১৮ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টানলেন জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি
দীর্ঘ ১৮ বছরের সংসারের পর বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফি। গতকাল (বুধবার) এ দম্পতির পক্ষ থেকে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি আইনি চুক্তিতে সই করার তথ্য জানানো হয়।
ট্রুডো ও সোফি পূর্বেও নিজেদের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে সরাসরি কথা বলেছিলেন। এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ দম্পতিকে খুব কম সময়ই একসাথে দেখা গিয়েছে।
বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী ট্রুডো ও ৪৮ বছর বয়সী সোফি বিয়ে করেছিলেন ২০০৫ সালের মে মাসে। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বড় সন্তানের বয়স ১৫ বছর।
২০২০ সালের বিবাহবার্ষিকীতে অবশ্য ট্রুডো সোফিয়াকে 'নিজের সঙ্গী ও নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
এর আগে ট্রুডোর বাবা ও কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো ১৯৭৭ সালে তার স্ত্রী মার্গারেটের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। জাস্টিনের মতো তিনিও তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ট্রুডোর ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা। কেননা বিশ্বখ্যাত এ রাজনীতিবিদ প্রায়শই পারিবারিক জীবনের গুরুত্বের কথা নিজের নানা বক্তব্যে বলেছেন।
এদিকে গত সপ্তাহেই নিজ দল লিবারেল পার্টির ভোটে ইতিবাচক ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রীসভায় ব্যাপক রদবদল এনেছেন ট্রুডো। দলের অন্যান্য নেতাদের তথ্যমতে, কানাডার বর্তমান এ প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়বেন।
নিজেদের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রায় একই ধরণের পোস্টের মাধ্যমে ট্রুডো ও সোফি বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, "সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে আমাদের মধ্যে অনেকভাবেই আলোচনা হয়েছিল। যা ছিল অর্থবহ এবং জটিল। আমরা একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতো থাকব।"
দ্য কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, ট্রুডো চলতি সপ্তাহেই নিজের বিচ্ছেদ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলবেন।
ট্রুডোর কার্যালয় জানায়, বিচ্ছেদের বিষয়ে সমস্ত আইনি ও নৈতিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করার জন্য ট্রুডো ও সোফি কাজ করে যাবেন। এছাড়াও তারা সন্তানদের একটি নিরাপদে ও সহযোগিতামূলক পরিবেশে বড় করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া ছুটিও তাদের পরিবার একসঙ্গেই কাটাবে।
পরিবারিক সূত্র থেকে জানা যায়, সোফি খুব শীঘ্রই অটোয়াতে আলাদা বাড়িতে উঠবেন। তবে পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় তিনি সন্তানদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও কাটাবেন। এতে করে সন্তানেরা স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যেই বড় হতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, দম্পতির তিন সন্তান তাদের যৌথ হেফাজতে থাকবে।
বর্তমানে জেন্ডার সমতা নিয়ে কাজ করা সোফি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন বাণিজ্য নিয়ে। ২০০৩ সালে ট্রুডোর সাথে যখন সম্পর্ক তৈরি হয় তখন তিনি একজন রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছিলেন। এর দুই বছর পরেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হন ট্রুডো। এরপর খুব দ্রুতই আকর্ষণীয় এ দম্পতি বিশ্ব গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক পোস্ট সোফিকে 'সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফাস্ট লেডি' হিসেবে অভিহিত করেন।
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বিখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিন এ দুই দম্পতির প্রোফাইল ও ছবিসহ লেখা প্রকাশ করেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের পরেও বহু সামাজিক অনুষ্ঠান ও বৈদেশিক সফরে এ দম্পতিকে একসাথে দেখা গিয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফরেও দুইজনকে একসাথে দেখা গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বেই ট্রুডো খুব পরিষ্কারভাবে নিজেদের সম্পর্কে বিরাজমান জটিলতা নিয়ে কথা বলেছিলেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত ট্রুডোর আত্মজীবনী 'কমন গ্রাউন্ড' বইয়ে তিনি বলেন, "আমাদের বিয়েটা একদম নিখুঁত নয়। আমাদের এ সম্পর্কে উত্থান-পতন রয়েছে।"
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোফিকে ট্রুডোর সাথে খুব কমই দেখা গিয়েছে। এছাড়াও তার কথাবার্তায়ও সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়টি ফুটে উঠছিল।
গতবছর নিজেদের বিবাহ-বার্ষিকী উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সোফি বলেন, "আমরা ভালো ও খারাপ উভয় সময়েই সবকিছু একসাথে পাড়ি দিয়েছি। আমাদের মধ্যে সবকিছু এখনি শেষ হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বেশ কিছু দিক থেকেই বেশ চ্যালেঞ্জিং।"