চীনের মানচিত্রে অরুণাচল; ভারতকে 'শান্ত থাকতে' বলল বেইজিং
চীন সরকার গত সোমবার (২৮ আগস্ট) দেশটির মানচিত্রের নতুন সংস্করণে প্রথমবারের মতো ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচলকে নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বিরোধপূর্ণ আকসাই চীনকেও। এতে করে বেইজিং ও দিল্লির মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। খবর বিবিসির।
বিতর্কিত মানচিত্রটি চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে লঞ্চও করা হয়েছে। চীনের এমন কর্মকাণ্ডে ভারত প্রতিবেশী শক্তিধর দেশটির তীব্র সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে চীনের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক ভাষায় ভারতকে ইস্যুটিকে 'অতিমূল্যায়ন' থেকে বিরত থাকতে এবং 'শান্ত থাকতে' বলা হয়েছে।
এদিকে আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত হবে জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন। ঐ সম্মেলনে এতদিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অংশ নেওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস কনফারেন্সে সম্মেলনটিতে জিনপিংয়ের যোগ দেওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হয়নি।
বরং চীনের হয়ে সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের যোগ দেওয়ার কথাই শোনা যাচ্ছে। ভারত ও চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র রয়টার্সকে জানায়, মানচিত্র ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ভারত সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেছে জিনপিং। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে দাবিটির যথার্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
চীনের নতুন মানচিত্র ইস্যুতে শুধু ভারত নয়, পাশাপাশি ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়াও প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেননা মানচিত্রে দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অঞ্চলের মালিকানার দাবি করেছে চীন। একইসাথে বহুল আলোচিত তাইওয়ানকেও নিজেদের ভূখণ্ড বলেই সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে চীনের নতুন মানচিত্র ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়ে চীন সফর বাতিল করেছেন নেপালের একজন রাজনীতিবিদ। আর ভারতের নানা মহলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
অথচ সাউথ আফ্রিকায় অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের সদ্য সমাপ্ত সম্মেলনে ভারত ও চীনের শীর্ষ নেতাদের একসাথে দেখা গিয়েছে। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সাইডলাইনে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তাও বলেছেন।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চীনের এমন দাবিকে 'অযৌক্তিক' বলে উল্লেখ করেছেন। এই মানচিত্র প্রকাশের কয়েক ঘন্টার ভেতরেই তিনি বলেন, "কেউ একটা আজগুবি দাবি করলেই অন্যের ভূখন্ড তার হয়ে যায় না!" এছাড়াও ভারতীয় চ্যানেল এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এটিকে চীনের 'পুরনো একটা বদভ্যাস' বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।
অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এটিকে একটি নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। একইসাথে অঞ্চলগুলো নিজেদের বলে মানচিত্রে দাবির বিষয়টিকে দেশটির আইন মেনেই সার্বভৌমত্বের অনুশীলন বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, "আমরা আশা করি, মানচিত্র ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দেবে এবং শান্ত থাকবে। একইসাথে তারা ইস্যুটিকে 'অতিমূল্যায়ন' থেকেও বিরত থাকবে।"
এর আগে গত এপ্রিল মাসেই চীনের পক্ষ থেকে অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন জায়গার চীনা বা তিব্বতি নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। ভারতের পক্ষ থেকে স্বভাবতই এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী তখন বলেছিলেন, "কোনও দেশ একটা জায়গার কাল্পনিক নাম দিলেই সেটা তাদের হয়ে যায় না। অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে ও থাকবে।"
ভারত প্রায়শই সীমান্তবর্তী বহু অঞ্চল চীনের দাবি করা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এরমধ্য উল্লেখযোগ্য হলো হিমালয়ের দীর্ঘ ৩,৪৪০ কিলোমিটার অঞ্চল যা 'লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল' নামে পরিচিত। অঞ্চলটিতে উভয় পক্ষের সৈন্যরা বেশ কয়েকবার মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
চীনের পক্ষ থেকে ভারতের সম্পূর্ণ অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের বলে দাবি করে নাম দেওয়া হয়েছে 'সাউথ তিব্বত'। যেই দাবি ভারত খুব শক্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে হিমালয়ের আকসাই চীন মালভূমিকে নিজেদের বলে দাবি করে, যা বর্তমানে চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন।
সীমান্ত ইস্যুতে ২০২০ সাল থেকেই চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়েছে। তখন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সৈন্যরা মারাত্মক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সালের পর উভয় পক্ষের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম মারাত্মক সংঘর্ষ।