‘গভীর সংকটে’ ইউক্রেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন নতুন বিলিয়ন ডলারের সহায়তা কাজে দেবে না
নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, মার্কিন সেক্রেটারি অভ স্টেট-এর উৎসাহব্যঞ্জক সফর ও এক বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা ইউক্রেনকে এ সপ্তাহে নতুন করে আশার আলো জুগিয়েছে বটে। কিন্তু এসব কি যুদ্ধের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে?
ইউক্রেনীয় ও মার্কিন কর্মকর্তাদের এ নিয়ে বিশ্বাস ইতিবাচক। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ অবশ্য এসবে মজছেন না।
বুধবারের ব্রিফিংয়ে মার্কিন সেক্রেটারি অভ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেনের এক বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার সময় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন, যারা মনে করে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র 'বিজয়ের শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকবে না, তারা আজকে ভুল বলে প্রমাণিত হলেন।'
ব্লিংকেনের গলায়ও একই আশার কথা শোনা গিয়েছে ব্রিফিংয়ে। তিনি বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ গতি পেয়েছে এবং নতুন এ সহায়তা প্যাকেজ 'এ গতি ধরে রাখতে সহায়তা করবে ও আরও প্রেরণা জোগাবে।'
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য, বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও রাশিয়া বিশেষজ্ঞ স্টিভেন মেয়ারস বলেন, বাইডেন প্রশাসনের 'আনুষ্ঠানিক নীতি' হচ্ছে ইউক্রেন জিততে যাচ্ছে এবং রাশিয়াকে অবশ্যই পশ্চিমের কাছে হার স্বীকার করতে হবে অথবা চীনের 'পুতুল' হতে হবে।
মেয়ারস বলেন, ইউক্রেনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ, ব্লিংকেনের খানিকটা বাহবা, ও নতুন সহায়তা প্যাকেজ বড় প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সংগ্রামে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারবে না।
'ইউক্রেনের কাছে কার্যকরী কোনো পাল্টা-কৌশল নেই,' বলেন মেয়ারস। 'ইউক্রেনীয়রা এখন গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
ইউএসএ টুডেকে মেয়ারস বলেন, ইউক্রেনীয়রা পশ্চিমাদেরকে নিজেদের সাফল্য দেখাতে হারানো ভূমি পুনর্দখলের খবর প্রচার করে, কিন্তু কত ইউক্রেনীয় মানুষ এ যুদ্ধে মারা পড়ছে সে বিষয়ে তারা খুব বেশি তথ্য দেয় না।
'তারা রাশিয়া পাল্টা হামলার কথা বলে না। রাশিয়ানরা কিল জোন এলাকার দখল বা দখলিকৃত এলাকা ধরে রাখা নিয়ে এখন আর মাথা ঘামাচ্ছে না,' বলেন মেয়ারস।
রাশিয়ার ভেতরে অতর্কিত হামলার ক্ষেত্রে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালায়। কিন্তু এসব ড্রোন সাধারণত মস্কোর বড় বড় ভবনের জানালায় গিয়ে পড়ে। অন্যদিকে বুধবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরে রাশিয়ার রকেট হামলায় ১৭ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গিয়েছেন।
মেয়ারসের ভাষ্যে, এ যুদ্ধ থেকে বের হওয়ার জন্য ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের জরুরিভিত্তিতে একটি প্রস্থান-কৌশলের দরকার।
'আমাদের চেয়েও ইউরোপ আরও বেশি অর্থনৈতিক চাপের মুখে আছে। জার্মানিতে তীব্র মন্দা চলছে। ইউরোপীয়ানরা আর নতুন করে অর্থনৈতিক বোঝা কাঁধে নিতে চাইবে না। তাদেরও এ থেকে বের হতে হবে,' মেয়ারস বলেন।
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিল-এর জ্যেষ্ঠ ফেলো শন ম্যাকফেটও মেয়ারসের মতোই মত প্রকাশ করেছেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পরিবর্তনকে সমর্থন দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগই এমন পরিবর্তনে বাধ্য করেছে। কিন্তু এ দিয়ে যুদ্ধের গতি পরিবর্তন করবে না।
ম্যাকফেট বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে চিরায়ত যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করে হেরেছে। তারপরও এটি ইউক্রেন প্রসঙ্গে কৌশল পরিবর্তন করেনি।
কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়াও একই ধরনের ভুল করেছিল। এখন ক্রেমলিন তথ্য নিয়ন্ত্রণ ও ভাড়াটে যোদ্ধা ব্যবহারের মতো আধুনিক যুদ্ধপদ্ধতির ওপর বেশি নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন এ বিশেষজ্ঞ।
'ইউক্রেন কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে না,' ম্যাকফেট বলেন। 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো শত্রুর ভূমি দখল, শত্রুসেনা হত্যা বা শত্রুর রাজধানীর ওপর নিজের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে আজকালকার যুদ্ধে জেতা যায় না।'