প্রিগোজিনকে নিয়ে মুখ খুললেন পুতিন
মস্কোর উত্তরে তেভর অঞ্চলে একটি প্রাইভেট জেট বিধ্বস্ত হয়ে বিমানটিতে থাকা ১০ জনের সকলেই নিহত হয়েছেন। দেশটির অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ রোজাভিয়াসিয়ার তথ্যমতে, ঐ বিমানে থাকা যাত্রী তালিকায় ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের নামও ছিল।
গত বুধবার বিমানটি বিধ্বস্ত হলেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রিগোজিনকে নিয়ে নিরবতা ভাঙেন পুতিন।
বিমানটি বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পুতিন। তবে বিমানের যাত্রী হিসেবে তালিকাভুক্ত ওয়াগনার বস প্রিগোজিন মারা গেছেন কি-না, সেটি নিশ্চিত করে কিছু বলেননি তিনি।
বক্তব্যে পুতিন বলেন, "বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি বেশ হৃদয়বিদারক। প্রাথমিক তথ্যগুলো ইঙ্গিত করে যে, ওয়াগনার সেনারা বিমানটিতে ছিল। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, এই ওয়াগনার সেনারাই ইউক্রেনের নব্য-নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষে লড়াই করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। আমরা সেগুলো জানি এবং তাদের এ প্রতিদান আমরা কখনও ভুলবো না।"
রাশিয়ার কয়েকটি আউটলেটের মতে, বিধ্বস্ত বিমানটি এমব্রেয়ার লিগ্যাসি ৬০০ মডেলের। বিমানটির টেইল নম্বর ছিল আরএ-০২৭৯৫; যেটি প্রিগোজিন নিজে ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়।
পুতিন বলেন, "আমি প্রিগোজিনকে অনেক আগে থেকেই চিনতাম; প্রায় ৯০ এর দশকের শুরু থেকে। জটিলতায় ভরা ভাগ্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। তবে জীবনে তিনি গুরুতর কিছু ভুলও করেছিলেন।"
পুতিন আরও বলেন, "প্রিগোজিন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি, একজন প্রতিভাবান ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি কেবল আমাদের দেশেই সফলতার সাথে কাজ করেননি। পাশাপাশি বিদেশেও, বিশেষ করে আফ্রিকাতে তার কাজের পরিধি বিস্তৃত ছিল। সেখানে তিনি তেল, গ্যাস, মূল্যবান ধাতু ও পাথরের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন।"
লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের কেয়ার গাইলস জানান, প্রিগোজিনের মৃত্যুর সংবাদকে ঘিরে সকলকে 'বিশাল সতর্কতা' অবলম্বন করতে হবে।
কেয়ার গাইলস বলেন, "ঘোষণা করা হয়েছে যে, ইয়েভগেনি প্রিগোজিন নামে একজন যাত্রী বিধ্বস্ত বিমানটিতে ছিলেন। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, একাধিক ব্যক্তি ভ্রমণের তথ্য লুকাতে নিজেদের নামের পরিবর্তে ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নাম ব্যবহার করে থাকেন।"
পুতিন বলেন, "আমি যতদূর জানি, প্রিগোজিন গতকাল আফ্রিকা থেকে ফিরেছিলেন। তিনি এখানে কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। ইতিমধ্যে এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। এটি সম্পূর্ণরূপে ও সফলভাবে সম্পন্ন করা হবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দেখা যাক, তদন্তে কী উঠে আসে।"
কেয়ার গাইলস মনে করেন, যতক্ষণ না 'নিশ্চিতভাবে' জানা যাবে যে, বিমান বিধ্বস্তে নিহত ব্যক্তিটিই আসল প্রিগোজিন, ততক্ষণ যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে আফ্রিকা থেকে নতুন করে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে প্রিগোজিনকে জীবিত দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
পুতিন বলেন, "অদূর ভবিষ্যতে তদন্তকারীরা কী বলে, সেটাই দেখার বিষয়। এখন বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, টেকনিক্যাল যাচাই-বাছাই ও জেনেটিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে কিছু সময় লাগবে।"
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্মকর্তারা জানান, ওই বিমানে প্রিগোজিন ছাড়াও তার প্রধান সহচর দিমিত্রি ইউতকিন ছিলেন। বিমানটিতে তিনজন ক্রু ও সাতজন যাত্রী ছিল।
ওয়াগনার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনের দাবি, বিধ্বস্ত বিমানটি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ঘটনার আগে দুটি বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনতে পান, এরপর ধোঁয়ার দুটি রেখা দেখতে পান। তবে ভূপাতিত করার দাবির পক্ষে চ্যানেলটি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
গত জুলাই মাসে বিদ্রোহের পর থেকে নিজেকে অনেকটা আড়ালেই রেখেছিলেন প্রিগোজিন। মাত্র ২৪ ঘণ্টা টিকে থাকা বিদ্রোহে গ্রুপটি দক্ষিণ রাশিয়ার শহর রোস্তভে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। যদিও পরবর্তীতে বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে এসেছিল ওয়াগনার গ্রুপ।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে অংশ নিয়েছিল ওয়াগনার গ্রুপ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই অস্ত্র সরবরাহে ঘাটতির অভিযোগ তুলে রাশিয়ার সামরিক নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন ওয়াগনার বস প্রিগোজিন। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সামরিক-প্রধানের সঙ্গেও প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তারই চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয় জানায়, প্রিগোজিনের বিমানটি কুজেনকিনো গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে উড্ডয়নের আধা ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটে।