রাফাহ ক্রসিং কী, কেন এ সীমান্তপথ গাজার ‘লাইফলাইন’?
গাজার সাথে মিশরের সীমান্তে অবস্থিত রাফাহ ক্রসিং। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে মিশরের সিনাই উপদ্বীপে যাতায়াতের এটি প্রধানতম মাধ্যম। ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলার মুখে অনেক ফিলিস্তিনি গাজার দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত এ সীমান্ত পারাপারের কাছে জড়ো হয়েছেন। খবর বিবিসির
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম বলছে, বিদেশি পাসপোর্টধারী বা দ্বৈত নাগরিকদের সরিয়ে নিতে এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশের উদ্দেশ্যে কিছু সময়ের জন্য রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হতে পারে।
তবে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাফাহ ক্রসিং বন্ধ রয়েছে।
রাফাহ ক্রসিং কী, কোথায় এর অবস্থান?
গাজার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত রাফাহ ক্রসিং মিশরের সিনাই উপদ্বীপ সংলগ্ন একটি সীমান্ত পথ।
গাজা থেকে বের হবার আরও দুটি সীমান্তপথ – উত্তর গাজার ইরেজ এবং দক্ষিণের কারেম শ্যালোম ক্রসিং– ব্যবহৃত হতো শুধু পণ্য পরিবহনে। এগুলো পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং দুটোই এখন বন্ধ।
এই মুহূর্তে রাফাহ ক্রসিং এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গত ৭ অক্টোবরের অভিযানকালে হামাসের বন্দুকধারীরা ইরেজ ক্রসিংয়ে হামলা চালায়। এর একদিন পরেই ইরেজ ও কারেম শ্যালোম সীমান্তপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। এই অবস্থায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার গাজার বাসিন্দাদের মুক্তির একমাত্র পথ – রাফাহ ক্রসিং। ভয়াবহ এই সংকটকালে গাজায় মানবিক ত্রাণ সাহায্য পাঠানোরও এটি একমাত্র পথ।
দিনকয়েক আগেই রাফাহ সীমান্তের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করে ইসরায়েল। আবারও একই কাজ করতে পারে। মিশরের কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ইসরায়েলের থেকে রাফাহ সীমান্তে হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা পেলেই তারা এটি কিছু সময়ের জন্য উন্মুক্ত রাখবে।
তাছাড়া, মিশরের বর্তমান সরকার ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ, এবং গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সাথে তাদের চরম বৈরিতা আছে।
তবে মিশরের ওপর রাফাহ সীমান্তপথ উন্মুক্ত করার আন্তর্জাতিক চাপ আছে। গত সপ্তাহে মিশরের কর্তৃপক্ষ জানায়, উত্তর সিনাই মরুভূমিতে অবস্থিত এল-আরিশ বিমানবন্দরে গাজার জন্য ত্রাণবাহী বিমানগুলোকে অবতরণ করতে বলা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে লরি বোঝাই এসব মানবিক ত্রাণ রাফাহ সীমান্তের কাছে (মিশরের অংশে) জড়ো করা হয়েছে।
রাফাহ সীমান্তে এখন যা ঘটছে?
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাফাহ সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে পরস্পরবিরোধী নানা খবর ছড়ানো হয়েছে। এই সীমান্তপথ কে ব্যবহার করতে পারবে- সেটি নির্ধারণ করে হামাস ও মিশর। কিন্তু, গাজায় ইসরায়েলের মুহুর্মুহু বিমান হামলায় এ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তাছাড়া, ইসরায়েল চাইলে যেকোনো সময় আবারো রাফাহ ক্রসিংয়ে হামলা করতে পারে।
মিশরের গণমাধ্যম জানায়, গত ৯ ও ১০ অক্টোবর ইসরায়েল তিনবার হামলা চালানোর পর এই সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব হামলায় সীমান্তের মিশরীয় ও ফিলিস্তিনি উভয় অংশে অবস্থানকারী বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে।
সীমান্তটি যেন গাজাবাসীর জন্য 'লাইফলাইন' হিসেবে চালু থাকতে পারে, সেজন্য গত ১২ অক্টোবর মিশরের সরকার ইসরায়েলকে রাফাহ সীমান্তের কাছে বিমান হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে, একথাও জানিয়ে দেয়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সীমান্ত কর্মীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে, মিশর রাফাহ ক্রসিং খুলবে না।
এই অবস্থায়, গাজায় আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদের উদ্ধার ও নিরাপদে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় পশ্চিমা দেশগুলো যুক্ত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ও তার মার্কিন সমকক্ষ অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন উভয়েই বলেছেন, রাফাহ সীমান্ত পুনরায় খুলে দিতে তারা মিশর ও ইসরায়েল এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সাথে কাজ করছেন।