
পোলার প্রিন্স নামক আরও একটি জাহাজ- যেটি এই সাবমেরিনকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত পরিবহন করতে ব্যবহৃত হয়, সেটিও এই অভিযানে যুক্ত ছিল বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন এটির মালিক।
গত বছর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে ভ্রমণ করেছিলেন সিবিএস-এর একজন সাংবাদিক ডেভিড পগ। নিখোঁজ সাবমেরিনটি এবং এর যাত্রীরা কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন সে বিষয়ে তিনি বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, এই মুহূর্তে ওই সাবমেরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার 'কোনো উপায় নেই'। কারণ জিপিএস বা রেডিও, কোনোটাই পানির নিচে কাজ করে না।
যেহেতু যাত্রীদের সাবমেরিনের ভেতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেওয়া হয়েছে, তাই সাবমেরিনের ভেতর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায়ও তাদের নেই। এমনকি তারা উপরে ভেসে উঠলেও, বাইরে থেকে কোনো সদস্য যদি দরজা না খুলে দেয় তাহলে যাত্রীরা বের হতে পারবে না।
১৯১২ সালে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রাতেই ভাসমান হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে টাইটানিক ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় জাহাজে থাকা ২ হাজার ২০০ যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জন নিহত হন। ১৯৮৫ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়।