ইসরায়েল হামলায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ড্রোন কৌশল ব্যবহার করেছে হামাস
৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামলায় হামাস চমক দেখিয়েছে ছোট ও তুলনামূলক সস্তা ড্রোনের সফল ব্যবহারের মাধ্যমে। এ ড্রোনগুলো ইসরায়েলের লাখ লাখ ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক অনেক সমরাস্ত্রকে বিকল করেছে।
হামাসের প্রকাশ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজা সীমান্তে থাকা ইসরায়েলের নজরদারি টাওয়ারের ওপর বিস্ফোরক ফেলছে একটি ড্রোন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণ, তারপরই অকেজো হয়ে যায় টাওয়ারটি।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মাটির কয়েক মিটার ওপর থেকে একটি সামরিক ঘাঁটির অভ্যন্তরে একটি ড্রোন হ্যান্ড গ্রেনেড বা এ জাতীয় কোনো বিস্ফোরক ফেলছে। এছাড়া সীমান্তে থাকা বিভিন্ন সশস্ত্র পোস্টেও একইভাবে হামলা চালিয়েছে হামাস।
তবে হামাসের এ ড্রোন হামলাগুলোর সবচেয়ে সফল হামলাটি সম্ভবত কমপক্ষে একটি মারকাভা মার্ক ৪ ট্যাংক ধ্বংস করা। এটি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক, ও ভারী বর্মসজ্জিত ট্যাংক।
ভিডিওতে দেখা যায়, ট্যাংকটির 'ট্রফি' নামক অ্যাক্টিভ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি আক্রমণের সময় সক্রিয় হয়নি। অবশ্য এতে আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটির নকশা করা হয়েছে ট্যাংক-বিধ্বংসী মিসাইলের বিরুদ্ধে কাজ করতে, ড্রোন থেকে ফেলা বিস্ফোরকের বিরুদ্ধে নয়।
২০০০-এর দশকে জিপিএস নিয়ন্ত্রিত এ ধরনের ড্রোনে আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এ ড্রোনকে 'গরীবের বিমানবাহিনী'তে পরিণত করতে পারে বলে তখন অনেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
ড্রোন থেকে বিস্ফোরক নিক্ষেপ পদ্ধতি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেছে আইএসআইএস। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর দুই পক্ষই এ ধরনের ড্রোনের সদ্ব্যবহার করেছে। এসব ড্রোন এ যুদ্ধে আক্রমণ ও পর্যবেক্ষণ দুকাজেই ব্যবহৃত হয়েছে।
ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ নামক একটি গবেষণাসংস্থার জ্যেষ্ঠ গবেষক লিরান আনতেবি বলেন, 'আমরা আকাশ থেকে হামলার ধরনে গত এক দশকে নানা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।' তিনি বলেন, এ ধারার সূচনা হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে, সর্বশেষ দেখা গিয়েছে ইউক্রেনযুদ্ধে এবং এখন ব্যবহার হয়েছে গাজায়।
আইডিএফ নিজেও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দাতথ্য সংগ্রহ ও সুনির্দিষ্ট হামলার জন্য ছোট ড্রোন ব্যবহার করে। কিন্তু এ ধরনের প্রথাবিরোধী অস্ত্র হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মতো গোষ্ঠীগুলো বর্তমানে ব্যবহার করছে।
আনতেবি বলেন, 'এ ব্যবস্থাগুলো এতই সাধারণ যে একটি বাচ্চাও কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারবে। [ইউক্রেনে] আমরা যা দেখেছি, তার সবকিছু এখানেও দেখব। এ সিস্টেমটি তৈরি করা সহজ: আপনার স্রেফ একটা ড্রোন, একটা সফটওয়্যার যেটা সহজে ডাউনলোড করা যায়, বিস্ফোরক, আর কালো ইলেকট্রিক্যাল টেপের দরকার।'
আনতেবির মতে, আকাশ প্রতিরক্ষার ভিন্ন ভিন্ন স্তর রয়েছে, আর প্রতিটি হুমকিরও আলাদা সমাধান রয়েছে। 'এ ছোট ড্রোনগুলো নিয়ে সমস্যা হলো, এগুলো শনাক্ত করা কঠিন। কারণ এগুলো ধীরগতির, এগুলোর রাডার ক্রস-সেকশনের পরিসর ছোট। এ কারণেই বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন।'
তবে এসব নতুন ধরনের হুমকি মোকাবিলারও কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এসব পদ্ধতির তালিকায় আছে ড্রোনের জিপিএস রিসিভার জ্যাম করে দেওয়া, ড্রোন ও এর পরিচালকের মধ্যকার যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি ইত্যাদি।
প্রিসিশন ফায়ারিং, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, ও অন্য ড্রোন দিয়ে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন প্রতিহত করার পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে। 'কিন্তু এগুলো সবসময় আয়রন ডোমের মতো করে সর্বাঙ্গীণ কোনো সমাধান প্রদান করতে পারে না,' আনতেবি ব্যাখ্যা করেন।
এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে হয়তো খুব ভালোভাবে কোনো স্থাপনা বা ছোট এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব, কিন্তু এগুলো বড় এলাকা বা গতিশীল কোনো বাহিনীকে রক্ষা করতে পারে না। 'অর্থাৎ, ট্যাংকের ক্ষেত্রে কাউকে সারাক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে না থাকলে বা ট্যাংক থেকে ড্রোনকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করার ব্যবস্থা না থাকলে এ ধরনের ড্রোন থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই,' আনতেবি বলেন।
ড্রোন এবং ইউএভি ছাড়াও ইসরায়েলে হামাস প্যারামোটরিং গ্লাইডার ব্যবহার করেছে। এগুলোতে চড়ে হামাস যোদ্ধারা আকাশপথে মেশিনগানসহ প্রবেশ করে ইসরায়েলিদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে পেরেছে।