নাকের লোম, মৃত মাকড়সা, পাথর চাটা: এবারের ইগ নোবেল জিতেছে যেসব গবেষণা
যখন কেউ একই শব্দ বহুবার পড়ে তখন তার কেমন লাগে? মানুষের উভয় নাকের ছিদ্রে কি সমান সংখ্যক লোম থাকে? অ্যানালপ্রিন্টের মাধ্যমে কি মানুষকে শনাক্ত করা সম্ভব? ভূতাত্ত্বিকরা কেন পাথর চাটেন?
এসব প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরাই এ বছরে 'ইগ নোবেল পুরস্কার' জিতেছেন। নোবেল পুরস্কারের সাথে এটির কোন সম্পর্ক নেই। মূলত প্রচলিত ধারার বাইরে মজার ও হাস্যকর বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রযুক্তি গবেষণাকে উৎসাহিত করতে এবং কল্পনাপ্রবণ হওয়াকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সত্যিকারের নোবেল বিজয়ীরা এই পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন।
এটি মূলত নোবেল পুরস্কারের প্যারোডি। তবে নোবেলকে হেয় করা উদ্দেশ্য নয়। বরং এ পুরস্কারের মাধ্যমে এমন সব বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যেগুলো 'আগে মানুষকে হাসায়, পরে ভাবায়'।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভার্চুয়ালি ইগ নোবেল পুরস্কারের ৩৩তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজয়ীরা প্রত্যেকে ১০ ট্রিলিয়ন জিম্বাবুয়ে ডলার এবং 'ইগ সিউডো কোলা' এর একটি প্যাকেজ পেয়েছেন।
২২ দেশের বিজ্ঞানীরা এবার ইগ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন, যুক্তরাজ্যের চারজন এবং চীনের তিনজন গবেষক আছেন।
কেন অনেক বিজ্ঞানী পাথর চাটতে পছন্দ করেন? এ বিষয়ে গবেষণা করে এবছর রসায়ন ও ভূতত্ত্ব পুরস্কার জিতেছেন ভূতত্ত্ববিদ জান জালাসিউইচ। তার গবেষণা মতে, ভেজা অবস্থায় চাটলে পাথরটি কোন ধরনের তা বুঝতে সুবিধা হয়। পুরস্কার পাওয়ার পর নিজের বক্তব্যের সময় ৪০০ বছর পুরনো একটি ট্রিলোবাইট চেটে দেখান এই গবেষক।
এবছর সাহিত্য পুরস্কার জিতেছেন 'জামাইস ভু' নিয়ে গবেষণা করা একদল বিজ্ঞানী। জামাইস ভু একটি মনস্তত্ত্বিক অবস্থা যেখানে পরিচিত জিনিসকে অপরিচিত মনে হয়। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ একই শব্দ ৩০ বারের বেশি পড়লে তাদের 'অদ্ভুত' অনুভূতি হয়।
এদিকে মৃত মাকড়সাকে গ্রিপিং টুল হিসেবে ব্যবহারের জন্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পুরস্কার জিতেছেন টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। গবেষণায় দেখা গেছে, মাকড়সা তার ওজনের চেয়ে ১৩০ গুণ ভারি বস্তু আঁকড়ে ধরে তুলতে সক্ষম। নেক্রোবায়োটিক্স গবেষণার প্রথম ধাপ হিসেবে এই গবেষণা সম্পন্ন করেন তারা।
একজন ব্যক্তির প্রতিটি নাকের মধ্যে কতটি লোম আছে তা নিয়ে গবেষণার জন্য এবারের মেডিসিন পুরস্কার দেওয়া। মৃতদেহের নাকের লোম যাচাই করে বিজয়ী গবেষকরা দেখেছেন, একজন ব্যক্তি বাম নাকে গড়ে ১২০টি ও ডান নাকে গড়ে ১১২টি লোম থাকে। অ্যালোপেসিয়ায় (চুল পড়ে যাওয়ার একটি কারণ) আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় নাকের লোমের প্রভাব গবেষণায় এটি কাজে আসবে ।
মানুষ অতীতের কথা বলার সময় তার মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে গবেষণায় এবারের ইগ কমিউনিকেশন পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। আর জনস্বাস্থ্য পুরস্কার জিতেছেন ইউরোলজিস্ট সিউং-মিন পার্ক। যিনি স্ট্যানফোর্ড টয়লেটের আবিষ্কারক। এটি এমন একটি ডিভাইস যা ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতোই মলমূত্র বিশ্লেষণ করে 'অ্যানালপ্রিন্ট' দ্বারা মানুষকে শনাক্ত করবে।
জিহ্বায় ডিভাইস ব্যবহারের ফলে খাবারের স্বাদ পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য পুষ্টি পুরস্কার পেয়েছেন জাপানি বিজ্ঞানী হোমি মিয়াশিতা এবং হিরোমি নাকামুরা। গবেষণায় দেখা যায়, ডিভাইস ব্যবহারকারীদের লবণাক্ততা বোঝার ক্ষমতা বাড়ে।
শিক্ষকদের একঘেয়েমি কীভাবে শিক্ষার্থীদেরে একঘেয়েমিকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে গবেষণায় এবারের শিক্ষা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
পদার্থবিদ্যা পুরস্কার গেছে অ্যাঙ্কোভিসের যৌন কার্যকলাপ কীভাবে সমুদ্রের পানির মিশ্রণ এবং সমুদ্রের স্রোতের বিশ্বব্যাপী সঞ্চালনকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে গবেষণা করা একদল বিজ্ঞানীর হাতে।
পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষকরা নভেম্বরে ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে ইগ নোবেল কর্তৃপক্ষের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।