এসি, ফ্রিজ, সোফা: থাকসিন সিনাওয়াত্রার ‘ভিভিআইপি’ জেল জীবন
নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয় থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে। হাই-প্রোফাইল এই কারাবন্দীকে ১২ ঘণ্টা জেলে রাখার পরই নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংককের একটি হাসপাতালের প্রিমিয়াম ওয়ার্ডে।
তার প্রতি এমন 'সদয় আচরণ' ও বিশেষ ব্যবস্থার কারণে এখন দেশটির কারা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
থাইল্যান্ডের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে হাসপাতালের একটি বিশেষ অংশে রাখা হয়েছে; যেখানে তার জন্য এসি, ফ্রিজ, টিভি, সোফা এবং ডাইনিং টেবিল সম্বলিত একটি ব্যক্তিগত কামরা রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা নার্সদের তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি।
তবে থাকসিনকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, অনিদ্রা, বুকব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ ও অক্সিজেন স্বল্পতায় ভোগা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পরিচর্যা দরকার।
এদিকে থাকসিনের ঘটনা কেন্দ্র করে থাই কারাগার নিয়ে সোচ্চার হয়েছে দেশটির অধিকার কর্মীরা। কারণ কারাগারগুলোতে বন্দী সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি, তাদের জন্য চিকিৎসা সেবাও সীমিত। তাদের জন্যও এখন একই ধরনের সুযোগ সুবিধার দাবি করা হচ্ছে।
ব্যাংকক পোস্টে লেখা একটি সাম্প্রতিক নিবন্ধে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) এর আন্দ্রেয়া জিওরগেটা লিখেছেন, থাকসিনের ঘটনার একটি ইতিবাচক দিক হল, এটি থাইল্যান্ডের কারাগারের প্রায়ই উপেক্ষিত সমস্যাটির উপর আলোকপাত করেছে।
জেলের অবস্থার উপর এফডিআইএইচ এর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে কারাবন্দীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সুযোগ সুবিধা না দেওয়ায় বারবার সমালোচনা করা হয়েছিল।
থাইল্যান্ডের জেলগুলোতে গোসল করার সুযোগও সীমিত। একটি জেলে এমনও হয় যে, কারারক্ষীরা ১ থেকে ১৫ গুণা পর্যন্ত একজন বন্দী শাওয়ারের নিচে দাঁড়াতে পারেন। একটি সেলে সাধারণত এক থেকে তিনটি টয়লেট থাকে। এফডিআইএইচ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, টয়লেটগুলোতে অনেক সময়ই পানি থাকে না। অনেক সেলে ৫০-৬০ বন্দীও থাকেন।
থাই লয়ার'স ফর হিউম্যান রাইটস (টিএলএইচআর) জানায়, তারা যেসব রাজনৈতিক বন্দীদের মামলা লড়েন তাদের অনেকের পুষ্টিকর খাবার, পরিষ্কার পানি জোটে না। কারাগারের পানিতে ক্লোরিনের বিদঘুটে গন্ধ আসে। পানিতে মশার লার্ভারও দেখো মেলে। কারাবন্দীরা যদি পানির বোতল কিনতে চান তাহলে তাদেরকে জেলের ভেতর কাজ করতে হয় বা পরিবারের সদস্যদের সরবরাহের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
আর বন্দীরা অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগও সীমিত বলে অধিকারকর্মী এবং আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
টিএলএইচআর-এর এক আইনজীবী জানান, কিছু পরিস্থিতির কারণে হয়তো থাকসিনের ক্ষেত্রে দ্রুত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন ছিল। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলাই যায় যে, এটি অস্বাভাবিক দ্রুত সময়ে হয়েছে।
থাইল্যান্ডে অনেক রাজনৈতিক কারাবন্দীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অনেক সময় অনশনে যেতে হয়। কিছুদিন আগে ওয়ারুনি নামে এক নারীকে ১৪ দিন অনশনের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পেঙ্গুইন নামে পরিচিতি জনপ্রিয় নেতা পারিত চিওয়ারাককে অনশনের ৪৭তম দিনে হাসপাতাল নেওয়া হয়।
থাকসিনকে হাসপাতালে স্থানান্তরের পর থেকেই দেশটির সামাজিক মাধ্যমে 'ভিভিআইপি হ্যাশট্যাগ' ট্রেন্ডিংয়ে আছে। নির্বাসনের থাকাকালীন তার ভিডিও- যেখানে একটিতে তাকে বক্সিং করতে দেখা যাচ্ছে- প্রচার করা হচ্ছে। এসব ভিডিও প্রচার করে মানুষ তার 'ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য পরিস্থিত' নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
অনেকে অনুমান করছেন, রাজকীয় ক্ষমায় আট বছর থেকে কমিয়ে এক বছরে আনা কারাদণ্ডের বাকি সময়টুকু থাকসিন হয়তো হাসপাতালেই কাটিয়ে দেবেন।