সাত শিশুকে হত্যার দায়ে আমৃত্যু জেলে কাটাতে হবে সিরিয়াল কিলার নার্সকে
সাত শিশুকে হত্যা এবং আরও ছয় শিশুকে হত্যাচেষ্টার অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সিরিয়াল কিলার যুক্তরাজ্যের নার্স লুসি লেটবি। এ সময় লুসিকে সাজা কমিয়ে মুক্তি দেওয়া যাবে না মর্মেও আদেশ দেন বিচারক। এছাড়া তিনি প্যারোলের কোনো সুযোগও পাবেন না।
রায় দেওয়ার সময় ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টের বিচারক জেমস গস বলেছেন, 'নিষ্ঠুরতার সঙ্গে, ঠান্ডা মাথায় বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে শিশু হত্যা করা হয়েছে।'
তবে রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে অস্বীকার করেন লুসি। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাক নিশ্চিত করেছেন, রায় দেওয়ার সময় অভিযুক্তদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য করার জন্য আইনে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে সরকার।
রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষে নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
রায় পড়ার সময় লুসির উদ্দেশে বিচারক বলেন, 'আমি আপনাকে আজীবনের জন্য কারাদণ্ড দিচ্ছি। আপনার অপরাধের গভীরতা বিবেচনায় আমি আরও নির্দেশ দিচ্ছি যে, জীবদ্দশায় আপনার মুক্তির জন্য কোনো আবেদনও যেন গৃহীত না হয়। সে কারণে আদালতের আদেশ হচ্ছে, প্রত্যেকটি অপরাধের জন্যই আপনার শাস্তি আজীবন কারাদণ্ড এবং বাকি জীবন আপনি জেলেই থাকবেন।'
এর আগে যুক্তরাজ্যে মাত্র তিনজন নারীকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে—মাইরা হিন্ডলে, রোজমেরি ওয়েস্ট ও জোয়ানা ডেনেহি।
এর আগে নবজাতক পরিচর্যা ইউনিটে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাত শিশুকে হত্যা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন একজন ব্রিটিশ নার্স। একইসঙ্গে নবজাতক ইউনিটে আরও ছয় শিশুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কাউন্টেস অভ চেস্টার হসপিটাল-এ কর্মরত অবস্থায় লুসি ওই শিশুদের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা করেন লুসি।
কয়েকটি শিশুর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন ও বাতাস ঢুকিয়ে এবং বাকিদের জোর করে দুধ খাইয়ে হত্যা করেন লুসি। কয়েকটি শিশুর ওপর একাধিকবার আক্রমণ করে তিনি তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।
বিচারকাজে প্রসিকিউটর বলেন, 'বাতাস, দুধ, তরল খাবারের মতো নিরীহ জিনিস কিংবা ইনসুলিনের মতো ওষুধও তার হাতে পড়ে মারণাস্ত্র হয়ে ওঠে।'
লুসিকে গ্রেপ্তার করার পর তার বাড়ি তল্লাশি করার সময় পুলিশ তার লেখা চিরকুট পায়। তাতে লুসি লিখেছেন: 'আমি ওদের খুন করেছি, কারণ ওদের যত্ন নেওয়ার মতো যথেষ্ট ভালোমানুষ আমি না। আমি ভীষণ খারাপ মানুষ।'
তিনি আরও লিখেছেন: 'আমি শয়তান আমিই এ কাজ করেছি' (আই অ্যাম ইভিল, আই ডিড দিস)।
লুসি যাদের হত্যার চেষ্টা করেছেন, তাদের কেউ কেউ যমজ ছিল। একটি মেয়েশিশুকে তিনি চারবারের চেষ্টায় হত্যা করেন।
২০১৬ সালে কাউন্টেস অভ চেস্টার হসপিটালে নবজাতক মৃত্যুর হার অপ্রত্যাশিত রকমের বেশি হলে সন্দেহের উদ্রেক হয়। এর জেরে শুরু হয় তদন্ত। ২০২০ সালে লুসির বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ আনা হয়।