ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত: অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের আহ্বান সৌদির, আরব ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কী
শনিবার (৭ অক্টোবর) ভোরে ইসরায়েলে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। এই সংঘাতের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী সৌদি আরব 'ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে আরও সংঘাত অবিলম্বে বন্ধের' আহ্বান জানিয়েছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে,' আমরা বেশকিছু ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ও দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে উদ্ভূত নজিরবিহীন সংঘাত পরিস্থিতির দিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছি, যারফলে সেখানকার বিভিন্ন স্থানে উচ্চ মাত্রায় সহিংসতা ঘটছে।'
'অব্যাহত দখলদারিত্বের ফলে পরিস্থিতির এমন বিস্ফোরণ ঘটেছে, এই বিপদ সম্পর্কে আমরা বারবার যে সতর্কবার্তা দিয়েছি, তা আবারো পুনর্ব্যক্ত করছি।'
সৌদি সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি গ্রহণযোগ্য একটি শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানায়, যার মাধ্যমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য দুটি রাষ্ট্র গঠিত হবে।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-ও ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
চরম পরিণতি এড়াতে আমিরাত সংঘাতে লিপ্ত উভয়পক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে, 'এই অঞ্চলে আরও সংঘাত, উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা রুখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরব-ইসরায়েলি শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় চালু' করার তাগিদ দিয়েছে আমিরাত।
উপসাগরীয় দেশ ওমান উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের জীবনরক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
ওমানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বলেছে, 'ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারি, ধারাবাহিক ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলস্বরূপ সংগঠিত এই সংঘাতের দিকে উদ্বেগ সহকারে দৃষ্টি রাখছে ওমান। এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।'
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘাত থেকে 'মারাত্মক পরিণতি' তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছে মিশর। পশ্চিমা দেশগুলো যখন এই হামলার তীব্র নিন্দা করছে, তার মধ্যে এই বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েল-ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার।
তবে এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেসামরিক প্রাণহানি এড়াতে উভয় পক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়।
এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান 'পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে এমন আগ্রাসী কার্যকলাপ থেকে সংযত ও বিরত থাকতে' ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এরদোগান বলেন, 'আমরা সকল পক্ষের প্রতি যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি, এবং উত্তেজনাকে আরও উস্কে দেওয়ার মতো হঠকারী পদক্ষেপ না নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।'
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা অব্যাহত রেখে সংঘাতকে বর্তমান রূপ দেওয়ার জন্য একমাত্র ইসরায়েল-ই দায়ী।
কাতার উভয় পক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের পাশাপাশি – এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে ইসরায়েল যেন গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেকটি অসম যুদ্ধ শুরু করতে না পারে, সেবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়।
ইসরায়েলের ওপর আক্রমণের ঘটনায় রাশিয়াও 'সংযম' প্রদর্শনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
রাশিয়ার বেসরকারি বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ বলেন, 'ইসরায়েল, ফিলিস্তিনি ও আরব দেশগুলোসহ আমরা সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমরা অবশ্যই সংযমের আহ্বান জানাই।'
এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাসের এই হামলার 'সুস্পষ্ট নিন্দা' জানায় যুক্তরাষ্ট্র। আমরা দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের সরকার ও তাদের জনগণের সঙ্গে আছি।
মুখপাত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন- এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান তার ইসরায়েলি সমকক্ষ তেজাচি হানেগবির সাথে কথা বলেছেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে তারা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইইউ কমিশন প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, 'ইসরায়েলের ওপর হামাসের এই সন্ত্রাসী হামলাকে' তারা তীব্র নিন্দা জানান।
ইইউ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, 'ভয়াবহ এই সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতা কোন সমাধান হতে পারে না। সংকটময় এই সময়ে ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে ইইউ।'
ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টে বলেছেন, 'ইসরায়েল থেকে মারাত্মক সব দৃশ্য সামনে আসছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালাচ্ছে। এই সংঘাতের অবসান হতে হবে, নিজেকে রক্ষায় সবকিছু করার অধিকার আছে ইসরায়েলের।'
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ইসরায়েল ও তার জনসংখ্যার বিরুদ্ধে চলমান সন্ত্রাসী হামলার' নিন্দা জানাচ্ছে ফ্রান্স। প্যারিস ইসরায়েলের প্রতি তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেন, শনিবার ইসলামী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে যে অতর্কিত আক্রমণ করেছে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।