চাল রপ্তানিতে আরো নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে ভারত, নতুন হুমকির মুখে বিশ্ববাজারে সরবরাহ
স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় চাল রপ্তানিতে আরো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে ভারত। বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশটি এ পদক্ষেপ নিলে বিশ্ববাজারে জোগানের অংশে আরো টান পড়বে।
সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ নিউজ জানিয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে ভাবছে, যার মাধ্যমে রপ্তানিকে নিরুৎসাহিত করা হবে। তবে এপর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, সরকারের চিন্তাভাবনার প্রেক্ষিতে শুল্ক আরোপ হবেই– এটিও নিশ্চিত নয় বলে জানান তারা। সিদ্ধান্তের বিষয়টি গোপনীয় হওয়ায় নাম না প্রকাশের শর্তে কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
যদিও এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ভারতের খাদ্যসচিব সঞ্জিব চোপড়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বর্তমানে শুল্ক আরোপের কোনো পরিকল্পনা করা হচ্ছে না।
ভারত রাশিয়া থেকে মূল্যছাড়ে গম আমদানির জন্য আলোচনা করছে– আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে গম আমদানির কোনো পরিকল্পনাও নেই দিল্লির।
কিন্তু, আগামী বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে ভারতে সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে মোদি সরকার স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমানোর চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে অতি-সম্প্রতি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, মোদি সরকার চাল রপ্তানিতে আরো নিষেধাজ্ঞা দেবে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। মোদি সরকার খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এনে ভোটারদের সন্তুষ্ট রাখতে চায়। খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে এর আগে ক্ষমতাসীন দল পুনর্নিবাচিত হতে না পারার নজিরও রয়েছে ভারতে।
ভারতের মোট চাল রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশই সিদ্ধ চাল। এরমধ্যেই দেশটি বাসমতি ছাড়া অন্যান্য ধরনের চাল ও খুদ রপ্তানির ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কমিয়েছে চিনি ও গম রপ্তানি। একইসঙ্গে, বেশকিছু ফসল মজুতদারির বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ দিয়েছে।
দক্ষিণ এশীয় দেশটির সরকার আমদানি করা গমের ওপর বিদ্যমান ৪০ শতাংশ শুল্কও প্রত্যাহারের কথা ভাবছে। বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এরমধ্যেই সরকারি মজুত থেকে টমেটো ও শস্য বিক্রি শুরু করেছে।
ভারত প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টন ধান উৎপাদন ও প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন রপ্তানি করে। কিন্তু, দেশটির ধান আবাদকারী প্রধান কয়েকটি রাজ্য – পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও অন্ধ্র প্রদেশে এ মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে ধানের ফলন কমে, আগামী মৌসুমে স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ আরো কমার আশঙ্কা রয়েছে।
এবছর বন্যা ও তাপপ্রবাহের কারণে বেশকিছু অঞ্চলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বাজারে খাদ্যের দাম চড়তে থাকে। ফলস্বরূপ; জুলাইয়ে ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয় ভোক্তা পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গ নিউজ জানিয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে ১ লাখ কোটি রুপি (১২ বিলিয়ন ডলার) কাটছাঁট করে সরকার তা খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দের পরিকল্পনা করছে।