ঋণ পুনর্গঠন: পাঁচ দিনের ব্যাংক হলিডে ঘোষণা শ্রীলঙ্কায়
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) থেকে পাঁচ দিনের ব্যাংক হলিডে শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। স্থানীয় বা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া সরকারের ঋণ পুনর্গঠনে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়। খবর বিবিসির
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসকদের থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে সবচেয়ে বাজে ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে আবদ্ধ শ্রীলঙ্কা। এরমধ্যে ঋণ পুনর্গঠনের ফলে স্থানীয় আর্থিক বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঋণ পুনর্গঠন হলো এমন এক প্রক্রিয়া যা কোম্পানি, ব্যক্তি বা কোনো দেশ তাদের বর্তমান ঋণের খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে ব্যবহার করে। যেমন কম সুদের হার নিয়ে আলোচনা করে বা ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ায়। এক কথায়, ঋণ পুনর্গঠন- দেউলিয়া হওয়ার অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়ের বিকল্প তৈরি করে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স হোমস বিবিসিকে বলেন, "ব্যাংক রানের আশঙ্কা আছে বুঝতে পেরেই সরকার সাধারণ ছুটির সময়সীমা বাড়িয়েছে।"
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্বলতা, বাজারে অর্থের ঘাটতি, বা দেশের কোনো সংকটকালে যখন গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংক থেকে সব টাকাপয়সা উত্তোলনের হিড়িক পড়ে যায় – তখন তাকে ব্যাংক রান বলে। এতে আরও চরম রূপ নেয় সংকট। আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিক্ত ও শূন্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘ পাঁচ দিনের ব্যাংক হলিডে ঘোষণা তাই শ্রীলঙ্কার সরকার বেশ ভেবেচিন্তেই করেছে।
বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম আরও জানায়, স্থানীয় আর্থিক খাতে যেকোনো বড় পরিবর্তনের ঘোষণা যেন সঙ্গে সঙ্গে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সেজন্যও বর্ধিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও চলতি সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আশ্বাস দিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, যে 'ঋণ পুনর্গঠনের ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ধস নামবে না।'
গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঠানো ঋণ পুনর্গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন লাভ করে বিক্রমাসিংহ সরকারের মন্ত্রিসভায়। চলতি সপ্তাহে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টে উত্থাপিত হবে।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান নন্দলাল উইরাসিংহে বলেন, 'যে পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে – তারমধ্যেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে এমন আশা করছে সরকার।'
তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয় আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, তাদের আমানত ও সুদ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।'
চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই স্থানীয় ঋণ পুনর্গঠন করছে কলম্বো। গত বছর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ঋণ দাতাদের কাছে খেলাপি হয় শ্রীলঙ্কা। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিদেশি কিছু সহায়তা পেয়েছে দেশটি।
যেমন বিশ্বব্যাংক ৭০ কোটি ডলার সহায়তা অনুমোদন করে। তার আগে ৩০০ কোটি ডলারের পুনরুদ্ধার প্যাকেজের অনুমোদন দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।