ভারী বৃষ্টি নয়াদিল্লির জন্য হুমকি হলেও তাজমহলের জন্য ভালো!
চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বিশ্বের সব দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্যই হুমকিস্বরূপ। কিন্তু উত্তর ভারতে সর্বশেষ ভারী বৃষ্টিপাতে অন্যত্র ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা তাজমহলের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
গত কয়েকদিন ধরে উত্তর প্রদেশসহ ভারতের উত্তরাঞ্চলে অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টির পর যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে গত ১৮ জুলাই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে বিবেচিত তাজমহল-এর প্রাঙ্গণের দেয়াল পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম তাজমহলের দেয়ালের পাশে থই থই করছে যমুনার পানি এবং দর্শনার্থীরা যেখান থেকে তাজমহল দেখেন সেই জায়গাটি প্লাবিত হয়েছে।
ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণের দায়িত্ব যাদের ওপর, সেই আর্কাইওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া'র সুপারিনটেনডেন্ট প্রত্নতাত্ত্বিক রাজ কুমার প্যাটেল বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তাজমহলের মার্বেল পাথরে তৈরি বহির্সজ্জা হয়তো খুব সামান্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় তাজমহলের কাঠের তৈরি ভিত্তি কাঠামোর আর্দ্রতা বাড়াতে পারে।
দেবদারু কাঠের যে ভিত্তি তাজমহলকে আংশিক অবলম্বনে সাহায্য করেছে, সেটি পানি শোষণ করলে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে বলে জানান প্যাটেল। ড্রেনেজ পাইপ নদীর পানিকে সরিয়ে দেয় এবং পাথর, কাঠ ও অন্যান্য সলিড পদার্থে ভর্তি ডিপওয়েল তাজমহলের বিশাল কাঠামোর স্থায়ীত্ব বজায় রাখে।
১৭ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিরক্ষার্থে এই অপূর্ব সুন্দর সৌধটি নির্মাণ করেন। এর আগে যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া ছিল তাজমহলের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ, যেহেতু আর্দ্রতার অভাবে এর ভিত্তি কাঠামোটি সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া, বছরের পর বছর ধরে চরম বায়ু দূষণ এবং এসিড বৃষ্টির কারণে তাজমহলের রঙ হলদে-সবুজ হয়ে গিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাজমহল তারই একটি উদাহরণমাত্র। চীনে ভারী বৃষ্টিপাত গানসু প্রদেশের মরুভূমিতে অধিক আর্দ্রতা বয়ে আনছে এবং এর ফলে গুহাগুলোতে ভালোভাবে সংরক্ষিত চতুর্থ শতাব্দীর শিল্পকর্মেরও ক্ষতি হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের উত্তরাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত দেশটির অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য অবশ্য শাপেবর হয়নি। তাজমহলের কাছেই অবস্থিত 'মেহতাব বাগ' বা 'মুনলিট গার্ডেন' এর বেশিরভাগই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে এবং প্যাটেলের ভাষ্যমতে, এখানে নতুন করে ঘাস লাগাতে হবে। যমুনার পানি বিপদসীমার উপর অবস্থান করায় এখনও নজরদারির মধ্যে রয়েছে নয়াদিল্লি। ইতোমধ্যেই শহরটি থেকে ২০,০০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।