সিংহের গর্জনের চেয়ে মানুষের কণ্ঠ শুনে বেশি ভয় পায় বন্যপ্রাণী: গবেষণা
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সিংহের শব্দের চেয়ে মানুষের কণ্ঠস্বর বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে বেশি ভয় সৃষ্টি করে। খবর বিবিসির।
গবেষণার জন্যে বিজ্ঞানীরা ন্যাশনাল পার্কে প্রাণীদের পানির উৎসে স্পিকার লুকিয়ে রাখেন। সেখানে তারা স্থানীয় ভাষায় মানুষের সাধারণ কথোপকথনের রেকর্ডিং চালান। দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ প্রাণী অত্যন্ত ভীত ছিল এবং সেগুলো দ্রুত পালিয়ে যায়।
বিপরীতে, গর্জন করা সিংহের রেকর্ডিং উল্লেখযোগ্যভাবে কম ভীতিকর ছিল প্রাণীদের কাছে। এমনও দেখা গেছে যে, সিংহের আওয়াজ শুনে কিছু হাতি শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে গেছে।
গবেষণার ফলাফল দেখায় যে, শিকার, বন্দুক ব্যবহার ও কিছু প্রাণী ধরতে কুকুরের ব্যবহারের কারণে হরিণ, হাতি, জিরাফ, চিতাবাঘ এবং ওয়ারথগের মতো প্রাণীদের কাছে মানুষের সাথে যোগাযোগ বিপজ্জনক বলে মনে হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিয়ষটি কেবল ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বৈশ্বিকভাবেও দেখা যায়, বন্যপ্রাণীরা অন্য যে কোনো শিকারীর চেয়ে মানুষকে বেশি ভয় পায়।
লেখকরা উল্লেখ করেছেন, এটি বন্যপ্রাণী পর্যটনের উপর নির্ভরশীল অঞ্চলগুলির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। কারণ দর্শনার্থীরা অসাবধানতাবশত দেখতে আসা প্রাণীদের ভয়ের কারণ হচ্ছে।
গবেষণার অন্যতম লেখক ড. লিয়ানা জেনেত্তি বলেন, তাদের গবেষণা 'ভয়ের বাস্তুতন্ত্র' পরীক্ষা করেছে। যেখানে মূলত শিকারের প্রভাব যাচাই করা হয়।
লিয়ানা বলেন, শিকারীরা তাদের শিকারকে হত্যা করে এবং এটি স্পষ্টতই শিকারের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা অন্য গবেষণাতে দেখেছি, কেবল শিকারীর ভয়েই শিকারের সংখ্যা কমতে পারে।
'মানুষ বন্যপ্রাণীর মধ্যে যে ভয়ের সৃষ্টি করছে সেটা পরিমাপ করা, প্রশমিত করা এবং পরিবর্তন আনা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং একই সঙ্গে কিছু সুযোগও সামনে নিয়ে আসে। তাই বিষয়টিকে এখন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিকল্পনা এবং সুরক্ষিত অঞ্চল ব্যবস্থাপনার অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।', যোগ করেন তিনি।
এই গবেষণার ফলাফল দুর্বল প্রজাতিগুলিকে রক্ষা করার সম্ভাবনাও তুলে ধরে। যেমন মানুষের শব্দ যথাযথভাবে ব্যবহার করা গেলে, সেটি শিকারী থেকে প্রাণীদের রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
লিয়ানা বলেন, যেসব স্থানে শিকারীদের আনাগোনা বেশি সেখান থেকে গন্ডারদের দূরে রাখা যায় কিনা তা পরীক্ষা করছি আমরা।